আওয়ার ইসলাম : ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থানের জন্য বাবাকে দেওয়া অ্যাওয়ার্ড ফিরিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করলেন পাকিস্তানের সাংবাদিক হামিদ মীর।
দৈনিক জং পত্রিকার প্রকাশিত কলামে হামিদ মীর বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতি আজও আমার ভালোবাসা অব্যাহত রয়েছে। তবে এ অ্যাওয়ার্ডের বিনিময়ে গোলাম হতে চাই না এবং আমি এ অ্যাওয়ার্ডের প্রত্যাশীও নই। গোলামি থেকে মুক্তি পেতেই এ অ্যাওয়ার্ড ফিরিয়ে দিয়েছি’
‘ফিরিয়ে দেওয়া অ্যাওয়ার্ড’ শিরোনামে প্রকাশিত কলামে হামিদ মীর বলেন, ২০১৩ সালের ২২ মার্চ ঢাকায় এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২৩ মার্চ ইসলামাবাদে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের হাতে আমার ‘হিলাল-ই-ইমতিয়াজ’ নেওয়ারও কথা ছিল। আমি বাংলাদেশ সরকারের কাছে অপারগতা প্রকাশ করি এবং এ অ্যাওয়ার্ড আমার ভাই আমার বাবার পক্ষে গ্রহণ করবে বলে জানাই। বাংলাদেশ সরকারের দাবি ছিল আমিই যেন এ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করি। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো হবে এমন প্রত্যাশায় আমি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করতে চলে যাই। কিন্তু এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি।
বাবার স্মৃতির প্রতি বিশ্বাস ঘাতকতা করলেন হামিদ মীর
মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা ফিরিয়ে দেবেন হামিদ মীর!
২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামের গোলাম আযমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রায় দেয়া হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। আমি এ রায়ের বিরুদ্ধে কলম লিখলে বাংলাদেশ সরকার বার্তা পাঠায়, আমরা আপনাকে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছি। আপনি এসব বিষয়ে কিছু বলবেন না। বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দেওয়া হয়। আমি এ মামলার বিরুদ্ধে কথা বললে তো একজন বাংলাদেশি কূটনৈতিক আমাকে বলেন, আমরা আপনাকে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছি। আপনার চুপ থাকা উচিত।
হামিদ মীর বলেন, দুবাইয়ে বাংলাদেশর ক্রিকেট বোর্ডের সদস্যের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। আমি জিজ্ঞাস করলাম, আপনারা পাকিস্তান কেন আসেন না? তিনি বললেন, ভারত অসন্তুষ্ট হয়। আমি বললাম বাংলাদেশ কী ভারতের গোলামি করছে? বাংলাদেশি বন্ধু অসন্তুষ্ট হলেন। তিনিও বললেন, আমরা আপনাকে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছি। আপনি আমাদের তিরস্কার করছেন? আমি বললাম আপনারা এ অ্যাওয়ার্ড আমাকে দেননি। আমার বাবাকে দিয়েছেন। কিন্তু এ অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে আপনার আমার মুখ বন্ধ করতে চাচ্ছেন। আপনারা এ অ্যাওয়ার্ড ফিরিয়ে নিন।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানো যে ৬৯ জন বিদেশি বন্ধুকে ২০১৩ সালের মার্চ মাসে সম্মাননা দেওয়া হয়, তার মধ্যে ওয়ারিস মীরসহ ১৩ জন ছিলেন পাকিস্তানি। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যার ভয়াবহতা স্বচক্ষে দেখতে একদল ছাত্র নিয়ে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন প্রয়াত অধ্যাপক ও সাংবাদিক ওয়ারিস মীর। নির্মমতার চিত্র দেখে ক্ষুব্ধ এই সাংবাদিক তা নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন দৈনিক জং পত্রিকায়।
শত্রু দেশের এইসব বন্ধু এবং তাদের প্রতিনিধিদের হাতে ২০১৩ সালে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাকিস্তানের জিও নিউজের নির্বাহী সম্পাদক হামিদ মীর বাবার পক্ষে সেই সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন।
-এআরকে