মোস্তফা ওয়াদুদ, ওয়ালিউল্লাহ সিরাজ: আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশ কওমি মাদারাসা শিক্ষা বোড বেফাকের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল জব্বার রহ. স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেফাকের সহসভাপতি ও জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগের মুহতামিম আল্লাম আশরাফ আলী বলেন, বহুগুণের অধিকারী একজন মানুষ ছিলেন মাওলানা আবদুল জব্বার। তার গুণের মধ্যে অন্যতম ছিল তিনি অনুকূল প্রতিকূল সর্বাবস্থায় কাজের উপযুক্ত ছিলেন। তার ভেতর আলস্য বা অমনোযোগের কোনো বিষয় ছিল না। কাজের ভেতরে ডুব দিয়ে তিনি সফলতা তুলে আনতে পারতেন। এ জন্যই বেফাককে তিনি এতটা উর্ধ্বে আনতে পেরেছেন।
১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল ৩ টায় ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বেফাকের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হকের সভাপতিত্বে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান বেফাকের দীর্ঘ ২৭ বছর মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ওলামায়ে কেরামের পরামর্শে মাওলানা আবদুল জব্বারই প্রথম কওমি মাদরাসার শিক্ষা সনদের দাবি নিয়ে মাঠে নামেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকার শায়েস্তা খাঁ হল থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের কাণ্ডারী ছিলেন মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জব্বার।
তিনি কথা কম বলে কাজ বেশি করতেন মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ এ পর্যন্ত প্রায় তিনজন সভাপতি ইন্তেকাল করেছেন। মাওলানা হারুণ ইসলামাবাদী, নূরুদ্দিন গওহারপুরী ও বর্তমানে শাহ আহমদ শফির যুগ চলছে। এরর মাঝে দীর্ঘ একটি সময় পর্যন্ত বেফাকের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বেফাকের দীর্ঘ ৩৮ বছরে তিনি বরফাককে নিজের মতো করে নিয়েছিলেন। আমি আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ জানাই। তারা এতোবড়ো বিশাল একজন মানুষের জন্য সবার আগে স্মরণসভা করেছেন। অথচ উচিত ছিলো তার জন্য বৃহৎ আকারে স্মরণসভা করা। বেফাকের মহাসচিবের সাথে আমার অনেক স্মৃতি। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড করেছিলাম। এর সাথে একটি লিয়াজো কমিটি করার জন্য বেফাকের সাথে আমরা বৈঠক করেছিলাম। তখন তাে সাথে অনেক বৈঠক হয়েছে। তার সাখে মাঝে মাঝে রাগ করলেও তিনি কিছু বলতেন না। তিনি কথা বলতেন কম। কাজ করতেন বেশি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব এটি এম হেমায়েত উদ্দীন মাওলানা আব্দুল জব্বার রহ. কে আল্লাহ মাফ করে দিন। তিনি আমার খুব ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। আমার ভগ্নিপতি। তার শুশুর ও আমার শুশুর আপন খালতো ভাই। তার বাড়ি ও আমাদের বাড়ি এক। মাওলানা আব্দুল জব্বার রহ. অনেক আগেই সেসব ভাবতেন। যা আমরা আজকে ভাবছি। পরিশেষে তার জন্য সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামিয়া রাহমানিয়ার শায়খুল হাদিস মাওলানা মামুনুল হক বলেন, মাওলানা আবদুল জব্বার রহ. কে আমার ছোট্ট একটি অনুভূতি রয়েছে যা আগামী প্রজন্মের জন্য খুব বেশি অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয় বলে মনে করি। সেটি হলো কোনো একটি বিষয়কে নিজের জীবনের জন্য নির্ধারিত করে নেয়া। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের ভেতর অনেক প্রতিভা থাকে, অনেক কাজ আমরা করি কিন্তু অনেকগুলো কাজ একসঙ্গে করলে আসলে কোনোটাই হয় না। কিন্তু একটা মানুষ একটা কাজকে যদি তার জীবনের একমাত্র অবলম্বন করে নেয় তবে একজন সাধারণ মানুষের দ্বারাও অনেক বড় কাজ হয়। আবদুল জব্বার রহ. শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করেছেন, আমরণ, আজীবন। তিনি বেফাকুল মাদারিস নিয়ে কাজ করেছেন, কাজ করতে করতে মরেছেন এবং মরতে মরতে কাজ করেছেন। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটি এত প্রতিকূলতার মধ্যেও সফলতার আকাশ ছুঁয়েছে।
