আওয়ার ইসলাম : আবার ফিলিস্তিনের শাসকদলের দ্বন্ধ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।ক্ষমতার দ্বন্ধের জেরে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ক্ষমতাসীন আব্বাস সরকারের অনুরোধে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সূত্রে আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
ইসরায়েল সরকারের আঞ্চলিক কর্মকাণ্ড তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের (সিওজিএটি) প্রধান ইয়োভ মোরদেশাই জানিয়েছেন, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের অনুরোধে ইসরায়েল গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আব্বাস সরকার এপ্রিলে ওই অনুরোধ করেছিল।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
তবে রামাল্লাহভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক খলিল শাহীন জানান, গাজায় ক্ষমতাসীন হামাস সরকারকে চাপে ফেলতেই ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
কওমি স্বীকৃতি জাতীয় সংসদে পাস করতে প্রধানমন্ত্রীকে আল্লামা শফীর চিঠি; যা আছে চিঠিতে
শাহীন বলেন, ‘ইসরায়েলকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের অনুরোধ ছাড়াও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ গাজার সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ৩০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান নেয়। তারা গাজাকে এমন এক অবস্থায় নিয়ে যেতে চায়, যেখানে জনগণ হামাসের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখাতে চায় যে, তারা হামাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
ইসরায়েলের জন সুরক্ষামন্ত্রী গিলাদ এরদান স্থানীয় রেডিওতে বলেন, গাজা উপত্যকায় হামাস সরকারকে কোণঠাসা করার জন্যই সেখানে ইসরায়েলি বিদ্যুৎ সরবরাহ সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এর আগে গত মাসে ফাতাহ নেতৃত্বাধীন পশ্চিম তীরের সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, তারা হামাসের আর্থিক ক্ষেত্রগুলো বন্ধ করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে হামাস। তবে এ বিজয় যেমন মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ মেনে নেয়নি। তেমনি ফাতাহও তা মেনে না নিয়ে পশ্চিম তীরে ক্ষমতা সংহত করে। অপরদিকে, গাজা থেকে যায় হামাসের নিয়ন্ত্রণে। বেশ কয়েকবার ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সফল হয়নি।
২০০৬ সাল থেকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রতিমাসে এক কোটি ২০ লাখ ডলার পরিশোধ করছে। যা ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলকে যে কর আদায় করে সেখান থেকে কেটে রাখা হয়।
প্রতিদিন গাজার ২০ লাখ মানুষের অন্তত ৪৫০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার হয়। কিন্তু এখন তারা পাচ্ছেন তার অর্ধেকেরও কম।
ইসরায়েল গাজায় প্রয়োজনের ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা বললেও কার্যত ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল। যা প্রয়োজনীয় চাহিদার ৩০ শতাংশ।
গাজায় মিশরের তিনটি সরবরাহ লাইনে ২৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা থাকলেও তা প্রায়ই বন্ধ থাকে। গাজায় নিজস্ব ৬০ মেগাওয়াটের যে বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, তাও জ্বালানির অভাবে যে কোনও সময় বন্ধ হয়ে পড়তে পারে। জ্বালানির ওপর দ্বিগুণ কর ধার্য করেছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ।
এ অবস্থায় গাজায় এখন দিনে মাত্র ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। ইসরায়েলি বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হলে তা নেমে আসবে ২ থেকে ৪ ঘণ্টায়। এ অবস্থায় গাজা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
-এআরকে