সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের নতুন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান জাতীয় নাগরিক কমিটির

খুনিদের  নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার দাবিসহ ৭ দফা সংস্কার প্রস্তাবনা ইসলামী আন্দোলনের

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

স্বৈরাচার, খুনি, ফ্যাসিস্টরা যেন নির্বাচন করার সুযোগ না পায়, প্রধান উপদেষ্টাকে সে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি রেজাউল করিম।

শনিবার (৫ আগস্ট) রাতে সরকারি বাসভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের সাথে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।

ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি রেজাউল করিম বলেন, আজকে আমরা প্রধান উপদেষ্টার সাথে কথা বলেছি। তাদের সাথে আমরা নির্বাচন সংস্কারের কথা বলেছি। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবগুলো নির্বাচন ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা চাই প্রতিনিধিত্ব হারে আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট হবে। সকলের ভোটের অধিকার থাকবে। সরকার হবে জাতীয় সরকার। তারা আমাদের এই প্রস্তাবকে ভালো ভাবে নিয়েছে। তারা বলেছে এই প্রস্তাব নিয়ে তারা আলোচনা করবে।

রেজাউল করিম বলেন, আমরা বলেছি এই দেশ ৫ আগস্ট স্বাধীন হয়েছে বহু রক্ত ও জানের বিনিময়ে। আপনারা জনগনের যে সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনা করছেন, আপনাদের কোন দূর্বলতা নেই। তাহলে যারা খুনি দেশের টাকা পাচারকারী দুর্নীতিবাজ তারা দেশ থেকে কিভাবে পালালো। এটা আমাদের বোধগম্য না। জাতি মানতে চায় না। আপনাদের দূবর্লতা এটা প্রকাশ পায়। আপনাদের উচিত হবে খুনী টাকা পাচারকারীদের আটকিয়ে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবেন।

সংস্কার কমিশন নিয়ে তিনি বলেন, আমরা ছয় সংস্কার কমিশন ছাড়া ও আরও কয়েকটি কমিশন গঠনের কথা বলেছি।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর পক্ষ হতে সংস্কার কমিশনের প্রতি ৭ লিখিত প্রস্তাবনা প্রধান উপদেষ্টার হাতে হস্তান্তর করেন।

০১। নির্বাচন সংস্কার: ক) সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। খ) আরপিও এর সর্বশেষ সংশোধনী বাদ দিয়ে আরপিও পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। গ) ইসি নিয়োগে সাবেক বিচারপতি, আমলা ও সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে উলামায়ে কেরামকে সম্পৃক্ত করা। ঘ) সর্বদলীয় কমিটির মাধ্যমে ইসি নিযোগ দেয়া। ইসি’র কার্যক্রম জবাবদিহীতার আওতায় আনা। ঙ) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতায় মোতায়েন রাখা। চ) দুর্গম না হলে ব্যালট পেপার সকালে পাঠানো। ছ) ব্যালটে নির্বাচন হওয়া। আপাতত ইভিএম-এ নয়। জ) সম্পদ পাচারকারী ও দূর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তিকে যে কোনো নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা।

০২। পুলিশ সংস্কার: ক) পুলিশ সংক্রান্ত উপনিবেশন আমলের সকল আইন বাতিল করা এবং পুলিশের ব্রিটিশ লিগ্যাসি বাদ দেয়া। কারণ তা ছিলো নিপীড়ক ধরণের বাহিনী। খ) দেশের মানুষের বোধ-বিশ্বাস, চরিত্র বিবেচনা করে সেবা জনসহায়ক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা। গ) অজ্ঞাত সংখ্যায় আসামী দিয়ে মামলা করার প্রবনতা বন্ধ করতে হবে। ঘ) রাত্রিকালীন টহল পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং টহলে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিশেষ করে ঢাকাসহ সারাদেশে প্রবেশদ্বার গুলোতে যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ।

০৩। বিচার বিভাগ: ক) উপনিবেশিক লিগ্যাসি ও আইন বাদ দেয়া। খ) আইনের উৎস হিসেবে শরীয়াহকে গ্রহণ করা গ) উচ্চ আদালতে আলাদা শরিয়া বেঞ্চ গঠন করা। ঘ) বিচারপ্রার্থীর শরিয়া আইনে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ রাখতে হবে।

