|| মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব ||
বাংলাদেশে প্রতি তিন বছর পর এক লক্ষাধিক কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী দাওরায়ে হাদিস শেষ করে বের হচ্ছেন। তবে তাদের বেশিরভাগই উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাবে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন। মসজিদ-মাদ্রাসার সীমিত ক্ষেত্র তাদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারছে না। ফলে অর্থনৈতিক সংকটে তারা অনিশ্চিত জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠিত কিছু আলেমের উচ্চ আয়ের উদাহরণ দিয়ে পুরো বাস্তবতা মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। বরং অনেক আলেম আছেন, যারা গ্রামে একটি ছোট মাদ্রাসা বা মসজিদ পরিচালনা করে নিজ পরিবারের ন্যূনতম প্রয়োজনও মেটাতে পারছেন না। স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ, সন্তানদের লেখাপড়া কিংবা সংসারের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে না পেরে তারা নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
ইসলাম আমাদের হালাল উপার্জনের নির্দেশ দিয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে, "যখন তোমাদের নামাজ শেষ হয়ে যায়, তখন তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) তালাশ করো" (সুরা জুমুআহ, আয়াত ১০)। অথচ কিছু প্রচলিত ধারণা কওমি আলেমদের শুধুমাত্র মাদ্রাসার গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
অনেক নবীন আলেম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাকে একমাত্র সমাধান হিসেবে দেখছেন। দেখা গেছে একটি পাঁচতলা ভবনে ৫ তলায় পাঁচটি দাওরা হাদিস মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু এক ভবনের পাঁচ তলায় পাঁচটি দাওরায়ে হাদিস মাদ্রাসা থাকা কোনো বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নয়। বরং আমাদের উচিত কওমি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন করা—কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ইংরেজি ভাষা শিক্ষা, অর্থনীতি ও ইসলামী অর্থনীতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করা। এতে স্কিল ডেভেলপ হবে ওসব অঙ্গনে কাজ করার সাহস সঞ্চয় হবে।
বিশেষ করে কওমি অঙ্গনের দায়িত্ববান ব্যক্তিদের উচিত এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া। যেমন, শায়খ আহমাদুল্লাহ সাহেবের মতো নেতৃস্থানীয় আলেমরা ভাষা ও কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে কওমি তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
ইলম (বিদ্যা) কখনো কর্মসংস্থানের পরিপন্থী নয়। বরং বাস্তবতাকে সামনে রেখে হালাল উপার্জনের পথ অনুসরণ করাই ইসলামের শিক্ষা। কওমি তরুণদের উচিত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির তোয়াক্কা না করে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য উদ্যোক্তা হওয়া, বিভিন্ন পেশায় দক্ষতা অর্জন করা এবং মসজিদ-মাদ্রাসার গণ্ডি পেরিয়ে বৈধ উপায়ে সম্মানজনক জীবনযাপন নিশ্চিত করা।
হাদিয়া নির্ভর জীবনযাপনকে ইসলাম কখনো আদর্শ হিসেবে নির্ধারণ করেনি। বরং সাহাবায়ে কেরাম ব্যবসা-বাণিজ্য ও বৈধ পেশার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। তাই কওমি আলেমদেরও উচিত হালাল পথে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, যাতে তারা সম্মান ও আত্মমর্যাদা রক্ষা করে জীবনযাপন করতে পারেন। দীর্ঘদিনের প্রচলিত ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার মাধ্যমে কওমি তরুণদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করাই এখন সময়ের দাবি।
লেখক: মিডিয়া রিসার্চার, ইসিএসএসআর, সংযুক্ত আরব আমিরাত
হাআমা/