আল্লামা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া; স্নামধন্য আলেম, লেখক ও শিক্ষাবিদ। গত ২০ মে তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড-এর সহকারী মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘ দিন। মুহাদ্দিস হিসেবে পাঠদান করছেন রাজধানীর নামকরা প্রতিষ্ঠান জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগে। ইসলামী অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে তার লেখা বই কওমি মাদরাসার সিলেবাসভুক্ত।
কওমি মাদরাসা, এর অন্দরমহল, গণমাধ্যমের কটূক্তিসহ নানা বিষয়ে ২০১৩ সালের মে মাসে সাপ্তাহিক লিখনীর পক্ষ থেকে মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়ার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর ও রোকন রাইয়ান। সাক্ষাৎকারটি আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মাদরাসার বিরুদ্ধে নানাধর্মী অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাদের কিছু সাধারণ অভিযোগ হচ্ছে- মাদরাসা শিক্ষা গরিবদের শিক্ষাব্যবস্থা। এখানে ইংরেজি, অঙ্ক, বিজ্ঞানসহ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয় না। কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন বিষয়টি?
আসলে এটা একটা চতুর অভিযোগ। যার দ্বারা জনমানুষকে খুব দ্রুত প্রভাবিত করা যায়। কিন্তু গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে আমরা দেখেবো, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি থেকে কিন্তু ডাক্তার তৈরি হয় না। তেমনিভাবে মেডিক্যাল কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ার বের হয় না। অনুরূপভাবে মাদরাসায় শরিয়ত সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া হয়। আমাদের দেখার বিষয় হলো, শরিয়ত শিক্ষা হচ্ছে কি না। এখান থেকে ডাক্তার হচ্ছে না ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে না অমুক হচ্ছে না তমুক হচ্ছে না; এই প্রশ্নগুলো আসলে অহেতুক। আমরাতো এটা সিদ্ধান্ত নেইনি যে আমাদের এখান থেকে ডাক্তার বানাবো ইঞ্জিনিয়ার বানাবো। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের এসব প্রতিষ্ঠান থেকে শরিয়ত বিশেষজ্ঞ তৈরি করবো। তারা দ্বীনের দাঈ হবে, মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকবে, বক্তা, মুফাসসির, মোহাদ্দিস তৈরি হবে। এই প্রজেক্টগুলোতে আমরা সফল কিনা সেটাই বিবেচ্য বিষয়।
এখানে একটা প্রশ্ন আসে, শিক্ষার মূল সংজ্ঞা হচ্ছে যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। মাদরাসার ছাত্ররা তাদের শিক্ষা দ্বারা কি যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারছে?
যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য অনেক কিছুর প্রয়োজন। কিন্তু সবগুলো এক প্রতিষ্ঠান থেকে হবে এটা কিন্তু ঠিক নয়। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান থেকে ভিন্ন ভিন্ন বিশেষজ্ঞ তৈরি হবে। এটাই যুগের চ্যালেঞ্জ।
শুধু ইসলামি শরিয়ত শিক্ষা দিয়ে কি যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব?
শরিয়ত শিক্ষাটা আমরা এই পর্যায়ে দিতে চাই, চিকিৎসাসংক্রান্ত কোনো শরয়ি প্রশ্ন সামনে আসলে যেনো সে সমাধান দিতে পারে। ঠিক তেমনিভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে কোনো শরয়ি প্রশ্ন আসে সেটাও যেনো সে ঠিকমতো সমাধান দিতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে যদি কোনো শরয়ি প্রশ্ন আসে সেটাও যেনো ভালোভাবে সে দিতে পারে এবং এই পর্যন্ত যদি একজন মাদরাসাছাত্র পৌঁছতে পারে, তাহলে আমি মনে করি আমি আমার শিক্ষায় সফল। আমি যদি মাদরাসা থেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করি তাহলে যে মেডিক্যাল কলেজগুলো আছে, প্রকৌশল ইউনিভার্সিটিগুলো আছে তারা কী করবে?
