ইতালি প্রতিনিধি: ইতালির অন্যতম প্রধান পর্যটন নগর ভেনিসের বিএনপিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতালি বিএনপির একজন নেত্রী স্থানীয় নেতাকর্মীদের ফোন করে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর কথা বলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো ওই নেত্রী প্রচার করছেন, বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমান তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন ভেনিসের বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি করার জন্য এবং রোম থেকে যে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তা সাধারণ সম্পাদকের একক সিদ্ধান্তে করা হয়েছে। এ বিষয়ে সভাপতি কিছুই জানেন না।
সম্প্রতি ইতালি বিএনপির সভাপতি হাজী আবদুর রাজ্জাক এবং সাধারণ সম্পাদক ঢালি নাসির উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে ভেনিস বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা আগামী এক মাসের মধ্যে রোমে পাঠানোর জন্য সাংগঠনিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ওই কমিটি ঘোষণার পর দুইজন সহসভাপতি এবং একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফেসবুকের মাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দেয়া ছাড়া তেমন কোনো সাংগঠনিক সংকট বা নতুন কমিটি নিয়ে কোনো বিতর্ক দেখা যায়নি।
তবে ভেনিসে বসবাসরত ইতালি বিএনপির একজন আন্তর্জাতিক সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি দলকে বিভক্ত করে নিজের ব্যক্তি স্বার্ধ হাসিল করার চেষ্টা করছেন। তিনি প্রচার করছেন, বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমান তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, রোম থেকে ঘোষিত ভেনিস বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করার জন্য। তিনি নেতা কর্মীদের ফোন করে বলেছেন, রোম থেকে ঘোষিত আংশিক কমিটি সাধারণ সম্পাদক ঢালি নাসির উদ্দিনের একক সিদ্ধান্তে হয়েছে। ঢালি নাসির কারো সাথে আলোচনা না করে অর্থের বিনিময়ে পদ বিক্রি করেছেন। এ বিষয়ে সভাপতি আবদুর রাজ্জাক কে কিছুই জানানো হয়নি।
এসব কথার সত্যতা এবং সাংগঠনিক ভিত্তি বিষয়ে জানার জন্য ইতালি বিএনপির সাথে যোগাযোগ করা হলে অন্তত তিন জন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, মাহিদুর রহমান উনাকে এমন কোনো দায়িত্ব দেননি। উনি মিথ্যা এবং বানোয়াট কথা বলেছেন। ইতালির যে কোনো শহরের শাখা কমিটি কেমন হবে, কি ভাবে হবে তা নির্ধারণ করার জন্য কোনো আন্তর্জাতিক সম্পাদক দায়িত্ব প্রাপ্ত নন। তারা জানান ভেনিসের যে আংশিক কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে তা কারো একক সিদ্ধান্তে করা হয়নি। বরং সাংগঠনিক সম্পাদকের তত্বাবধায়নে সকলের মতামতের ভিত্তিতে এবং ভেনিসের নেতাকর্মীদের বিগত দুই বছরের সাংগঠনিক কার্যক্রম পর্যালচনা করে যোগ্যতার ভিত্তিতে এই কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। এখানে কোনো স্বজনপ্রীতি বা অসাংগঠনিক কিছু করা হয়নি।
ইতালি কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ভেনিসের আংশিক কমিটি ঘোষণা করার আগে ভেনিস বিএনপির নেতা কর্মীদের গত দুই বছরের আমলনামা আমরা পর্যালচনা করে দেখেছি। ইউরোপের বিভিন্ন শহরে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী মিটিং মিছিলে কারা কারা উপস্থিত ছিলেন, ভেনিসের সাংগঠনিক কার্যক্রমে কারা কারা উপস্থিত ছিলেন, কারা কারা সংগঠনের জন্য সময় দিয়েছেন, কাজ করেছেন তা আমরা মূল্যায়ন করেছি এবং স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মী ও সুধিজনদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
