আওয়ার ইসলাম: নিউজিল্যান্ডে অভিবাসী মুসলমান সংখ্যায় খুবই কম। কিন্তু তাদের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। তারা ধর্ম পালনে আন্তরিক। ইসলাম প্রচার-প্রসারে উদারমনা নিবেদিতপ্রাণ। তাদের কাজে আন্তরিকতা ও চেতনায় পরিমিতিবোধ থাকায় তারা আজ ধর্ম চর্চায় এগিয়ে আছে বলে চিহ্নিত বিশ্ব দরবারে।
জানা যায়,দেশটিতে বর্তমানে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ। এদের মধ্যে অনেক যোগ্য ও বিজ্ঞ আলেমও আছেন। জানা যায়, আলেমদের অধিকাংশই ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করে এ দেশে এসেছেন। মূলত এ আলেমশ্রেণির লোকদের মাধ্যমেই ক্রমশ এ দেশে ইসলাম প্রচার ও চর্চার কাজ বেগবান হচ্ছে।
নিউজিল্যান্ডে বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিম মহল্লা গড়ে ওঠছে। গড়ে ওঠছে মসজিদ।শিশুদের ধর্ম শেখার মকতব, হেফজখানা,শিশুনিকেতন। মসজিদের উদ্যোগেই সেখানে মূলত ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রচারের কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। মসজিদভিত্তিক সানডে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন আলেমরা। কোমলমতি শিশুদের ধর্ম শেখাতে তারা নানান উদ্যোগ ও আয়োজন করে থাকেন। এসব আয়োজনের মধ্যে ছুটির দিনে শিশুদের জন্য দিনব্যাপী ‘ধর্ম শেখার আসর’ উল্লেখযোগ্য।
ধর্মীয় শিক্ষার প্রচার-প্রসার ও মান উন্নয়নে আধুনিক মাদরাসাও প্রতিষ্টা করছেন আলেমগণ। এদেশে ‘ফেডারেশন অব ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজিল্যান্ড’ (FIANZ) নামে মুসলমানদের একটি সংগঠন রয়েছে। ১৯৭৯ সালে সমাজসেবামূলক এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।এটি সরকার নিবন্ধিত একটি সেবাধর্মী সংগঠন।ইসলাম চর্চা, ইসলামী শিক্ষা, সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নসহ নানা ধরনের সমাজসেবামূলক কাজ করা এ সংগঠনের উদ্দেশ্য।এর অন্যতম লক্ষ্য নিউজিল্যান্ডের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছানো।
সুদমুক্ত ব্যবসা ও অর্থনৈতিক কাজে সহায়তা করার উদ্যোগও আছে এ সংগঠনের। সংগঠনটি স্থানীয় একটি ইনস্ট্রুমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে মুসলিমদের সুদমুক্ত উপায়ে বাড়ি করার পন্থা উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের মুসলিম জনগোষ্ঠী শান্ত স্বভাবের। তারা উগ্র ও মারমুখী নন। তারা চেষ্টা করছেন নিউজিল্যান্ডবাসীর মধ্যে ইসলামের বিশ্বাস, মূল্যবোধ, রীতিনীতি প্রভৃতি সম্পর্কে ইতিবাচক ধারনা দিতে।
ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়ার জন্য অন্য ধর্মাবলম্বীর সঙ্গে ও তাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে।ইসলাম প্রচারে তারা যুগরে সাথে তাল মিলিয়ে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেন।আন্তঃধর্মীয় আলোচনা, ইসলামি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ ডিনার এবং ইসলামি শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তারা সংখ্যায় খুবই কম, কিন্তু তাদের ধর্ম চর্চা এগিয়ে গেছে অনেক দূর। তাদের সংগঠনের উদ্যোগে নিউজিল্যান্ডে ইসলাম সম্পর্কিত ভুল ধারণা নিরসনে উন্মুক্ত মসজিদ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।ফলে হ্যামিলটনে ইসলামের ব্যাপারে ভুল ধারণার অবসান ঘটেছে। এরা সংখ্যায় কম হলেও ধর্ম পালন, খোদাভীতি ও ইসলাম প্রচার-প্রসারে বেশ আন্তরিক।
আন্তরিকতাপূর্ণ কাজের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা তা ভোগ করতে শুরু করেছে। কাজের আন্তরিকতা ও ধর্মের পরিমিতিবোধের চেতনা সদা সর্বত্র ফলপ্রসূ নিউজিল্যান্ডের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ধর্ম পালন ও প্রচার চেষ্টার মধ্যদিয়ে তা-ই প্রতিফলিত হল। আজ তারা সুসংহত। চোখে পড়ার মত সংখ্যাও হয়েছে তাদের। ১ লাখের মত মুসলিম সংখ্যা হতে অনেক সময় গড়িয়েছে। সে ইতিহাস দীর্ঘ দিনের। সেই ১৮৭০ সাল থেকে শুরু । ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করার পর থেকে নিউজিল্যান্ডে মুসলমানদের আগমন ।ইতিহাস তাই বলে।
ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর ইউরোপ, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এসে নিউজিল্যান্ডে বসতি স্থাপন করে বসবাস শুরু করে। ১৮৭০ সালে এ দেশে ইসলাম ধর্মের প্রচার শুরু হয়।দেশটিতে ইসলামের প্রচার ও প্রসার হয় মূলত অভিবাসীদের মাধ্যমে। সর্ব প্রথম স্বর্ণ অনুসন্ধানকারী পেশার ১৫ জন চীনা মুসলমান কাজের সন্ধানে জীবিকার তাগিদে এ দেশে মুসলিম অভিবাসী হিসেবে আগমন করেন।তারা ওটাগোর ডানস্টানের স্বর্ণক্ষেত্রে কাজ করতেন। অতঃপর ১৯০০ সালের শুরুর দিকে গুজরাটের তিনটি মুসলিম পরিবার আসে। শুরু করে বসবাস। বসতি স্থাপন। পূর্ব ইউরোপ এবং ভারত থেকে আসা আরও কিছু অভিবাসী মুসলমান এদের সাথে যোগ হয়। থাকতে শুরু করে স্থায়ীভাবে। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত এই মুষ্ঠিমেয় অভিবাসী মুসলমানই ছিল নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী মুসলমান।
দেশটির সরকারের পরিসংখ্যান মতে , ১৯৫০ সালে নিউজিল্যান্ডে মুসলমান অধিবাসী ছিল মাত্র ১৫০ জন। ১৯৬০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হয় ২৬০জন। । ১৯৭০ সালে অভিবাসী মুসলমানরা দেশটিতে বড় পরিসরে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। বসতি স্থাপন শুরু করে ফিজি থেকে আসা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলমানরা । যুদ্ধে আক্রান্ত হয়ে নানান দেশের বাস্তুভিটাহীন মুসলমানরাও আসতে থাকে এদেশে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে মুসলমানরা এ দেশে আসে। তখনই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মুসলমানদের সংখ্যা।
ডিএস