হ্যাঁ বলতে পারেন, আরেকটু ভালো করা যেতো। আমাদের ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টা আপনাদের জানা আছে, আমাদের সরকারি কোনো সহযোগিতা থাকে না। জনগণের অনুদানের ওপর চলে। অর্থনৈতিক সংকটের মাঝ দিয়ে আমাদের এগুতে হয় এবং স্থান সংকুলানও অনেক ক্ষেত্রে হয় না এই সব কারণে আমাদের যতোটুকু প্রোগ্রেস করা সম্ভব ছিল, হয়তো আমরা সে পর্যন্ত করতে পারছি না।
যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কওমি মাদরাসার বর্তমান সিলেবাস কি যথেষ্ট?
যুগের চ্যালেঞ্জ বলতে কি বুঝাচ্ছেন? আমি চিকিৎসাসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চাই না, আমি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চাই না, আমি অ্যাটম বোমা বানানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চাই না; আমি ধর্মীয় বিষয়ে মোকাবিলা করতে চাই। যদি বলেন ধর্মীয় বিষয় মোকাবিলার জন্য এই শিক্ষাব্যবস্থা যথেষ্ট কি না, আমি মনে করি আরও ভালো হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু এখন যা আছে তা যথেষ্ট। এই যে দেখেন এখানে আবাসিক মক্তব থেকে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পর্যন্ত আছে, হিফজ বিভাগ আছে, ইফতা আছে, সবগুলো মিলেই কিন্তু ইউনিভার্সিটি একটা ফ্যাকাল্টির সমান জায়গায়। এতোগুলো বিভাগ এতোটুকু জায়গায় হলে আমরা এর চেয়ে ভালো আর কী করতে পারি? শিক্ষার জন্য যে উন্মুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন তা আমরা পাচ্ছি না।
একবার হজের সফরে মদিনা ইউনিভার্সিটির এক প্রফেসরের সঙ্গে কথা হয়। তখন তাকে আমি বলি, ঢাকা শহরে প্রায় একশো পঞ্চাশটা জামিয়া আছে। কথা শুনে প্রফেসর অবাক হলেন এবং তিনি বললেন, কীভাবে এটা সম্ভব? এতোগুলো জামিয়া থাকলে আমরা জানবো না? তখন তাকে আমি বললাম, দেখুন, আমাদের তো কোনো সরকারি স্বীকৃতি নেই, তাই আমাদের মাদরাসাগুলো গড়ে উঠে মসজিদকেন্দ্রিক। তোমাদের ইউনিভার্সিটির লেখাপড়াগুলো আমরা সেখানেই করি।
সুশীল সমাজের অনেকে বলেন ধর্মীয় শিক্ষাটা আমাদের দরকার হয় না। সুতরাং এতো মাদরাসার দরকার নেই। তাদের এই অভিযোগ কতোটা বাস্তবসম্মত?
খুব সুন্দর একটা প্রশ্ন করেছেন। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে কতোজন ছাত্র আছে? প্রায় বত্রিশ হাজার। ঢাকার সবগুলো মাদরাসা মিলে হয়তো বত্রিশ হাজার ছাত্র হবে। মাদরাসা অনেক হলেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় উৎপাদন তাদের তুলনায় অনেক কম। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, মাদরাসা শিক্ষার দরকার ও চাহিদা না থাকলে প্রতিবছর আমাদের মাদরাসাগুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় এতোটা প্রতিযোগিতা হতো না। ভর্তির সময় অনেক ছাত্রকে শুধুমাত্র স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে ফিরিয়ে দিতে হয়, এটা হতো না। এ ঘটনাটি বাংলাদেশের অধিকাংশ মাদরাসার ভর্তির চিত্র।
বেফাক সম্পর্কে আসি। বেফাক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল এবং কবে প্রতিষ্ঠা হয়?