হযরত শায়খ যাকারিয়া কমপ্লেক্স এর প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ বলেন, কর্মী মানে হলো যে কাজ করতে জানে। তিনি শুধু একটি শব্দই জানেন আমার বেফাক। এটাই আমার তাজ। এচাই আমার বিছানা। ফরিদাবাদ মাদরাসায় একটি চেয়ার, ভাঙ্গা চমটেবিল, ভাঙ্গা চেয়ার
দিনচি বস্তু মিলে হলো কেফাক। ফরিদাবাদদ তখন টিনের ঘর। আমাে উস্তাদ মাওলানা আশরাফ আলী সাহেব তখন সেখানে ছিলেন। আজ বেফাক অনেক কিছুর মালিক। সম্পদের মালিক। জমির মালিক। যার পিছনের কোনো টান ছিলোনা। কোনো টেনশন ছিলনা।
তিনি বলেন, মাওলানা আবদুল জব্বার একসময় জমিয়ত করতেন। বেফাকরর জন্য রাজনীতিও বাদ দিয়ে দিলেন। বেফাকের কাজ করে করে জিন্দেগী পার করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় তিনজন সভাপতি ইন্তেকাল করেছেন। মাওলানা হারুণ ইসলামাবাদী, নূরুদ্দিন গওহারপুরী ও বর্তমানে শাহ আহমদ শফির যুগ চলছে। এরর মাঝে দীর্ঘ একটি সময় পর্যন্ত বেফাকের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। বেফাকের দীর্ঘ ৩৮ বছরে তিনি বরফাককে নিজের মতো করে নিয়েছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আমি আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ জানাই। তারা এতোবড়ো বিশাল একজন মানুষের জন্য সবার আগে স্মরণসভা করেছেন। অথচ উচিত ছিলো তার জন্য বৃহৎ আকারে স্মরণসভা করা।
অনুষ্ঠানে বিষেশ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশে আমরা কিছুদিন ধরেই দেখছি ইসলামি মনীষীর যে আকাশ তা আমরা দ্রুত হারাচ্ছি। অল্প কিছুদিন আগে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ইন্তেকাল করেছেন। তার শোকাবহ রেশ কাটতে না কাটতেই বাংলাদেশের পরিচিতি সংগঠন আলেম সবার বরেণ্য ও ভালোবাসার পাত্র মাওলানা আবদুল জব্বার চলে গেলেন। তার স্মরণেই আজকের এই সভা।
তিনি বলেন, মাওলানা আব্দুল জব্বার নিজেই ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি একাই বেফাককে লালন করেছেন। তুলে এনেছেন এ পর্যন্ত।
রিসালাতুল ইনসানিয়াহ বাংলাদেশের আমীর মাওলানা শহীদুল ইসলাম ফারুকী বলেন, আমার গ্রামের বাড়ির মাদরাসায় মাওলানা আব্দুল জব্বার জাহানাবাদী রহ. প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেছিলেন, শুধু মিছিল মিটিং দিয়ে সমাজ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। বরং তৃণমুল পর্যায়ে আমাদের কাজ করতে হবে। তিনি তখন ডাক দিয়েছিলেন, এবারের সংগ্রাম, বাংলার আনাচে কানাচে মক্তব-মসজিদ প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম। সেই সংগ্রাম নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
জামিয়া ইকরার রঈস মাওলানা আরিফ উদ্দীন মারুফ বলেন, সেই ৮০ দশকে একবার তিনি তার স্ত্রীকে ঢাকা য় নিয়ে আসেন। সম্ভাবত চিকিৎসার জন্য । তখন বেফাক বোর্ডের তত জায়গা ছিলো না। সে হিসেবে তখন তিনি তার স্ত্রীকে আমাদের বাসায় রেখেছিলেন। সেই থেকেই তার সাথে আমাদের পারিবারিক বন্ধন ছিলো। তার জীবনের সবচেয়ে বড় যে সিফাত বা গুণটি আমাকে আন্দোলিত করে সেটা হলো, তিনি যর কোনো কাজে ইস্তেকামাতের সাথে লেগে থাকতেন। তিনি দীর্ঘদিন পর্যন্ত বেফাকের সাথে সম্পৃক্ত থাকাটই এর বড় প্রমান। আমি জানিনা বেফাকের ভিতরগত অবস্থা। তবু আমি একটি প্রস্তাব রাখছি যে, তার নামে একটি ভিত্তি চালু করা হোক।
মাসিক মদিনা সম্পাদক আহমদ বদরুদ্দীন খান সবাইকে সাথে নিয়ে চলার মানসিকতা, সবার জন্য করা। নিজের জন্য কিছু না করা। আমার বাবা তাকে ভারবাহী বলতেন। কওমী মাদরাসার মতো একটি সেনসেটিভ জায়গায় এতোদিন টিকে থাকা সত্যিই একটি প্রশংসনীয় কাজ। এজন্য আমার বাবা তাকে একবার বাংলাদেশের শ্রেষ্ট আলেম হিসেবে পুরস্কৃত করতে চেয়েছিলেনন সীরাত কমিটির পক্ষ থেকে। কিন্তু অন্যদের কারণে পারেন নি। আজকের আওয়ার ইসলামের এ উদ্যোগ অনেক প্রশংসাসূচক। আলী হাসান তৈয়ব বলেন, আমার বন্ধু গাজী সানাউল্লাহ ঙে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, আমি তার সাথে একমত পোষণ করছি। আর নতুন করে একটি প্রস্তাব দিচ্ছি, বেফাক সিলেবাসের মাঝে তার জীবনী সম্পৃক্ক করা হোতকক।
