পাকিস্তানের বিতর্কিত ধর্মীয় নেতা ও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়েবার মূল নেতা হাফিজ সাঈদকে জঙ্গি বলে মেনে নিল পাকিস্তান প্রশাসন। পাকিস্তানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘হাফিজ সাইদ জিহাদের নামে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে।’
২০০৮ সালে ভারতের মুম্বাইতে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে হাফিজ সাঈদকে বরাবরই অভিযুক্ত করে আসছে ভারত। আমেরিকাও মনে করে যে সে হামলার পেছনে হাফিজ সাঈদের হাত ছিল। আমেরিকার তরফ থেকে হাফিজ সাঈদকে ধরার জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার পুরষ্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে মুম্বাই হামলার সঙ্গে জড়িত কথা বারবার অস্বীকার করলেও কিছুদিন আগে সাইদ ফের হুমকি দেন, 'মুম্বাই হামলার মতো ঘটনা আরও ঘটানো হবে।’
ভয়াবহ ওই হামলার নয় বছর কেটে গেলেও হাফিজ সাঈদকে বিচারের আওতায় আনতে ভারতের অভিযোগ আমলে নেয়নি পাকিস্তান প্রশাসণ। তবে এবার মার্কিন চাপেই তাকে সস্ত্রাসী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে, গত জানুয়ারিতে চার সঙ্গীসহ হাফিজ সাঈদকে ছ’মাসের জন্য গৃহবন্দি করে নওয়াজ শরিফ সরকার। শনিবার জুডিশিয়াল রিভিউ বোর্ডের কাছে হাজির হয়ে হাফিজ সাঈদ নালিশ করেছিলেন, কাশ্মীরিদের পক্ষে তিনি যাতে কথা বলতে না পারেন, তাই পাক প্রশাসন তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। তবে পরবর্তীতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় আদালতের তিন সদস্যের বোর্ডকে জানায়, ‘জেহাদের নামে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছেন হাফিজ সাঈদ।’ এর আগে তার অন্তরীণের মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানোর জন্য লাহোর হাইকোর্টে আবেদন করেছিল অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয়। তখনই হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, হাফিজকে জুডিশিয়াল বোর্ডের কাছে হাজির হতে হবে।
জানা গেছে, জামাত-উত-দাওয়া নামের পাকিস্তানভিত্তিক একটি দাতব্য সংস্থা পরিচালনা করেন হাফিজ সাঈদ। আমেরিকা মনে করে এ দাতব্য সংস্থাটি লস্কর-ই-তৈয়েবার একটি অংশ। আমেরিকার তরফ থেকে সন্ত্রাসী সংগঠনের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে লস্কর-ই-তৈয়েবার নাম রয়েছে।
ভারতের অভিযোগ স্বত্বেও হাফিজ সাঈদ এতদিন ধরে পাকিস্তানে অবাধে চলাফেরা করছিলেন। হাফিজ সাঈদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে এ নিয়ে উত্তেজনা ছিল। ভারতের তরফ থেকে মুম্বাই হামলার সঙ্গে হাফিজ সাঈদকে অভিযুক্ত করলে পাকিস্তান এতদিন ধরে বলে আসছিলে যে সাঈদকে বিচারের আওতায় আনা কিংবা ভারতের হাতে তুলে দেবার মতো যথেষ্ট প্রমাণ তার বিরুদ্ধে নেই।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের একটি পাঁচ তারকা হোটেল, একটি ইহুদি কেন্দ্র এবং ট্রেন স্টেশনে হামলা চালিয়েছিল বন্দুকধারীরা। হাফিজ সাঈদকে ধরার জন্য আমেরিকা পুরষ্কার ঘোষণা করলেও তিনি পাকিস্তানে একজন 'গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি' হিসেবে অবাধে চলাফেরা করছিলেন এবং ক্রমাগত তীব্র 'ভারত-বিদ্বেষী' বক্তব্য রাখতেন। ২০১৪ সালে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হাফিজ সাঈদ বলেছিলেন, আফগানিস্তানে ভারতের সহায়তা লাভের জন্য আমেরিকা তাকে টার্গেট করেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া ও বিবিসি।