১৯৭৮ সালে লালবাগ মাদরাসায় সারা বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের একটি সম্মেলন হয়। সেখান থেকে একটি কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড করার সিদ্ধান্ত হয়। এটার উদ্দেশ্য ছিল দেওবন্দের অনুসরণে নির্দিষ্ট সিলেবাসে দেশের সমস্ত কওমি মাদরাসার সমাপনী পরীক্ষা পরিচালনা করা। সমস্ত মাদরাসাকে একটি বোর্ডের আওতায় এনে বোর্ডের পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষামান উন্নত করা।
সমস্ত কওমি মাদরাসা এখনও বেফাকের আওতাভুক্ত হয়নি। প্রতিষ্ঠার ৩৫ বছর হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত এই কাজটি বেফাক করতে পারেনি। কেনো?
বাংলাদেশে কওমি শিক্ষাধারায় ১৩টি আঞ্চলিক বোর্ড আছে। ওই বোর্ডগুলোর সঙ্গে আমরা সমন্বয় করার উদ্যোগ নিয়েছি এবং উদারনীতি সংবলিত নীতিমালা তৈরি করেছি। এ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে চারটি আঞ্চলিক বোর্ড একীভূত হয়েছে। তারা কেন্দ্রীয় পরীক্ষাটা বেফাকের নিয়ন্ত্রণে দেয়। এর বাইরে কিছু বড় বড় মুরব্বি আছেন তাদের পরিচালিত বোর্ডে মাদরাসার সংখ্যা কম হলেও উনারা অনেক বড় মুরুব্বি হওয়ার কারণে সহজে আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারেন না। তবু আমরা প্রস্তাব দিয়ে আসছি এবং চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
অনেকে বলে থাকেন যারা মাদরাসায় পড়ে আলেম হয় তাদের শিক্ষা যেহেতু সমাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল নয় সুতরাং তারা সমাজের মূল স্রোতে মিশতে পারে না।
এই কথাটা আমি মানি না। মানি না এই জন্য, এই সময়ে ধর্মীয় নেতৃত্ব দিচ্ছে মসজিদ এবং মাদরাসাগুলো। আর মসজিদ-মাদরাসা নিয়ন্ত্রণ করছে কওমি মাদরাসায় শিক্ষিতরা। ধরেন ঢাকা শহরের ৬০ হাজার মসজিদের প্রায় সবগুলোর নিয়ন্ত্রণ কওমি আলেমদের হাতে। এই ধারার শিক্ষার্থীরা জনগণের মসজিদকেন্দ্রিক যে ধর্মীয় চাহিদা সেগুলো মসজিদ থেকে পূরণ করছে। তাহলে তারা যে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এ ধরনের কথা কিভাবে বলেন। হ্যাঁ বলতে পারেন যে মন্ত্রী, ক্ষমতাসীন লোক বা সরকারের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এরকম একটা সঙ্কট আছে। এই ধারার শিক্ষার্থীরা সাধারণত রাজনীতির সঙ্গে অতোটা জড়ায় না। ফলে রাজনৈতিক মহলে তাদের ঘনিষ্ঠতা কম। জনগণের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা নেই এই ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। বরং এই যে সদ্য হেফাজতের সমাবেশটা হলো, এটাই প্রমাণ করলো জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পর্কটা কতো গভীর। যেটা সরকারও কন্ট্রোল করতে পারবে না। ধর্মীয় ইস্যু থেকে ৬ তারিখের লংমার্চ ও ৫ তারিখের অবরোধে এতো বেশি জনসম্পৃক্ততা বাংলাদেশের ইতিহাসে তো নেইই, পাকিস্তান আমলের ইতিহাসেও নেই।
মাদরাসার প্রতি এই যে জনসমর্থন এবং জনশক্তি, এটাতো ভালো একটা কাজে লাগানো যায়।
হ্যাঁ, যেতো। কিন্তু আমাদের যে রাজনীতি বা যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তারা যদি ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ না করে অন্তত ইসলামের জন্য ময়দান খালি রাখতো, ইসলামের কাজে বাধা না দিতো তাহলেও কিন্তু আমরা অনেক এগিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ বলেন, বিএনপি বলেন, আমার ধারণা এরা কেউ ইসলাম এগিয়ে যাক, এই প্রশ্নে রাজি নয়।
আলেম-উলামার প্রতি জনগণের এখনও যে পজিটিভ ধারণাটা রয়েছে এটা কি তারা সমাজে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে পারছে?
