বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল ‘ইসলামী ঐক্যজোট’-এর জোট ছাড়ার সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন সংগঠনের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করায় ইসলামী ঐক্যজোট প্রশংসিত ও নন্দিত হয়েছে। ইসলামী ঐক্যজোট দলের প্রয়োজনে, দেশের শীর্ষ উলামা-মাশায়েখ, দলের নেতা-কর্মীদের পরামর্শে, সময়ের তাগিদে স্বকীয়তা বজায় রেখে বর্তমান স্বতন্ত্র অবস্থান গ্রহণ করেছে। গতকাল রাজধানীর লালবাগ মাদ্রাসায় গণমাধ্যমের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
মুফতি ফয়জুল্লাহ ইসি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব। বেফাকের সহ-সভাপতি। সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সদ্য গঠিত ‘কওমি মাদ্রাসা সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটি’র সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন।
দলের সাংগঠনিক অবস্থা কেমন জানতে চাইলে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ইসলামী ঐক্যজোট এক আল্লাহর ওপর ভরসা করে। আল্লাহর পথে চলে। ভয়ভীতি ও দুঃখ মুসিবতের তোয়াক্কা না করে দুর্জয় সাহসে এগিয়ে চলে মানবতার মুক্তির পথে। তাই ইসলামী ঐক্যজোটের সাংগঠনিক ভিত্তি অত্যন্ত মজবুত। সারা দেশে আমাদের সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামা-মাশায়েখের নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় ইসলামী ঐক্যজোট এগিয়ে যাচ্ছে— আলহামদুলিল্লাহ। আওয়ামী জোটে যাবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, সম্ভাবনা নেই। ইসলামী ঐক্যজোট নিবন্ধিত শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। উম্মাহ, দেশ জাতির প্রয়োজনে যখন যেভাবে চলা দরকার ইসলামী ঐক্যজোট সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনী ভাবনা জানতে চাইলে বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দরকার। যেখানে গণমানুষের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে। ইসলামী দলগুলো নিয়ে জোট করার পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ইসলামী ঐক্যজোট মানুষের কল্যাণে, তাগুত এবং জুলম, শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। দুঃখী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করে। দেশের আলেম-উলামা মনে করেন ইসলামী ঐক্যজোট ইসলামের সত্যিকারের অনুসারী এবং সব ইসলামী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য ইসলামী ঐক্যজোটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা দরকার। তাই এমন একটি পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়াটা কীভাবে দেখেন? জবাবে বলেন, সে সময়ের প্রেক্ষিতে সে সিদ্ধান্তও সঠিক ছিল। সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা প্রসঙ্গে বলেন, এক কথায় বলা মুশকিল। তবে সবচেয়ে বড় সফলতা হলো কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঘোষণা। অন্যান্য ক্ষেত্রে সাহসিকতা, নির্ভীকতা, এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প ও দৃঢ় প্রত্যয়। সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ইসলাম ও রাষ্ট্রদ্রোহী নাস্তিক মুরতাদদের প্রতিরোধ করতে না পারা এবং এর ফলে দুর্নীতিসহ সব শয়তানী অপকর্ম বৃদ্ধি পাওয়া এবং দেশ ও মানবতার কল্যাণে নিবেদিত হেফাজতের ঐতিহাসিক ১৩ দফা বাস্তবায়ন করতে না পারা। হেফাজতের ব্যানারে নির্বাচনে যাবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঈমানী, আত্মশুদ্ধিমূলক, দেশ-জাতি এবং মানবতার কল্যাণকামী দেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন। হেফাজত প্রচলিত রাজনৈতিক দল নয়। তাই হেফাজতের ব্যানারে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
কওমি মাদ্রাসার সিলেবাস কি সংস্কার করা যায় না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, কওমি মাদ্রাসায় জ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎস পবিত্র কোরআন এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা প্রদান করা হয়। যখন যা পড়ানো দরকার তা-ই পড়ান। এসব মাদ্রাসা যারা পরিচালনা করেন তারা প্রয়োজন মোতাবেক সিলেবাস পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করে থাকেন। সমৃদ্ধকরণের এ ধারা অব্যাহত আছে ও থাকবে। যেভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় সিলেবাসগুলো সেখানকার শিক্ষকরা করে থাকেন, এখানেও কওমি মাদ্রাসা বোর্ড প্রয়োজনে একই ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদ নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে কেন প্রশ্নের জবাবে বলেন, কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঘোষণায় হিংসা ও বিদ্বেষের আগুনে জ্বলছে ইসলামবিনাশী ও কথিত প্রগতিশীল চক্র। কিন্তু তাদের এই চিৎকার-চেঁচামেচি ও ফুৎকারে নিভে যাবে না যুগ যুগ ধরে প্রজ্বলিত এই আলোর মশাল। সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।
[বিচারক ও আইনজীবীদের মানবিক হওয়ার আহবান প্রধানমন্ত্রীর]
[লাইভ অনুষ্ঠানে তিলাওয়াতের সময় ইন্দোনেশিয়ার ক্বারীর ইন্তেকাল]
এসএস/