উল্লেখ্য, যে তিনজন ফেসবুকের মাধ্যমে নতুন কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তাদের অন্তত দু'জনকে গত দুই বছরে ভেনিস বিএনপির কোনো কার্যক্রমে দেখা যায়নি বা ইউরোপ জুড়ে শেখ হাসিনা বিরোধী কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ওই তিন জনের পদত্যাগের পেছনেও অভিযুক্ত আন্তর্জাতিক সম্পাদকের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
এছাড়াও ইতালি বিএনপির ওই নেত্রীর সাথে স্থানীয় নেতা কর্মীদের কোনো সাংগঠনিক যোগাযোগ নেই, অতীতেও ছিল না। তিনি ইতালি কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে অসাংগঠনিক কার্যক্রম করেছেন এবং করছেন। তিনি ভেনিস বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে পাশ কাটিয়ে একাধিক বার দলীয় মিটিংসহ বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষনা করেছেন। যদিও নতুন কমিটি থেকে পদত্যাগি তিনজন ছাড়া কাউকে তিনি পাশে পাননি।
ভেনিস বিএনপির সভাপতি আবদুল আজিজের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, বড় দলে আভ্যন্তরিণ কিছুটা দলাদলি থাকে, থাকতে পরে। এক সাথে সবাইকে খুশি করা যায় না। এগুলো মেনে নিয়েই দল করতে হয়। দলের প্রতি ভালোবাসা থাকলে এসব কারষে কেউ দূরে সরে থাকে না বা দূরে সরে যায় না। বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে না।
তিনি বলেন, কারো কোনো দুঃখ ক্ষোভ অভিযোগ থাকলে দলের ভেতরে এসে বলা উচিত। দলের বাইরে বা সোস্যাল মিডিয়ায় নয়। আর নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য থাকতে হয়, দলের চেইন অব কমান্ড অমান্য করা বা সিনিয়র নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে দলে অনৈক্য সৃষ্টি করা কোনো আদর্শ নেতাকর্মীর পরিচয় নয়। কোনো দায়িত্বশীল নেতাকর্মীর কাছ থেকে এমন আচারণ প্রত্যাশিত নয়।
এদিকে রোববার (২১ মে ২০১৭) বিকেলে মেসত্রেস্থ এক মিলনায়তনে ভেনিস বিএনপি এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন ভেনিস বিএনপির সভাপতি আবদুল আজিজ সেলিম। উপস্থাপনা করেন সাধারণ সম্পাদক শসনের আকবর পলাশ।
আলোচনা সভায় নেতা কর্মীরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাসির তীব্র নিন্দা জানান। তারা বলেন, এই তল্লাসির মাধ্যমে অবৈধ সরকার তার বাকশালি মনোভাবের বহিপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
তারা ২০ দলীয় জোটের নেতা শফিউল আলম প্রধান এবং বিএনপির প্রায়াত মহাসচিব দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন।
আলোচনা সভায় টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে নেতা কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক মাহিদুর রহমান এবং ইতালি বিএনপির সভাপতি হাজী আবদুর রাজ্জাক। এ সময় মাহিদুর রহমান বলেন, তিনি কাউকে ভেনিস বিএনপি পূণগঠন করার জন্য নির্দেশ দেননি। তিনি কখনোই কোনো অসাংগঠনিক কার্যক্রম করেন না। ভেনিস বিএনপির ভালো মন্দ দেখভাল করার জন্য ইতালি বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক রয়েছেন। যে বা যারা মাহিদুর রহমানের নাম ভাঙ্গিয়ে দলের মধ্যে বিশৃংক্ষলা সৃষ্টি করছে, অনৈক্য সৃষ্টি করছে তারা মিথ্যা বলছে, অপপ্রচার কাছে। এ সময় উপস্থিত নেতা কর্মীরা শ্লোগান দিয়ে মাহিদুর রহমানকে অভিনন্দন জানান।
ইতালি বিএনপির সভাপতি হাজী আবদুর রাজ্জাকও প্রায় অভিন্ন কথা বলেন। তিনি নেতা কর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, কোনো প্রকারের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। দেশের জন্য, দলের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করুন।
আলোচনা সভায় আগামী ৩০ তারিখ ভিয়েনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনের প্রতিবাদ জানাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভিয়েনায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং আগামী ৩ জুন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যু বার্ষিকী পালন ও ইফতার মাহফিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বিএনপি ভেনিস শাখার কমিটি ঘোষণা
