বুধবার, ০৭ মে ২০২৫ ।। ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৯ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :

মদিনার মুসাফিরদের প্রতি বিনীত নিবেদন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মুফতি জুবায়ের বিন আব্দুল কুদ্দুস ||

পবিত্র হজ্ব আমাদের দুয়ারে এসে কড়া নাড়ছে। প্রভুর প্রেমে উন্মুখ লাখো হৃদয় ছুটে চলেছে বাইতুল্লাহর দিকে। এই মহাসফরে একজন মু’মিনের হৃদয় আরও একটি উদ্দেশ্যে আকুল হয়ে ওঠে—প্রিয় নবিজি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র রওজা মুবারকে হাজির হয়ে সালাম পেশ করা। বুকভরা ভালোবাসা ও ভক্তি নিয়ে, চোখভরা অশ্রু আর হৃদয়ভরা কৃতজ্ঞতা নিয়ে, প্রিয় নবিজির দরবারে নিজেকে সমর্পণ করতে চায় প্রতিটি প্রাণ।

এই মহান সফরের প্রাক্কালে, মদিনার সফররত সম্মানিত ভাই ও বোনদের উদ্দেশ্যে আমি কিছু বিনীত কথা নিবেদন করতে চাই।

মদিনা শরীফ—এটি কোনো সাধারণ নগর নয়। এটি বরকত ও নুরের শহর, শান্তির শহর, যেখানে প্রতিটি ধূলিকণায় জড়িয়ে আছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা। এই শহরের প্রতিটি চিলেকোণায় আদব, ভক্তি ও নম্রতার বার্তা। এখানে একমাত্র গ্রহণযোগ্য আচরণ—নম্রতা, নততা এবং পূর্ণ শ্রদ্ধা।

দুঃখের সাথে বলি, মদিনার সফরে এমন কিছু দৃষ্টান্ত চোখে পড়েছে, যা চরম বেদনার। কিছু মানুষ না বুঝে কিংবা অবহেলায় এমন আচরণ করে বসে, যা রওজা মোবারক জিয়ারতের আদববহির্ভূত। এর ফলে হয়তো  অজান্তেই তাদের আমলগুলো নিষ্ফল হয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, আমরা এমন সৌভাগ্যবান মুমিনদেরও দেখি—যারা দূর থেকেই জুতা খুলে রেখে দেন। মাথা নিচু করে, শ্রদ্ধাভরে ধীর পদক্ষেপে অগ্রসর হন। যেন কোনো অপরাধী অবনত মস্তকে মনিবের দিকে এগিয়ে চলেছেন। তারা চোখের অশ্রু দিয়ে রওজার পাশের জমিনকে সিক্ত করেন। দাঁড়িয়ে কাঁপা কণ্ঠে বলেন— “আস-সালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ।”

মদিনায় সফরকারী ভাইদের ‍উদ্দেশে আমার নিবেদন—

১. পূর্ণ সফরে ও মদীনা শরীফে অবস্থানের সময় মহব্বতের সাথে বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা।

২. মদিনা শরীফ পৌঁছে প্রথমে হোস্টেলে গিয়ে পরিচ্ছন্ন হওয়া। অতঃপর আতর-সুগন্ধি লাগিয়ে আদবের সাথে মসজিদে নববিতে উপস্থিত হওয়া।

৩. মসজিদে প্রবেশের পর প্রথমে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামাজ পড়া। 

৪. আদবের সাথে সালাম প্রদানের জন্য এগিয়ে যাওয়া। অনুচ্চ আওয়াজে সালাম বলা। 

প্রথমে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রওজায়, অতঃপর হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা.-এর কবরে, তারপর হযরত ওমর রা.-এর কবরে সালাম পেশ করা।

উল্লেখ্য, সালাম পেশ করার সময় অনেক ভাই সেলফি তোলেন, ভিডিও ধারণ করেন, আবার কেউ লাইভ প্রচার করেন। আবার অনেকে উচ্চস্বরে কথা বলেন। এগুলো নবিজীর রওজা মোবারকের আদব পরিপন্থী। বর্জন করতে হবে।
৫. জুতা স্যান্ডেল আস্তে রাখা।

৬. নিম্নস্বরে কথা বলা। বিশেষত রওজা শরীফের আশেপাশে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَرۡفَعُوۡۤا اَصۡوَاتَکُمۡ فَوۡقَ صَوۡتِ النَّبِیِّ وَ لَا تَجۡہَرُوۡا لَہٗ بِالۡقَوۡلِ کَجَہۡرِ بَعۡضِکُمۡ لِبَعۡضٍ اَنۡ تَحۡبَطَ اَعۡمَالُکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَشۡعُرُوۡنَ 

অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চ স্বরে কথা বল, তার সাথে সেইভাবে উচ্চ স্বরে কথা বলো না; কারণ এতে অজ্ঞাতসারে তোমাদের আমল নিস্ফল হয়ে যাবে। (সূরা হুজুরাত, আয়াত নং ২)

আর এ আয়াতটি রওজা শরীফের উপরে স্পষ্টাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। অথচ আমাদের অনেকেই এগুলো  লক্ষ্য করে না। 

৭. মদীনা শরীফের সব কিছুকে ভালো ও মুহাব্বতের দৃষ্টিতে দেখা।

৮.  ৪০ ওয়াক্ত নামাজ তাকবিরে উলার সাথে মসজিদে নববীতে পড়তে চেষ্টা করা। জিয়ারাহ বা অন্য কোথাও গেলেও যেন মসজিদে নববীর জামাত ছুটে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা।

৯. জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে চিরশায়িত সকলের জন্য সালাম পেশ করা ও সাধ্যমত ঈসালে সওয়াব করা।

১০. রিয়াজুল জান্নাহে প্রবেশের জন্য নিবন্ধন করা। সময় মত লাইনে দাঁড়িয়ে ধৈর্যের সাথে প্রবেশ করা।
১১. সম্ভব হলে প্রতিদিন সকালে ফজরের নামাজের পর মসজিদে কুবায় গিয়ে দুই/চার রাকাত ইশরাকের নামাজ পড়া। দুই রিয়াল ভাড়ার বিনিময়ে গাড়িতে যাওয়া যায় অথবা ৩১০ নং গেট দিয়ে বের হয়ে পায়ে হেঁটে সহজে যাওয়া যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, مَنْ تَطَهَّرَ فِي بَيْتِهِ ثُمَّ أَتَى مَسْجِدَ قُبَاءٍ فَصَلَّى فِيهِ صَلاَةً كَانَ لَهُ كَأَجْرِ عُمْرَةٍ ‏

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি নিজের ঘরে পবিত্রতা অর্জন করলো, অতঃপর কুবা মসজিদে এসে কোন নামাজ পড়লো, তার জন্য একটি উমরার সমান সাওয়াব রয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৪১২)

লেখক: শিক্ষক, লালবাগ মাদ্রাসা ঢাকা 
খতিব, আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ ঢাকা 
পরিচালক, দাওয়াতুস সুন্নাহ বাংলাদেশ

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