০৪। দূর্নীতি দমন: ক) দুদককে স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে কাজ করার লক্ষ্যে প্রস্তুত করা। খ) দুদক কমিশনার হিসেবে উলামা, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি নিয়োগ করা। গ) দুর্নীতির মামলা দ্রুত নিস্পত্তির জন্য আলাদা আদালত স্থাপন করা। ঘ) বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনার সক্ষমতা ক্সতরী করা।

০৫। প্রশাসন সংস্কার: ক) উপনিবেশিক ধারাবাহিকতার আমলাতন্ত্র আমূল বদলে দেয়া। পদবিন্যাস, পদবীর নাম ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা। খ) বর্তমান প্রশাসন নির্দেশনা ও পদ্ধতি নির্ভর, সেখান থেকে সরে এসে কর্ম ও প্রকল্প কেন্দ্রিক প্রশাসন তৈরি করা। গ) ইসলামের ধারণা এবং সংবিধানের মর্ম মতে জনপ্রশাসন জনতার সেবক। কিন্তু নাম হলো "প্রশাসন"। এখান থেকে সরে আসতে হবে। ঘ) প্রশাসনের সর্বস্থরকে দূর্নীতি মুক্ত করা এবং দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন করা। ঙ) চিহ্নিত দলবাজ, বিতর্কিত ও দূর্নীতিবাজ সচিবদেরকে অব্যাহতি প্রদান করা।

০৬। সংবিধান সংস্কার: ক) আওয়ামী আমলের সংশোধনীগুলো বাতিল করা। খ) আইনের উৎস হিসেবে শরীয়াহ-র প্রধান্য নিশ্চিত করা। গ) রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা। ঘ) দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, একই ব্যক্তি দলীয় ও সরকারের প্রধান না হওয়া। ঙ) বর্তমান সংবিধানে ধারা ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা। চ) ন্যায়পাল কার্যকর করা, এবং তাতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিধানকে ভিত্তি হিসেবে রাখা। ছ) সংবিধান সংস্কার কমিটিতে উলামাদের থেকে একাধিক সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা। জ) সংস্কার অবশ্যই গণভোটে অনুমোদিত হতে হবে। ঝ) সংবিধানে ইসলামের মৌলিকত্ব লংঘন হয় এমন কোনো ধারা থাকতে পারবে না। ঞ) দেশের যুব চরিত্র নস্ট করে এমন কোনো উপাদান (যে কোনো মদ বা মাদকতা সৃষ্টিকারী উপাদান) বা আচরণের (পতিতাবৃত্তি, অশ্লীল চলচ্চিত্র, জুয়া ইত্যাদির) ক্সবধতা সম্বলিত কোনো ধারা থাকতে পারবে না। ট) নারী ও শিশু পাচার বন্ধে এবং অসহায় নারীদের সুস্থধারায় পুর্নবাসনের সুস্পষ্ট ধারা-বিধান থাকতে হবে।

০৭। শিক্ষা কমিশন সংস্কার: ক) নীতি -নৈতিকতা, সুঅভ্যাস- সুআচরন ও দেশপ্রেম গড়ে উঠে এমন শিক্ষা কারিকুলাম তৈরী করতে হবে। খ) দেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে বিগত সোয়া দুইশত বছরের ধারাবাহিক সংগ্রামকে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন কোনো সাহিত্য, প্রবন্ধ বা ধংংরমহসবহঃ শিক্ষার কোনো পর্যায়েই থাকতে পারবে না। গ) এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ণ করে এমন কোনো সাহিত্য, প্রবন্ধ বা ধংংরমহসবহঃ শিক্ষার কোনো পর্যায়েই থাকতে পারবে না। ঘ) সকল সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। ঙ) অনৈতিক আচরণে দোষী ব্যক্তিদের শিক্ষাঙ্গনে অনুপযুক্ত ঘোষণা করতে হবে। চ) গতানুগতিক বৃটিশ প্রবর্তিত লেজুরবৃত্তিক চাকুরীজীবি ক্সতরির শিক্ষা ব্যবস্থা হতে বের হয়ে উদ্যোক্তা সৃষ্টির শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনে দেশের প্রবীণ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ আলেম ও দেশপ্রমিক রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। ছ) প্রতিবন্ধী, হিজড়া ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকরী ও ক্সনতিকতা সমৃদ্ধ শিক্ষার ব্যবস্থা করা।

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