আশঙ্কজনকভাবে রাজধানীসহ সারাদেশের ভূ-পৃষ্ঠের পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে করে নানারকম রোগবালাই ও শারীরীক সমস্যাসহ রাজধানী ঢাকা দেবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূ-তলের পানি উত্তোলন বৃদ্ধি এবং ঢাকা ও এর আশপাশের নদীর পানি দূষিত হওয়ায় এর ব্যবহার বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে সুপেয় পানি সরবরাহ করতে ঢাকা ওয়াসাকে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।
এতে করে দিন দিন ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়ার শঙ্কার মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। পানির স্তর ক্রমশই নিচে নেমে যাওয়ায় যেকোনো সময় রাজধানী ঢাকা দেবে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রচুর পরিমাণে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে প্রতিবছর ৩ থেকে ৫ মিটার করে পানির স্তর নিচে নামছে। প্রতিনিয়ত এ চিত্র আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। দিন দিন পানির স্তর নিচে নামার কারণে রাজধানী ঢাকার মাটির স্তরও ঝুঁকিতে রয়েছে। ভূ-তল থেকে পানি কমে যাওয়ায় সেখানে পানিশূন্যতা দেখা দিচ্ছে। ফলে সামান্য ভূমিকম্প কিংবা ভূমিকম্প ছাড়াই ভূ-গর্ভস্থ মাটি ফল্ড করতে পারে। এমন আশঙ্কা পানি ও মাটি বিশেষজ্ঞদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে ঢাকার আশপাশের দূষিত নদীগুলোর পানি ক্রমেই ভূ-পৃষ্ঠের সেই শূন্যস্থান দখল করে নিচ্ছে। ফলে ভূ-গর্ভস্থ বিশুদ্ধ পানিও দিন দিন দূষিত হয়ে পড়ছে। এতে বিভিন্ন ধরনের রোগ বৃদ্ধি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পানির অন্যতম উৎস নদী। কিন্তু নদীমাতৃক বাংলাদেশের পানির অবস্থা অনেকটাই শোচনীয়। ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানি মাত্রাতিরিক্ত দূষিত। ফলে ভূ-উপরিভাগের পানির ব্যবহার সেভাবে বাড়ছে না। পানির উৎসগুলোকেও বিশুদ্ধ রাখা যাচ্ছে না। নদীর পানিকে বিশুদ্ধ করে পান করতে না পারায় ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। প্রতিদিন ক্রমবর্ধমান চাহিদার চাপে ঢাকা ওয়াসা ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের পরিমাণ বাড়িয়ে তা রাজধানীজুড়ে সরবরাহ করছে। ফলে দিন দিন পানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে পরিবেশের ক্ষতি।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (নাসা) বলছে, ভূ-গর্ভে যে পরিমাণ পানি মজুদ আছে তার এক-তৃতীয়াংশই মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে দ্রুত কমে যাচ্ছে। বিশ্বের ৩৭টি বৃহৎ পানির স্তরের মধ্যে ২১টির পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে। এই স্তরগুলো ভারত ও চীন থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স পর্যন্ত সীমানার মধ্যে বিস্তৃত। ১৩টি পানির স্তরকে আখ্যায়িত করা হয়েছে চরম সংকটাপন্ন হিসেবে। অর্থাৎ এই স্তরগুলো প্রায় শুকিয়ে গেছে। এগুলো ব্যবহার উপযোগী করার জন্য পুনরায় প্রাকৃতিক উপায়ে পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। বাংলাদেশও এই আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে।
আরআর