আলেম-উলামার কাজ হচ্ছে ধর্মীয় নেতৃত্ব দেয়া, তারা সেটা করছে। বিশেষ করে এই সময়ে হেফাজতের যে বিশাল দুটো সমাবেশ, এটা নাস্তিক্যবাদ রুখে দেয়ার জন্য বড় কাজ করেছে। শেষে জয় বা পরাজয় যা-ই হয় সেটা আমার দেখার বিষয় না। একটা বিপ্লব জয় পরাজয় দিয়ে বিচার হয় না। তবে ফলাফল যেটা এসেছে, বাংলাদেশে নাস্তিক্যবাদ যেভাবে উস্কে উঠতে শুরু করেছিলো, সেটাকে বুঝিয়ে দেয়া হলো নাস্তিক্যবাদ নিয়ে এদেশের মাটিতে বেশি বাড়াবাড়ি শোভনীয় নয়। এখানে যদি সরকারের বাধা না আসতো অথবা ওদের সরকার পৃষ্ঠপোষকতা না করে সরকার নিরপেক্ষ থাকতো তাহলে কিন্তু আমাদের ফলাফলটা আরও ভালো আসতো।
জনগণ মাদরাসার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার পরও মাদরাসার দ্বীনি প্রভাব এলাকার ওপর পড়ছে না। মাদরাসার কি উচিত না মাদরাসার প্রতিবেশীদের ব্যাপারে আরও সহানুভূতিশীল হওয়া, দ্বীনের ব্যাপারে তাদের আরও বেশি যুক্ত করা?
আপনি যেভাবে বলেছেন সেটা আসলে ঠিক নয়। যেমন ধরুন আমি যে মাদরাসায় আছি মালিবাগ মাদরাসা, এখানে বার্ষিক খরচ ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা। এটা কোত্থেকে আসে? এলাকার জনগণই তো দেয়। তাদের মধ্যে আমরা ধর্মীয় যে অনুভূতিটা সৃষ্টি করছি তার প্রতিফলই কিন্তু তারা আমাদের দিচ্ছে। তবে তাদের জন্য দ্বীনি কাজও করছি যেমন তাবলিগে যাচ্ছে ছাত্ররা, সপ্তাহে গাশত করছে, বিভিন্ন সময় মাহফিল বা খতমে বোখারির অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষ আসছে। হ্যাঁ, আমি সবার মাথায় টুপি লাগিয়ে দিতে পারছি না। তবে ৮০ পার্সেন্ট করছি আর ২০ পার্সেন্ট বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে করতে পারছি না। এটা যদি বলা হয় আপনারা সমাজের কোনো দায়বদ্ধতা আদায় করছেন না, তাহলে ভুল কথা।
বর্তমানে কিছু সংবাদমাধ্যমে মাদরাসাকে নেগেটিভভাবে তুলে ধরা হয়। এই প্রবণতার কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
এটা একটা আন্তর্জাতিক প্রবণতা। তারা পৃথিবী থেকে ইসলামকে নির্মূল করার চেষ্টা করে। এমনকি আইন থেকে, বিচার থেকে, সমাজব্যবস্থা থেকে, অর্থব্যবস্থা থেকে, সর্বক্ষেত্র থেকেই ইসলামকে তারা বিদায় করতে চায়। এর একটা কারণ হলো, তাদের একটা আতঙ্ক আছে। যদি ইসলাম কোনো এক জায়গায় কোনো এক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তাহলে এটা পৃথিবীর জন্য আতঙ্ক হয়ে যাবে। আতঙ্ক মানে পাশ্চাত্যবাদী চিন্তা ভাবনার জন্য আতঙ্ক হয়ে যাবে, ভোগবাদী পুঁজিবাদীদের জন্য। ইসলামি ব্যবস্থায় ওদের ব্যবসা চলবে না। তাই তারা এটাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিতে চায়।
গণমাধ্যম ও বিভিন্ন টকশোতে প্রচার করা হচ্ছে, কওমি মাদরাসায় গরিব-এতিম ছেলেরা পড়ে। এই ছেলেরা কীভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা চায় বা তারা কীভাবে এটা বাস্তবায়ন করবে?
