|| মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব ||
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী, চান্দ্রমাস শুরু করার ক্ষেত্রে রুয়াতে হিলাল (চাঁদ দেখা) ও সুবুতে রুয়াতে হিলাল (শাহাদাতের মাধ্যমে চাঁদ দেখার প্রমাণ) প্রধান ভিত্তি। জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব, নতুন চাঁদের জন্ম, বা এর দৃষ্টিগোচর হওয়ার সম্ভাবনাকে শরীয়ত নির্ভরযোগ্য প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করেনি।সন্ধ্যায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে হাদীসের নির্দেশনা হলো-
"َإِنْ غُمّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا العِدّةَ ثَلاَثِينَ"
যদি চাঁদ দৃষ্টির আড়ালে থাকে, তবে মাসের গণনা ৩০ পূর্ণ করো। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০৭)
এটি ফিকহ ও ফতোয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিকট সুস্পষ্ট একটি উসূল। এ বিষয়ে হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.-এর ‘রুয়াতে হিলাল’ পুস্তিকায়ও বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে, যার বাংলা অনুবাদও পাওয়া যায়।
চান্দ্রমাস নির্ধারণ ও সৌদির সাথে পার্থক্যের বিষয়
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী, চাঁদ দেখা না গেলে মাসের গণনা ৩০ দিনে পূর্ণ করতে হবে। নবী করিম ﷺ বলেছেন—
"فَإِنْ غُمّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا العِدّةَ ثَلاَثِينَ"
যদি চাঁদ দৃষ্টির আড়ালে থাকে, তবে মাসের গণনা ৩০ পূর্ণ করো। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০৭)
এ বিধান অনুসারে সৌদি আরবের সাথে আমাদের দুই দিনের পার্থক্য হতে পারে। এতে কোনো সমস্যা নেই, কারণ মূল বিষয় হলো শরীয়তের অনুসরণ। জ্যোতির্বিজ্ঞান বা চন্দ্রকলার পরিবর্তনকে শরীয়ত ভিত্তি বানায়নি; বরং ‘রুয়াতে হিলাল’ (চাঁদ দেখা) এবং শরয়ী পদ্ধতিতে তা প্রমাণিত হওয়াকেই নির্ভরযোগ্য মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করেছে।
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলে বা চাঁদ দেখা না গেলে, শরীয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী মাসকে ৩০ দিন পূর্ণ করতে হবে।
সুতরাং, শরীয়ত মোতাবেক আমল হলে সৌদির ঈদ পালন নিয়ে সন্দেহ বা আপত্তির প্রয়োজন নেই। মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত শরীয়তের বিধান মেনে চলা, কারণ শরীয়তের বিধানই সর্বোচ্চ কর্তৃত্বপূর্ণ।
শরীয়ত অনুযায়ী ‘রুয়াতে হেলাল’ সাব্যস্ত হওয়ার জন্য যথাযোগ্য কর্তৃপক্ষের সামনে চাঁদের প্রমাণ উপস্থিত হওয়া অপরিহার্য। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সাক্ষ্য বা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা খবরের ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বাতিল করা যায় না।
যদি বাস্তবেও কোথাও চাঁদ দেখা গিয়ে থাকে, তবু তা শরয়ী তরীকায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রমাণিত না হলে আমল ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এর প্রমাণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস—
"الصّوْمُ يَوْمَ تَصُومُونَ، وَالفِطْرُ يَوْمَ تُفْطِرُونَ، وَالأَضْحَى يَوْمَ تُضَحّونَ."
সিয়াম সেদিন, যেদিন তোমরা রোযা রাখ; ফিতর সেদিন, যেদিন তোমরা রোযা ছাড়; আর কুরবানী সেদিন, যেদিন তোমরা কুরবানী কর। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৭০৬)
এছাড়াও আয়েশা রাযি.-এর বর্ণিত আছারে এসেছে—
"إِنّمَا النّحْرُ إِذَا نَحَرَ الْإِمَامُ، وَعُظْمُ النّاسِ، وَالْفِطْرُ إِذَا أَفْطَرَ الْإِمَامُ، وَعُظْمُ النّاسِ."
কুরবানীর দিন হল সেদিন, যেদিন ইমাম ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কুরবানী করে এবং ফিতর সেদিন, যেদিন ইমাম ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ রোযা ছাড়ে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/১৫৭, হাদীস ৭৩১০)
অতএব, শরীয়তের বিধান অনুযায়ী যথাযোগ্য কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ব্যক্তিগত পর্যায়ে পাওয়া খবর বা সাক্ষ্য দ্বারা তা পরিবর্তিত হবে না।
এমএম/