বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫ ।। ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৩ জিলকদ ১৪৪৬


সোহরাওয়ার্দীতে রেকর্ড করতে চায় হেফাজত, উজ্জীবিত তৃণমূল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিশেষ প্রতিনিধি

অনেক বছর পর মুক্ত পরিবেশে বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ  প্লাটফরম হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। আগামী শনিবার (৩ মে) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই মহাসমাবেশ ডেকেছে সংগঠনটি। এই মহাসমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম ঘটানোর টার্গেট নিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সে লক্ষ্যে সংগঠনটির নেতারা চষে বেড়াচ্ছেন সারাদেশ। ইতোমধ্যে বেশ সাড়াও পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশে লোক সমাগমে রেকর্ড সৃষ্টি করবে সংগঠনটি। 

মহাসমাবেশ থেকে নারী সংস্কার কমিশন বাতিল, আওয়ামী লীগের আমলে হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা প্রত্যাহার এবং ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের নৃশংসতাসহ আওয়ামী লীগ আমলে সকল গুম, খুন ও গণহত্যার বিচার দাবি জানানো হবে। মূল এই তিন দাবির পাশাপাশি সর্বোপরি ইসলামি শক্তির ঐক্য ও পুনর্জাগরণের ডাক আসবে এ মহাসমাবেশ থেকে। 

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান আওয়ার ইসলামকে বলেন, আমরা মহাসমাবেশ সফল করতে সারাদেশে সফর করছি। ঢাকায় বড় বড় মাদরাসায়, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে গিয়েছি দাওযাত দেওয়ার জন্য। এখনও আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। আশা করি এবারের আয়োজন ব্যাপক সাড়া ফেলবে।  

জানা গেছে, হেফাজতে ইসলাম আগেই মহাসমাবেশ ডেকেছিল। এর মধ্যেই নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের কুরআন-সুন্নাহবিরোধী সুপারিশের ইস্যুটি সামনে আসে। ফলে এই বিষয়টিকে হাইলাইট করে অন্যান্য দাবি যুক্ত করা হয় মহাসমাবেশে। চলমান ইস্যু যুক্ত হওয়ায় আয়োজনটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ২০১৩ সালের পর হেফাজতের সবচেয়ে বড় আয়োজন হবে এবারের মহাসমাবেশটি।  

নারী সংস্কার কমিশন ইস্যু ছাড়াও ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের নৃশংসতা, ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে চালানো দমন-পীড়ন এবং ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণহত্যা- সবক্ষেত্রেই হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকেই গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। এসব গণহত্যার জন্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বিচার চান সংগঠনটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগ আমলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে হেফাজতে ইসলামের হাজার, হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শতাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ আট মাস পার হয়ে গেছে। অথব এসব মামলা প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এতে হেফাজতের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল হেফাজতের মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। 

মহাসমাবেশের সর্বশেষ প্রস্তুতি জানাতে গত মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদরাসায় এক সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলাম। এতে জানানো হয়েছে, আগামী শনিবার (৩ মে) সকাল ৯টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ শুরু হবে।

এতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক চার দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো- নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিল, সংবিধানে বহুত্ববাদের পরিবর্তে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল, ফ্যাসিবাদের আমলে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, শাপলা চত্বরসহ সব গণহত্যার বিচার এবং ফিলিস্তিন এবং ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধ।

সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, ‘যে কমিশন কোরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধে সুপারিশ করতে পারে, বাংলাদেশের মানুষ সেই কমিশন মানে না। সংবিধানে বহুত্ববাদ নয়, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।’

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