বাংলা নিউজ ২৪ ডটকমের নিউজরুম এডিটর মুফতি এনায়েতুল্লাহ বলেন, আমি তার সাথে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। তার কাছে অনেক ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারতাম। এটা কেনো করেন না? ওটা কেনো করেন না? এটা করা দরকার ওটা করা দরকার। তিনি চলে যাওয়ান পর এখন আমার অভিব্যক্তি হলো, এই কেনো শোনার মানুষ হয়তো আর নেই। তবে জানিনা কেউ আছে কিনা? থাক্ররেও তাকে আমরা এথনো আবাস্কার করতে পারিনি।
সভাপতির বক্তব্যে জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, প্রথমেই আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ জানাই মাওলানা আবদুল জব্বার রহ. কে মৃত্যু পরবর্তী প্রথম স্মরণসভাটি করেছে। একই সঙ্গে তরুণদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই যারা নিরলস চেষ্টায় বিভিন্ন উপকারী উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
মাওলানা আবদুল জব্বার যখন মৃত্যু সজ্জায় তখন আমি পাশেই ছিলাম। তিনি তখনও বেফাক এবং সমসাময়িক সব সমস্যা নিয়ে টেনশন করছিলেন। অথচ এ সময় একজন মানুষের মাথায় কোনো চিন্তাই আসার কথা না। এই অবস্থার মধ্যেই হুজুরের অবস্থা দ্রুত অবনতি এবং শেষ পর্যন্ত তিনি আমাদের থেকে বিদায়ই নিলেন।
মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, মহান আল্লাহর নেজাম অনুযায়ী মাওলানা আবদুল জব্বার আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমাদের উচিত তার চিন্তা চেতনা তার রেখে যাওয়া আদর্শ প্রচার ও প্রসারে সময় ব্যয় করা।
আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুবের উদ্বোধনী বক্তব্যে শুরু হওয়া স্মরণসভায় আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল, মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা এটিএম হেমায়েদ উদ্দিন, মাদরাসা দারুর রাশাদ মিরপুরের শিক্ষা সচিব, মাওলানা লিয়াকত আলী, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ, জামিয়া ইকরা বাংলাদেশের রঈস, মাওলানা আরীফ উদ্দীন মারুফ, জামিয়া রাহমানিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা মামুনুল হক, জামিয়া আরাবিয়া লালবাগের মুহাদ্দিস মুফতি তৈয়ব হোসাইন, রিসালাতুল ইনসানিয়াহ বাংলাদেশের আমীর মাওলানা শহীদুল ইসলাম ফারুকী, মাসিক মদিনা সম্পাদক আহমদ বদরুদ্দীন খান প্রমুখ।
স্মরণসভায় স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন মাওলানা আবদুল জব্বার রহ.-এর জামাতা মাওলানা তানিম হোসাইন মাহমুদী।
[caption id="attachment_19737" align="aligncenter" width="816"] ?[/caption]
স্মরণসভায় বেফাকের চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফি’র লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন। লিখিত বক্তব্যে আল্লামা শফি বলেন, মাওলানা আবদুল জব্বার রহ. একজন নিরলস কর্মী, দীনের খাদেম এবং কৃতিত্বপূর্ণ জীবনের অধিকার আল্লাহর প্রিয় বান্দা ছিলেন। তার হাতেই বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া প্রাণ পেয়েছে। দীর্ঘ ৩৮ বছর তিনি বেফাকের সঙ্গে যুক্ত থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে মানোন্নয় করেছেন। কওমি সনদের স্বীকৃতির প্রশ্নে তিনি সব সময় দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিকে সামনে আনতেন।
আওয়ার ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক রোকন রাইয়ান ও বাচিক শিল্পী আবু সাঈদ জোবায়ের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, মাওলানা নেয়াতুল্লাহ আমিন, মুফতি এনায়েতুল্লাহ, জহির উদ্দিন বাবর, মাসউদুল কাদির, গাজী মুহাম্মদ সানাউল্লাহ, আলী হাসান তৈয়বসহ তরুণ প্রজন্মের চিন্তাশীল আলেমরা।
পুরো বক্তব্য আসছে...