প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্গত এলাকার মানুষের পুনর্বাসনে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দুর্যোগ মোকাবিলার সরকারের সক্ষমতাও আছে।
আজ বুধবার সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের সাথী। দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতাও আমাদের রয়েছে এবং আমরা এই সক্ষমতার প্রমাণ রেখেছি।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘জনগণের সেবার জন্যই আমরা রাজনীতি করি। শুধু সরকারি দলে থাকলেই নয়, বিরোধী দলে থাকতেও আমরা দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। ঘূর্ণিঝড় দুর্গত এলাকার মানুষের সহযোগিতায় সরকারিভাবে এবং দলীয়ভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
‘প্রশাসনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কয়েকটি টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম আজই দুর্গত এলাকার উদ্দেশে রওয়ানা হবে। তাঁরা সেখানে গিয়ে দেখবে দুর্গত মানুষের কী ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন’, যোগ করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি।
প্রধানমন্ত্রী আজ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য মাহবুব-উল-আলম হানিফের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এরই মধ্যে নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ ত্রাণ নিয়ে দুর্গত এলাকায় পৌঁছেছে। বিমান বাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যাদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। নিশ্চয়ই তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। প্রত্যেকে যাতে ঘর বানাতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। সে সময় ঘুর্ণিঝড়ের আগাম কোনো ঘোষণা বা প্রস্তুতি না থাকার কারণ লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু, জমির ফসল সব পানিতে ভেসে গিয়েছিল। তখনও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে টিম নিয়ে দুর্গত এলাকায় গিয়েছিল। মানুষের দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। তখন সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করা হলে তৎকালীন সংসদ নেতা খালেদা জিয়া দাঁড়িয়ে বলেছিলেন- ‘যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরেনি’।
হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী পানি উন্নয়ন মন্ত্রণালয়কে প্রকল্প বাস্তবায়নে আরো গতিশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য মো. আবদুল্লাহর এক তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীর দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে আমি দুইবার দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছি। এ ছাড়া সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব ও জ্যেষ্ঠ সচিবসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা বন্যাকবলিত এলাকা নিয়মিত পরিদর্শন করছেন।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, পাহাড়ি ঢল ও আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরবাসীর দুর্দশা লাঘবে ২২ মে পর্যন্ত তিন হাজার ৯২৪ মেট্রিক টন জিআর চাল, দুই কোটি ২৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা জিআর ক্যাশ, তিন লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে মাসিক ৩০ কেজি হারে (২৩ এপ্রিল থেকে জুলাই, ২০১৭) তিন মাস আট দিনের জন্য মোট ৩২ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল, তিন লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে মাসিক ৫০০ টাকা হারে তিন মাসের জন্য (মে-জুলাই, ২০১৭) মোট ৪৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় ৯১ হাজার ৪৪৭ জন সুবিধাভোগীকে ৮২ কোটি সাত লাখ ৬৮৯ টাকা, পাঁচটি জেলার ৫০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মৎসজীবী ও ক্ষুদ্র কৃষক পরিবারকে মাসিক ৩০ কেজি হারে তিন মাসের জন্য মোট চার হাজার ৫০০ মেট্রিক টন এবং পরিবার প্রতি ৫০০ টাকা হারে তিন মাসের জন্য সাত কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এসএস/