রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ : হাইকোর্ট

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনা সংক্রান্ত ২০০৯ সালের আইনের ১৪টি ধারা ও উপধারাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এই আইনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। ভ্রাম্যমাণ (মোবাইল কোর্ট) আদালতে সাজাপ্রাপ্ত পৃথক তিন ব্যক্তির দায়ের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দেয়া হয়।
আদালত ওই তিন ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া সাজা বাতিল ও তাদের একজনের কাছ থেকে নেয়া ১০ লাখ জরিমানা রায়ের কপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
রায়ের পর রিট আবেদনকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম বলেন, এখন থেকে আর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা যাবে না। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হলে সরকারকে আইন সংশোধন করতে হবে অথবা নতুন করে আইন তৈরি করতে হবে।
জানা গেছে, ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এসথেটিক প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খানকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। সে বছরের ২০ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপর কামরুজ্জামান খান ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের (মোবাইল কোর্ট অ্যাক্ট-২০০৯) কয়েকটি ধারা ও উপধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ১১ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে রিট আবেদনকারীর (কামরুজ্জামান খান) সাজা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি সাজার আদেশ স্থগিত করা হয়।
এ ছাড়া ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর টয়েনবি সার্কুলার রোডে অবস্থিত এক বাড়ির মালিক মো. মজিবুর রহমানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আইনের বিধান সংশোধন ও অর্থ ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর রিট করেন মজিবুর রহমান। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই দিন হাইকোর্ট রুলসহ সাজার আদেশ স্থগিত করেন।
পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের কয়েকটি বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে ২ মে দিনাজপুরের বেকারি মালিকদের পক্ষে মো. সাইফুল্লাহসহ ১৭ জন আরেকটি রিট করেন। এতে বেকারিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে খাদ্য বিশেষজ্ঞ ও পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি সঙ্গে রেখে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়। শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৮ মে হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। এই তিনটি রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত আজ উক্ত রায় ঘোষণা করেন।
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী হাসান এম এস আজিম বলেন, রুলে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ধারা ৫, ৬(১), ৬(২), ৬(৪), ৭, ৮(১), ৯, ১০, ১১, ১৩, ১৫ কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিন রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া রুল একসঙ্গে শুনানি হয়।
আইনজীবী হাসান এম এস আজিম বলেন, রিটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও বিচার করার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ওই ধারাগুলো সংবিধান, মাসদার হোসেন মামলার রায় ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
ওই আইনের ৫ ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়ে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ৬(১), ৬(২), ৬(৪), ৭, ৮(১), ৯, ১০ ধারায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা পদ্ধতি, ১১ ধারায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দেয়া ক্ষমতা, ১৩ ধারায় আপিল ও ১৫ ধারায় তফসিল সংশোধনে সরকারকে দেয়া ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে।
এসএস/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