মাত্র ৮ দিনের মধ্যেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি) থেকে পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রুমানা আহমেদ। বৃহস্পতিবার আমেরিকার প্রখ্যাত ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিকে লেখা এক নিবন্ধে তিনি এর কারণ বর্ণনা করেছেন।
হিজাব পরিহিতা মুসলিম রুমানা বলেন, ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তার পদত্যাগের পেছনে অন্যতম কারণ।
মার্কিন রাজনীতি বিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য হিলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালে হোয়াইট হাউজে নিয়োগ পান রুমানা। তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। তাকে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সোজা হোয়াইট হাউজে নিয়োগ দেওয়া হয়। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরও তিনি হোয়াইট হাউজে রয়ে যেতে চেয়েছিলেন। এক্ষেত্রে তিনি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, নতুন প্রেসিডেন্ট ও তার সহযোগীদেরকে ইসলাম ও আমেরিকার মুসলিম নাগরিকদের সম্পর্কে আরও সুক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পরিচিত করাতেই তিনি নতুন প্রশাসনে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র ৮ দিনের মাথায় তিনি রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হন। রুমানা আহমেদ লিখেছেন, ‘বেশিরভাগ আমেরিকান মুসলিমের মতো আমিও ২০১৬ সাল জুড়ে দেখেছি কীভাবে ডনাল্ড ট্রাম্প আমাদের সম্প্রদায়কে হীন করেছেন। এটি সত্ত্বেও, অথবা হয়তো এর কারণেই, আমি ভেবেছি আমার উচিৎ এনএসসাইট থেকে যাওয়া।’
কিন্তু ২৭ই জানুয়ারি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর নাগরিকদের নিষিদ্ধ করে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ প্রনয়ণের পর আর হোয়াইট হাউজে থাকা সম্ভব বলে তার মনে হয়নি। রুমানা বলেন, ‘আমি জেনে গেলাম আমি আর এই প্রশাসনে থাকতে পারবো না বা কাজ করতে পারবো না, যে প্রশাসন আমাকে ও আমার মতো মানুষকে নাগরিক হিসেবে দেখে না, দেখে হুমকি হিসেবে।’ তিনি আরও বলেন, মুসলিমদের প্রতি এই প্রশাসন যে ধরণের আচরণ করছে তা ইরাক ও সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস’র জন্য উপকারী হবে। কারণ, এর ফলে এ জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রোপাগান্ডা আরও বিশ্বাসযোগ্য হবে।
রুমানা আহমেদ বলেন, ‘এই প্রশাসন যেভাবে সহিংস চরমপন্থা মোকাবিলা প্রোগ্রামে শুধুমাত্র মুসলিমদের ওপর নজর দিচ্ছে ও ‘উগ্র ইসলামী সন্ত্রাসবাদে’র মতো শব্দ ব্যবহার করছে, তা আইএস’র প্রোপাগান্ডাকেই শক্ত করবে। দেশজুড়ে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদের উত্থাণ ঘটাবে।’ তিনি আরও বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন এমন কর্মকর্তারা নতুন প্রশাসনে ভালো অবস্থানে নেই। তার ভাষ্য, ‘নির্দলীয় জাতীয় নিরাপত্তা কাঠামো এবং হোয়াইট হাউজ ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোতে আইনি বিশেষজ্ঞদের মতামত অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের কর্তৃত্ব এখন ওয়েস্ট উইং-এর গুটিকয়েক লোকের হাতে কুক্ষিগত হয়েছে।’
১৯৭৮ সালে রুমানা আহমেদের পিতামাতা বাংলাদেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমান। নিজের নিবন্ধে এ সবকিছু বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। উল্লেখ করেন, ৯/১১ পরবর্তী আমেরিকায় কী ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে মুসলিম হিসেবে তাকে পড়তে হয়েছে। তখন মানুষ প্রকাশ্যে তাকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে ডাকতো। তিনি এ-ও জানান, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উৎসাহে তিনি জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়েই হোয়াইট হাউজে কাজ শুরু করেন। পরে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদেও কাজ করেন।
আরআর