রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের নতুন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান জাতীয় নাগরিক কমিটির

‘বর্তমানে হেফজ শিক্ষকদের মধ্যে মোবাইল আসক্তি প্রচুর, যা ছাত্রদের ক্ষতি করছে’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা মুস্তাকিম বিল্লাহ হামিদী। জামিয়া ইসলামিয়া তালিমুস সুন্নাহ’র দক্ষিণ মুগদা ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল। বায়তুল ফালাহ শাহী জামে মসজিদের খতীব।আল্লামা শাহ আহমদ শফীর খলিফা। দীর্ঘ দিন ধরেই মাদরাসার দরসের সঙ্গে যুক্ত আছেন। ২০০২ সালে কওমি মাদরসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সমাপণের পর থেকেই  মসজিদ মাদরাসার সঙ্গে কাজে জরিত। সম্প্রতি মাদরাসা শিক্ষা, হিফজ বিভাগ ইত্যাদি প্রসঙ্গে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাকির মাহদিন। লিখেছেন  শাহনূর শাহীন

বাংলাদেশে কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যাবস্থা এবং জেনারেল শিক্ষাব্যাবস্থার মধ্যে যে দূরত্ব এর কারণ কী?

জেনারেল শিক্ষা বা ইংরেজি শিক্ষার সাথে কওমি মাদরাসা শিক্ষার শুরুর দিকে একটা সমন্বয় ছিল। কিন্ত এক সময় দেখা যায় ইংরেজি শিক্ষার প্রতি অধিক আগ্রহি হওয়ার কারণে মাদরাসা শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিল। তখন দীনি শিক্ষার পরিপূর্ণ বিকাশে দুই শিক্ষার মাঝে কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। যা এখনো বিদ্যমান।

এখন যে কওমি ছাত্ররা বিভিন্নভাবে কওমি শিক্ষার পাশাপাশি জেনারেল শিক্ষায় উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে, সরকার কর্তৃক কওমি মাদরাসা শিক্ষার স্বীকৃতির ঘোষণাও এসেছে আলেমরাও গ্রহণ করেছে এটা কি আগের অবস্থান থেকে সরে আসা নয়?

আসলে সময়ের প্রেক্ষাপটে আমরা জেনারেল শিক্ষাকে অস্বীকার করতে পারি না। কোনো এক সময় এমন হবে জেনারেল শিক্ষা না থাকায় কওমি পড়ুয়ারা রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে এটা আমাদের জন্য বড় ধরনের সমস্যা দেখা  দিতে পারে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মৌলিক অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত থাকতে হতে পারে। সে জন্য নিজেদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় সরকারি স্বীকৃতি বা জেনারেল শিক্ষাকে আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না। সুতরা এটাকে আমি আগের অবস্থান থেকে সরে আসা বলব না, বরং সময়ের চাহিদানুযায়ী প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি বলব।

হেফজ বিভাগ সম্পর্কে কিছু বলুন

হেফজ বিভাগ হলো আল্লাহ তাআলার গায়েবি খাজানার সাথে কওমি মাদরাসাগুলোর সম্পর্ক অটুট রাখার মাধ্যম। কেননা গভীর রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে পৃথিবী যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায় হেফজ বিভাগের ছাত্ররা তখন ঘুম থেকে উঠে অযু করে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে। তারপর সবাই মহান আল্লাহর কালাম পবিত্র কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করতে থাকে।

হেফজ বিভাগ পরিচালনার ক্ষেত্রে মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ না হলে কী সমস্য হতে পারে?

হেফজ বিভাগ পরিচালনার ক্ষেত্রে মুহতামিমের হাফেজ হওয়া না হওয়া অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কেননা প্রত্যেকটা বিষয়ই সুষ্ঠু পরিচালনার  জন্য অভিজ্ঞতার একটা প্রয়োজনীয়তা আছে। সেক্ষেত্রে হেফজ বিভাগ পরিচালনার ক্ষেত্রে মুহতামিম যদি হাফেজ না হন তার জন্য দুইটি উপায় রয়েছে।

প্রথমত, হেফজ বিভাগের উন্নতি ও পাঠদান-পরিচালনা  পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তির পরামর্শ নেয়া। দ্বিতীয়ত, হেফজ বিভাগ তদারকির জন্য এমন একজন যোগ্যতা সম্পন্ন হাফেজ নিয়োগ করতে হবে যিনি পুরো বিভাগ সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে এমন ব্যক্তি নির্বাচন করতে হবে যিনি শতভাগ আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে বর্তমানে হেফজ বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে অতিরিক্তি মোবাইল আসক্তির প্রবনতা লক্ষ্য করা যায় যেটা একটা বড় সমস্যা। দেখা যায় উস্তাদ মোবাইলের প্রতি মগ্ন থাকায় উস্তাদের চোখের সামনে থেকেও ছাত্ররা পড়ে না।

হেফজ বিভাগের শিক্ষকরা চব্বিশ ঘন্টা ছাত্রদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় এটা হয়তো তাদের মনযোগ নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ। কিতাব বিভাগের শিক্ষকরা ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে অবসরের সুযোগ পান কিন্তু হেফজ বিভাগের শিক্ষকরা সেটা পান না এটা কী বৈষম্য নয়? এর সমাধান কী?

আসলেই এটা একটা সমস্যা। মদরাসার পরিচালক বিশেষ করে মুহতামিমকে এই দূরত্বটা দূর করতে হবে। হেফজ বিভাগের শিক্ষকদের সমস্যার কথা শুনতে হবে। তাদের আপন করে নিতে হবে।

দূরত্ব দূর করতে হবে সেটা মানলাম কিন্তু তারা যে চব্বিশ ঘন্টা প্রেসারের মধ্যে থাকে এটা কীভাবে সমাধান করবেন? তাদের পরিশ্রমের চাপ কমানোর কোনো পদ্ধতি আছে কী?

আসলে এটা একটা ভাববার বিষয়।এক্ষেত্রে হেফজ বিভাগের শিক্ষকদেরও কিছু কৌশল অবলম্বন করা দরকার। বিভাগের সব ছাত্র সমান মেধাবী হয় না। কোনো ছাত্রের জন্য দশমিনিটি সময় দিলেই হয় আবার কোনো ছাত্রের পিছনে বিশ মিনিট সময় দিলেও হয় না। উস্তাদকে ছাত্রদের চিহ্নিত করতে হবে। এবং কৌশলি পাঠদান করতে হবে।

কওমি মাদরাসার ছাত্রদের মধ্যে বিশেষ করে হেফজ বিভাগের ছাত্রদের মধ্যে ঝরে পড়ার সংখ্যা বেশি এর কারণ কী?

শিক্ষক ছাত্রদের মধ্যে সম্পর্কের ঘাটতির কারণেই এটা হয়ে থাকে। অনেক ছাত্র আছে হেফজের জন্য উপযোগি না। তারা এক সময় বিরক্ত হয়ে ঝরে পড়ে। এজন্য এদের চিহ্নিত করে কিতাব বিভাগে পাঠানো হলে ঝরে পড়ার হার কমে আসবে। এছাড়া একজন  আদর্শ ছাত্রের জন্য দুইজন মুরুব্বি থাকা চাই। একজন তালিমি মুরুব্বি এবং একজন রুহানি মুরুব্বি। প্রত্যেক ছাত্রের তালিমি মুরুব্বি থাকলে ঝরে পড়ার হার কমে যাবে।

সাধারণদের অভিযোগ কওমি পড়ুয়া আলেম বা ছাত্ররা সমাজ থেকে পিছিয়ে। সমাজ পরিচালনা, রাষ্ট্র ব্যাবস্থা, রাজনীতি, অর্থণীতি সব দিক থেকেই পিছিয়ে আসলেই কি তাই? বা এর কারণ কী?

আসলে আপাতত দৃষ্টিতে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। মূলত সমাজেরই একটি ঈর্ষাকাতর শ্রেণি কওমি আলেমদের সমাজ থেকে পিছিয়ে রাখতে চায়। এক্ষেত্রে আমাদেরও দূর্বলতা রয়েছে। বাস্তবিকভাবে যদি সর্ব ক্ষেত্রে সমান প্রতিযোগিতার সুযোগ হয় তাহলে কওমি পড়ুয়ারাই এগিয়ে থাকবে।

আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
আপনাকেও ধন্যবাদ।

পুরো সাক্ষাৎকারটি ভিডিওতে দেখতে ক্লিক করুন


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