আতাউর রহমান খসরু : উমাইয়া শাসন আমলে স্পেনে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করেছিলেন হজরত তারেক বিন জায়েদ রহ.। এরপর দীর্ঘ আটশো স্পেনে মুসলিম শাসন অব্যাহত ছিলো। অন্ধকারাচ্ছন্ন ইউরোপে জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্পেনের মুসলিমগণ জ্ঞানী ও বিজ্ঞানীগণ। স্পেন ইউরোপের সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে তারাই। কিন্তু খ্রিস্টান ইউরোপের ষড়যন্ত্র ও সহযোগিতায় স্পেন থেকে ইসলাম ও মুসলিমকে বিতাড়িত করা হয় অত্যন্ত করুণভাবে। ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দে রাজা ফারডিন্যান্ড ও রাণী ইসাবেলার কাছে পতন হয় স্পেনের শেষ মুসলিম শাসক আবদুল্লাহর।
স্পেনে মুসলিম পতনের পর পাঁচশো বছর অতিবাহিত হয়েছে। এখনো স্পেনে মুসলিম পুনর্জাগরণের স্বপ্ন দেখেন স্প্যানিশ মুসলিমগণ। সম্প্রতি এমনি এক উদ্যোগে নড়েচড়ে বসেছে ইউরোপ। স্পেনের একদল তরুণ মুসলিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্পেনে মুসলিম পুনর্জাগরণের আহবান জানিয়েছে।
তারা ফেসবুকে ‘The return to Al-Andalus’ নামে একটি পেইজ খুলেছে। যেখানে মুসলিম তরুণদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তারা আহবান করেছে, ‘আল আন্দুলুস’কে আমরা সোনালি যুগে ফিরিয়ে নিতে চাই। আমরা ভিনদেশী নয়; স্পেন আমাদের দেশ। আমাদের মাতৃভূমি। এ দেশ আমাদের ছিলো এবং ভবিষ্যতে আমাদেরই হবে। মুসলিম শাসন অবসানের পর বহিষ্কৃত মুসলিমদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার আহবান জানিয়ে বলা হয়, মুরদের উত্তরাধিকারীদের নাগরিকত্ব দিয়ে স্পেন তার সাংস্কৃতিক ঋণ পরিশোধ করুক। পাঁচশো বছর পরও আমরা মাতৃভূমিকে ভুলি নি এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আশা এখনো জেগে আছে আমাদের হৃদয়ে। তারা স্প্যানিশ মুসলিমদের সেখানে স্থায়ী হতে এবং সেখানেই জীবন জীবিকা অনুসন্ধানের আহবান জানিয়েছে।
ফেসবুক পেইজটির ফলোয়ার ও লাইক ইতিমধ্যে ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। পেইজের পরিচালকগণ নিজেদের মরক্বোয় বসবাসকারী স্প্যানিশ দাবি করেছে। খ্রিস্টীয় সতের শতকে যাদেরকে রাজা ফিলিপ ৩য় স্পেন থেকে বের করে দেয়। তারা এখন স্পেনে ফিরতে চায়।
পেইজে আরবি ও স্প্যানিশ ভাষায় পোস্ট দেয়া হয়। সেখানে তারা আরবি ও ইসলামি শিক্ষার প্রতি জোর দিয়ে বলেছে, আমাদেরকে সর্বপ্রথম সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। ইনশা আল্লাহ অতি শীঘ্রই আমরা একাধিক ইসলামিক সেন্টার খুলবো। যেখানে আমরা কুরআন, হাদিস, আরবি ভাষা এবং স্পেনের ইতিহাস শিক্ষা দেবো। স্পেনে আমাদের সোনালি ইতিহাসের চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আত্মপরিচয় ফিরে পেতে এবং স্প্যানিশ সমাজে প্রতিষ্ঠিত ইতিহাস চর্চার বিকল্প নেই।
তারা আরও বলেছে, মুসলিম স্পেন প্রতিষ্ঠায় মানুষের মাঝে কুরআনের প্রচার ও প্রসারের কোনো বিকল্প নেই। পাবলিক স্কুলগুলোর লাইব্রেরিতে কুরআন দানের অনুরোধও করা হয়েছে স্প্যানিশ মুসলিমদের প্রতি।
পেইজে আরও বলা হয়, মুরগণ স্পেনের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদেরকে অন্যায়ভাবে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তারা স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অধিকার রাখে।
অন্যদিকে এক রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, বর্তমানে স্পেনের সাড়ে চার কোটি জনসংখ্যার ৪.৫ ভাগ মুসলিম। ২০২৭ সালে স্পেনে মুসলিম জনসংখ্যা ৭ লাখে দাঁড়াবে। যা হবে জনসংখ্যার প্রায় ১৪ ভাগ।
সূত্র : স্পেরো নিউজ
-এআরকে