হাওলাদার জহিরুল ইসলাম
দেওবন্দ থেকে
বর্তমানে পুরো দুনিয়ার অবস্থা এবং দেশের অবস্থা এমনভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, গতকাল যে বিষয়টি আমাদের ধারণায়ও ছিলো না তা আজ আমাদের সামনে উপস্থিত৷ আগামী কাল দেশের অবস্থা কী হবে আমাদের জানা নেই৷ বর্তমান পৃথীবিতে মুসলমানদের অবস্থার পরিবর্তনে কৌশলী হওয়া জরুরি৷ যেখানে যেমন প্রয়োজন সেখানে ঠিক তেমন পরিকল্পনাটি নিয়েই এগোতে হবে৷
আজ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে বিখ্যাত হাদিস গ্রহন্থ তিরমিযি শরফি (২য় খণ্ড) এর সমাপনী দরসে দেওবন্দের সিনিয়র মুহাদ্দিস ও বর্ষীয়ান জমিয়ত নেতা, হজরত হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. এর ছেলে মাওলানা সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি এসব কথা বলেন৷
দেওবন্দ থেকে সদ্য ফারেগ হতে যাওয়া তরুণ আলেমদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা কিছু দিন পর কর্মজীবনে অবতীর্ণ হবে৷ একজন আলেম হিসেবে তোমাদের দায়িত্ব অনেক৷ প্রবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হলে খুব বুঝে শুনে অগ্রসর হতে হবে৷ উম্মতের এ দুর্দিনে প্রজ্ঞা ও দূর্দিশীতার সাথে কাজ করতে হবে৷ আজকের পৃথীবিতে কতিপয় অশিক্ষিত মুসলমান, অসচেতন মাওলানা, শত্রুর জালে বিভ্রান্ত কিছু মানুষ ইসলামের আসল তাসবিরের ওপর কালিমা লেপন করে চলছে৷ ইসলামের আসল চেহারা বিগড়ে দিয়েছে৷ আজ দুনিয়া ইসলামের নাম শুনলে ভয় পায়৷ এটা ইসলামের আসল রূপ নয়৷ যদি আসল রূপ এমনই হতো তাহলে সুদীর্ঘ চৌদ্দ শত বছর ইসলাম বেঁচে থাকতে পারতো না৷ অঙ্কুরেই ইসলাম নামক বৃক্ষের মৃত্য হতো৷
ইসলামবিরোধি শক্তিগুলো নানা কৌশলে ইসলামের ভুল ব্যখ্যা দুনিয়াবাসীর সামনে উপস্থাপন করে যাচ্ছে৷ ইসলামি রাষ্ট্রগুলো তাদের তাবেদার গোষ্ঠীতে পরিণত হচ্ছে৷ সুতরাং নিজেদের যৌবনি জোশকে দমিয়ে রেখে কৌশলী হতে হবে৷ উগ্রপন্থাকে সর্বাবস্থায় ঘৃণার চোখে দেখতে হবে৷ উগ্রপন্থা উম্মতে সঠিক পথ দেখাতে বার বার ব্যর্থ হয়েছে৷ যে পথ ও পন্থায় কেবলই শান্তি ও নিরাপত্তা রয়েছে তাই গ্রহণ করতে হবে৷
তিনি বলেন, পুরো দুনিয়ায় ইসলাম প্রসারিত হয়েছে একমাত্র শান্তির পয়গাম নিয়ে৷ ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম উত্তর ভারতের কেরেলা প্রদেশে ইসলামের আগমণ ঘটে৷ অল্প কিছু(৩০/৪০জন) আরব বণিক নৌকা নিয়ে সেখানে অবতরণ করেছিলেন৷ তাদের চারিত্রিক সৌন্দর্য, মানবতা ও ভ্রাতৃত্তবোধে'র ফলে ভারতে ইসলামের প্রসার হয়েছে৷ আর এগুলোই হলো ইসলামের মূল৷ প্রতিটি ধর্মই ভ্রাতৃত্ত্ব ও মানবতার শিক্ষা দেয়৷ জুব্বা পাগড়ি পরে যদি কেউ ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ায় তাহলে সে অবশ্যই ভুলের ওপর রয়েছে৷ সে সঠিক পথে থেকে সরে গেছে৷ ঠিক তেমনি কেউ ঠাকুরের পোষাক পরে ঘৃণা উগ্রবাদ প্রচার করে সেটাও ভুল বলে সাব্যস্ত হবে৷ সে নিজের ধর্মের গলদ তাসবির প্রদর্শন করছে৷
মাওলানা আরশাদ মাদানি আরো বলেন, তোমাদেরকে নতুনভাবে সপথ নিতে হবে৷ তোমাদের দায়িত্ব হলো ইসলামের সঠিক রূপ যা আল্লাহ ও তার রাসুল সা.দেখিয়েছেন তাই প্রচার করতে হবে৷ আজ পুরো দুনিয়া আমাদের বিপরীতে ঐক্যবদ্ধ৷ আমাদের মুসলিম ভাইদের নানা ভাবে বিভ্রান্ত করে ইসলামের বদনাম করা হচ্ছে৷ এজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে৷ ঘৃণা নয় শান্তি ও ভালেবাসার বাণী ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বব্যাপী৷ ইসলামের গণ্ডির ভেতরে থেকে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে৷
দেওবন্দী কারা এ পরিচয় দিতে গিয়ে আরশাদ মাদানি বলেন, দারুল উলুম দেওবন্দ প্রসিদ্ধি পেয়েছে তার ‘অভিনব মাসলাকে’র কারণে৷ যারা দেওবন্দী মাসলাকের অনুসরণ করেন চাই তারা যদি দেওবন্দ ফারেগ নাও হোন কিংবা দেওবন্দকে কোনো দিন নাও দেখেন তবুও তারা দেওবন্দী৷ দেওবন্দী মাসলাক কারো মনগড়া/বানানো মাসলাক নয়৷ এর মধ্যে নেই কোনো এফরাত তাফরিত বা অতিরঞ্জন অতি সংকোচন৷ এটা এমন এক বিশেষ মাসলাক যা আল্লাহ, রাসুল তথা কুরআন সুন্নাহর পূর্ণ অনুসরণের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত৷ এটা সেই মাসলাক যা সাহাবাগণ রাসুল সা. থেকে গ্রহণ করেছেন, সাহাবাগণ থেকে তাবেয়ীগণ, তাবয়ীগণ থেকে তাবে তাবেয়ীগণ গ্রহণ করেছেন৷ এবং পরবর্তী উলামায়ে উম্মত তা কিতাবে সংরক্ষণ করেছেন৷ আর উলামায়ে দেওবন্দ সেই মাসলাকই আকড়ে ধরেছেন৷ যেহেতু দেওবন্দিয়ত ওই মাসলাকের নাম সেহেতু যে ব্যক্তিই উক্ত মাসলাকের অনুসরণ করবে, জীবনপথে ওই মাসলাককে সামনে রেখে পথ চলবে তাকেই দেওবন্দি বলা হবে৷ আকাবির আসলাফের মানহাজের ওপর যারাই প্রতিষ্ঠিত (ইলমান ও আ’মালান) তারাই দেওবন্দি৷ সুতরাং দেওবন্দি হওয়ার বড় মাপকাঠি এটাই যে, ব্যক্তি স্বীয় আকাবির আসলাফের মাসলাকের অনুসরণের মাধ্যমে একজন সাচ্চা বান্দা ও সাচ্চা উম্মত হিসেবে নিজেকে পরিচালিত করবে৷ এবং আজীবন এর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে৷
এর পর হজরত শিক্ষার্থীদেরকে হাদিস বর্ণনার এজাযত প্রদান করে নিজের সনদের সিলসিলা বর্ণা করে বলেন, আমি তিরমিযি শরিফ পড়েছি হজরত মাওলানা ইবরাহিম বলিয়াভি রহ. এর কাছে৷ তিনি হজরত শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান দেওবন্দি থেকে৷ তিনি হুজ্জাতুল ইসলাম মাওলানা কাসেম নানুতাবি রহ.থেক৷ এভাবে ওপরে চলেগেছে৷ দীর্ঘ দোয়ার মাধ্যমে শেষ হয় তিরমিযি শরিফের সমাপনী দরস৷
দেওবন্দে জমিয়তের সর্বধর্মীয় ঐক্য সম্মেলন
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আশ্বস্ত, সুফল পেতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