রোকন রাইয়ান: বহু প্রতিক্ষিত কওমি মাদরাসা সনদের সরকারি স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আজ। এ উপলক্ষ্যে সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দীন, হাটহাজারী মাদরাসার মহা পরিচালক, বেফাকের সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে আজ গণভবনে যাচ্ছেন ৩০০ জন আলেম। সন্ধ্যার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বসবে বৈঠক।
এর আগে সকালে বেফাকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে মজলিসে আমেলা ও শূরার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বেঠকে স্বীকৃতির রূপরেখা বিষয়ে আলোচনা করেন আলেমগণ।
জানা গেছে, সন্ধ্যায় বৈঠকে অংশ নিতে ইতোমধ্যেই ঢাকার বাইরের আলেমগণ ঢাকার দিকে রওনা দিয়েছেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারী, পটিয়া ও দারুল মাআরিফ, গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা এবং সিলেটের একাধিক মাদরাসা থেকে আলেমগণ রওনা দিয়েছেন। এছাড়াও ময়মনসিংহ, গাজিপুর, নারায়ণগঞ্জসহ যশোর ও খুলনা থেকেও বেশ কয়েকজন আলেম শরিক থাকবেন বৈঠকে।
গণভবনের বৈঠকে বেফাকের পক্ষ থেকে ১৫০ জন এবং অন্যান্য ৫ বোর্ড থেকে ১৫০ জন আলেম অংশ নেবেন। সবার উপস্থিতিতে কওমি স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কওমি স্বীকৃতি নিয়ে অনেক চড়াই উৎরাই গেলেও শেষ মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন সবাই। প্রধানমন্ত্রী গত বছর এক অনুষ্ঠানে আলেমদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন আপনারা এক হয়ে আসুন, স্বীকৃতি হবে। সেখান থেকেই তৃণমূলের চাহিদার প্রেক্ষিতে সবমতের আলেমদের মধ্যে সম্মিলন ঘটে।
গত ১০ ডিসেম্বর হাটহাজারীতে আলেমদের সম্মিলিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ উপস্থিত হন। এর কিছুদিন আগে গহরডাঙ্গার মুহতামিম মুফতি রুহুল আমিন একান্তে সাক্ষাৎ করেন আল্লামা আহমদ শফীর সঙ্গে। সর্ব শেষ যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহাতামিম দাওয়াতুল হকের আমির আল্লামা মাহমুদুল হাসানও এই স্রোতে মিলিত হন। বেফাকে অন্তর্ভূক্ত হয় তার পরিচালতি জামিয়া মাদানিয়া ইসলামিয়া।
স্বীকৃতির ঘোষণা অনুষ্ঠানে যারা থাকছেন
গত ২৮ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের ৬টি কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে কওমি সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে সবাই ঐকমত্যে পৌছেন।
কওমি স্বীকৃতির পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা এখনো জানা যায়নি। তবে বেশ কয়েকটি শর্ত সামনে রেখেই এই স্বীকৃতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক সূত্র।
সারাদেশের কওমি অঙ্গনের বেকাফ সহ ৬টি বোর্ডের সমন্বয়ে গঠিত ‘কওমী সনদ বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ’ এর চেয়ারম্যান দেশের কওমি আলেম ওলামার অভিবাবক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফির নেতৃত্বে এবং হযরতের দেয়া শর্ত সমূহ শতভাগ মেনে সরকার সনদের মান দিতে সম্মত হয়েছে বলে জানা গেছে।
• শর্তগুলো হচ্ছে
১. কওমি মাদরাসার নেসাবে তালিম সমুন্নত রাখতে হবে।
২. কওমি মাদরাসার মূলভিত্তি দেওবন্দের উসুলে হাস্তাগানার (আট মূলনীতি) আলোকে মান দিতে হবে, স্বীকৃতি নয়।
৩. সরকারি কোন ধরণের হস্তক্ষেপ চলবে না।
৪. কওমি মাদরাসার পরিক্ষা সমূহ ও নিয়ম নীতিমালা কওমি আলেমগণ ঠিক করবেন। সরকারের কোন কর্তাব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে পরিক্ষা নিয়ন্ত্রণ চলবে না।
৫. কওমি সনদ সমন্বয় পরিষদ বা কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা কো-চেয়ারম্যানের পদে সবসময় কওমি আলেম মনোনীত ব্যক্তিই থাকবেন। সরকারি কর্মচারী বা কর্মকর্তা চেয়ারম্যান বা কো-চেয়ারম্যান পদে থাকতে পারবে না।
৬. সরকারের কোন রকম সাহায্য সহযোগিতা কওমী মাদ্রাসা গ্রহণ করবে না। সাহায্যের নামে কওমী মাদ্রাসার উপর হস্তক্ষেপ ও নজরধারী করা যাবে না।
৭. কওমি মাদরাসা নেসাবে তালিম ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সার্বিক স্বাধীনতা কওমি আলেমদের হাতে থাকবে, শুধুমাত্র দাওরা হাদিসের সনদকে সমন্বয় কমিটির সত্যায়নে সরকার সনদের মান দিবে।
এআর
শাইখুল হাদীস রহ. এর হাতে কওমি সনদের স্বীকৃতির পতাকা