শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

শিশুর মনকে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ফেলে এমন কিছু পাঠ্যবইয়ে থাকা উচিত নয়: মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

monjurul islamজাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্ক বোর্ডের ১ম শ্রেণির পরিমার্জিত বাংলা বইয়ে স্বরবর্ণ পরিচিতিতে ‘ও’ বর্ণে আছে– ‘ওড়না চাই’। এ নিয়ে বিভিন্নমহলে আপত্তি ও সমালোচনার ঝড় বইছে। এ আপত্তি ও সমালোচনা কতটুকু যৌক্তিক? সত্যিই কি এটি আপত্তির? এ বিষয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি শাইখুল হাদিস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর সঙ্গে কথা বলেছেন দিদার শফিক

স্কুলের প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘ও তে’ ‘ওড়না চাই’ বিষয়টি আপত্তিকর কিনা জানতে চাইলে মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, শিক্ষার প্রাথমিক স্তরটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং একিসাথে বেশ স্পর্শকাতরও। এ স্তরে সঠিক শিক্ষা পেলে সুস্থ চেতনা নিয়ে শিশুর বেড়ে ওঠা সুনিশ্চিত হয়।

আর বিতর্কিত, ধোয়াশা কিংবা প্রচ্ছন্নভাবে শিশুর মনন ও চেতনা গড়ে ওঠলে তা শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই পাঠ্য বইয়ে বিশেষভাবে শিশুশ্রেণিতে  এমন কোন ‘শব্দ বা বাক্যও’ থাকা উচিত নয়। যা আপত্তি ও তর্কের সৃষ্টি করে। শিশুর মনকে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ফেলে দেয়।

‘ওড়না চাই’ ইসলামি সভ্যতার বিচারে ইতিবাচক হলেও বর্তমান সমাজ ও পাঠদানের পরিবেশগত কারণে বিষয়টি আপত্তিকরই বটে। এ ব্যাপারে আমিও আপত্তি পোষণ করি। আলেমদের আপত্তির কারণে পাঠ্য বই থেকে ধর্মবিরোধী ও একচেটিয়া হিন্দুয়ানী প্রথার গদ্য-পদ্য বিলোপ করায় আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই। তবে নতুন সংযোজনে কিছু শব্দ ও বাক্য প্রয়োগে কর্তৃপক্ষের আরও সাবধানতার পরিচয় দেওয়া উচিত ছিল। ওড়না চাই না হয়ে এখানে অন্য কিছু হতে পারত। ওসিয়ত, ওহি, বা অন্য কোন শব্দের ছন্দবদ্ধ পয়ার হতে পারত।

বইটিতে (ঋ-তে ঋষি,) ঋষি ঐ বসে আছে, (র-তে রথ) রথ টানি এমন বাক্যও আছে। তা সত্ত্বেও ‘ওড়না চাই’ বাক্যে সাম্প্রদায়িক শব্দের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন প্রশ্ন করলে মাওলানা আফেন্দী বলেন, এমন আপত্তি খুঁজলে দেশের সব ধর্মের মানুষের সাথে সুখে-শান্তিতে বসবাস করার পরিবেশ নষ্ট হবে। ধর্মীয় মানসিক বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়বে সমাজে। ধর্মীয় ইমেজ ক্ষুন্নকারী বা ইসলাম ধর্মের অবমাননায় ষড়যন্ত্র বা উদ্দেশ্যমূলক কোন শব্দ বা বাক্যের চর্চা সার্বিক বিবেচনায় প্রত্যাখ্যাত।

বাংলাদেশে ৯৩% লোক মুসলমান। এখানে মুসলমানরা সংখ্যাগড়িষ্ঠ। পাঠ্যেবইয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ধর্মীয় সভ্যতা বা আদর্শের প্রতিফলিত হবে এটা স্বাভাবিক। এ ব্যাপারে সংখ্যালঘুদের আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। ওড়না চাই বাক্যটি শিশুর বয়স ও পাঠদানের বৈরী পরিবেশ তথা সহশিক্ষার কারণে একটি মেয়েশিশু সহপাঠীদের বিকৃত মানসিকতার শিকার হতে পারে।

এ আশঙ্কায় ওড়না চাই আপত্তিকর বিষয়। ইসলাম সন্দেহজনক বস্তু থেকেও বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়। ইসলামের এ মূলনীতির বিচারেও এটা আপত্তিকর বিষয়। কিন্তু যারা ওড়না চাই বাক্যে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পায় তারা আসলে সমাজের শান্তি-সম্প্রীতি নষ্টকারী। ওসব ব্যক্তিরাই বর্জনীয়। তাদের কথার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।

প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে আপত্তিকর কিছু আছে কি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে শুধু আপত্তি করলে চলবে না। আপত্তির সাথে সাথে এর বিকল্প কী হবে? সমাধান কী হবে তাও পেশ করা জরুরি। প্রথম শ্রেণির বইটি শিশুদের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। সংক্ষেপে বললে- এ বইটি থেকে শিশুরা বাংলা বর্ণ, শব্দ ও বাক্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে। আর অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে অলি, ঋষি, মুহাম্মদ, রথ, বঙ্গবন্ধু এ কয়েকটা শব্দের ঐতিহাসিক ও পারিভাষিক অর্থ ও প্রয়োগ জানার বিষয় আছে।

ইসলাম সন্দেহজনক বস্তু থেকেও বিরত থাকতে নির্দেশ দেয়। ইসলামের এ মূলনীতির বিচারেও এটা আপত্তিকর বিষয়। কিন্তু যারা ওড়না চাই বাক্যে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পায় তারা আসলে সমাজের শান্তি-সম্প্রীতি নষ্টকারী। ওসব ব্যক্তিরাই বর্জনীয়। তাদের কথার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।

বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিলে এখানে আপত্তির কিছু নেই। বর্তমানে সৃষ্ট সমস্যাগুলো তো উপস্থাপনা-পরিবেশন ও মানসিকতার। শব্দ আর বাক্যকে আপন আপন জায়গায় রেখে যার যার ধর্ম অনুযায়ী আদর্শ আর শিক্ষা গ্রহণ করলে এখানে আপত্তির কিছু থাকে না। আর আপত্তিই যদি ওঠে তাহলে আপত্তিকর বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিত। যেমন ধরুন- অ তে অলি। বাংলা একাডেমির অভিধানে এর অর্থ দুই ধাপে লেখা হয়েছে। ১. ভ্রমর; বৃশ্চিক; মদ্য। ২. অভিভাবক, দরবেশ, রক্ষক। ১ম শ্রেণির বাংলা বইয়ে অলি শব্দটি ভ্রমর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। বইয়ে লেখা আছে (অ) ‘অজ আসে/ অলি হাসে।’ এখানে আপত্তির বিষয় হল শিশুর মনে অলি অর্থ ‘ভ্রমর’ না দিয়ে অধিক ব্যবহৃত ও বহুল প্রচলিত অর্থে দরবেশ অর্থ হওয়া উচিত ছিল।

সাহিত্য ও অলঙ্কারশাস্ত্রের নিয়ম ভঙ্গ হয়েছে এখানে। এখানে শব্দগত দিক থেকে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু প্রায়োগিক আপত্তি রয়েছে যদি তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়। খুব সহজ কথা ঋষি অর্থ যদি হিন্দু ধর্মের তপস্বী হতে পারে। একই বইয়ে অলি অর্থ কেন ইসলাম ধর্মের পরিভাষায় আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত দরবেশ হতে পারে না? এটাও এক ধরনের বৈষম্য-মানসিকতা। যা পরিত্যাজ্য।

আরআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