এটা তো তারা সমালোচনা চালাচ্ছে। তারা যদি সমাজবিজ্ঞান বুঝতো তাহলে তারা মাদরাসার এই উদ্যোগের প্রশংসা করতো। আমরা ছিন্নমূল পর্যায় থেকে কিছু জনশক্তি এভাবে তৈরি করছি যারা সমাজের শীর্ষস্থানে চলে যাচ্ছে। আপনি চিন্তা করুন, একটা ছেলেকে গরিব ছিন্নমূল পর্যায় থেকে উঠিয়ে তকে এমন স্থানে তুলে দিচ্ছি যে, সে হাজার হাজার মানুষের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাহলে এই কাজটা কি ভালো করছি না মন্দ করছি?
আমি একজন এতিম, ছিন্নমূল, গরিবকে শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে সমাজের আধ্যাত্মিক রাহবার বানিয়ে দিলাম, যাকে দেখে মন্ত্রীকেও সালাম দিতে হয়। যে ছেলেটির ফুটপাতে থাকার কথা ছিল তাকে আমি সমাজের শীর্ষস্থানে সম্মানের স্থানে উঠিয়ে দিলাম। এই কাজটা কি আমি খারাপ করলাম না ভালো করলাম? আমার জনশক্তিটা তৈরির পেছনে একটা টার্গেট আছে। তারা ইসলামের সেবা করবে, মক্তবে পড়াবে নয় বড় মাদরাসায় গবেষণা করবে, পাঠদান করবে বা সে কিছুই করলো না ইসলামি জীবনযাপন করলো। তার জীবনযাপন দেখে আরও দশজন উৎসাহিত হবে। সুতরাং আমি যে জনশক্তি তৈরি করেছি তা বসে থাকলেও লাভ আছে। কিন্তু একজন ইঞ্জিনিয়ার বেকার বসে থাকলে তার লাভ নেই। সে সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
অনেকে বলে কওমি মাদরাসার ছাত্রদের ধর্মীয় বিষয়াদিতে ব্রেন ওয়াশ করা হয়।
অবশ্যই ব্রেন ওয়াশ করা হয়। আমি আমার জনশক্তির ব্রেন ওয়াশ করে যদি আমার কাজের অনুকূলে না আনি তাহলে তো আমি ব্যর্থ। এটা বরং আমাদের সফলতা। আর এ ধরনের ব্রেন ওয়াশ সবাই করে।
কিন্তু বলা হচ্ছে তাদের ব্রেন ওয়াশ করে উগ্র করে তোলা হয়।
আচ্ছা তাহলে একটা জরিপ করা হোক। কওমি মাদরাসার কতো ছাত্র উগ্রবাদ, চুরি- ডাকাতির কারণে জেলে আছে। পুলিশের ডায়েরি চেক করা হোক, তাহলে বের হয়ে আসবে কারা উগ্রবাদ শিক্ষা দেয়। এটা একটা পশ্চিমা বিশ্বের ছেড়ে দেয়া বাতাস। হ্যাঁ, কওমি ছাত্রদের একটা জায়গায় সন্ত্রাসী মনোভাব তৈরি হয়। কেউ যদি ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলে তখন সে তার নাকের ওপর ঘুষি মেরে দিতে চায়। এটা দোষের কিছু নয়। যেমন একজন ডাক্তারকে সেবাদানের জন্য তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সে যদি রোগী দেখে ভয়ে পালায় বা একজন ইঞ্জিনিয়ার যদি তার কাজ করতে ভয় পায় তাহলে কি সে ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার বলে গণ্য হবে? সুতরাং যাকে ইসলামের পাহারাদার বানানো হয়েছে সে যদি ইসলামের ওপর আক্রমণকারীকে ঘুষি না মারে তাহলে তো সে তার কাজে ব্যর্থ। এটাকে যদি অন্য কেউ সন্ত্রাসী বলে তাহলে আমার বলার কিছু নেই।
আমাদের সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আপনাদেরও ধন্যবাদ।
পড়ুন, আল্লামা আবুল ফাতাহ মুহা. ইয়াহইয়া রহ. এর জীবনী