সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ।। ২০ মাঘ ১৪৩১ ।। ৪ শাবান ১৪৪৬


দাওয়াতি কাজের আদব ও তরিকা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মাওলানা আব্দুর রহমান (ভারত) ||

দাওয়াতি কাজের প্রাণ হলো ইখলাস ও লিল্লাহিয়াত। ইসলাসের সঙ্গে দাওয়াতি কাজ করতে গেলে অনেক দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হব। তখন আমরা ক্ষমা ও উদারতা দেখাব। আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করা পছন্দ করেন। আমাদের প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য যেন থাকে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। আমলকে রিয়ামুক্ত করা।

মেরে দোস্ত বুজুর্গ, আমরা মনে করি এই সম্পদ ও সময় আমাদের, এই জীবন আমাদের। আসলে এটা ভুল। সম্পদ সময় ও জীবন আমাদের নয়। এগুলো আল্লাহর। আল্লাহ আমাদের কাছে এগুলো আমানত রেখেছেন। সুতরাং আল্লাহর দেওয়া সম্পদ ও সময় নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া আমাদের কর্তব্য।

মেরে দোস্ত ও বুজুর্গ! দাওয়াতের কাজে বের হয়ে আমরা কারো দ্বারা প্রভাবিত হব না, বরং আমরা আশপাশের পরিবেশকে প্রভাবিত করব; আমাদের আখলাক দ্বারা, আমাদের আচরণ দ্বারা, আমাদের উচ্চারণ দ্বারা। সাহাবায়ে কেরাম যেখানেই গেছেন আখলাক দ্বারা সেখানকার পরিবেশ পাল্টে দিয়েছেন। আমাদেরকে সাহাবিওয়ালা আখলাকের অধিকারী হতে হবে।

দাওয়াতি কাজে বের হয়ে আমরা আমল করব, অনর্থক কথাবার্তা ও কাজকর্ম থেকে বেঁচে থাকব। বর্তমানে সবচেয়ে বড় অনর্থক কাজ হলো মোবাইল। সুতরাং দোস্ত বুজুর্গ! আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে আমরা মোবাইলের ফেতনা থেকে বাঁচব। দাওয়াতের কাজে বের হয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখব আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের ওপর নারাজ না হন। এমন কোনো কাজ করব না যার কারণে আল্লাহ নারাজ হন। দুনিয়ার সকলের নারাজি আমি সহ্য করতে পারব কিন্তু আল্লাহর নারাজি সহ্য করতে পারব না।

মেরে দোস্ত বুজুর্গ! আল্লাহর হুকুম ও নবীর তরিকাকে আমাদের জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বানাব। দুনিয়ার সম্পদ ছাড়তে পারব, জীবন বিলিয়ে দিতে পারব, কিন্তু আল্লাহর হুকুম ও নবীর তরিকা ছাড়ব না। আমাদের চিন্তা হবে আখেরাতমুখী। আমরা দুনিয়ার ভোগ বিলাসিতা বর্জন করতে পারব, কিন্তু আখেরাতকে কখনো ক্ষতিগ্রস্ত করব না। আমাদের আমল যখন আখেরাতমুখী হবে, আমাদের চিন্তাভাবনা যখন আল্লাহর হুকুম নবীর তরিকামুখী হবে, তখন দীন মানা ও দীনের ওপর চলা আমাদের জন্য সহজ হবে।

মেরে দোস্ত বুজুর্গ! আমরা যখন মসজিদে মসজিদে মহল্লায় দীনের দাওয়াত নিয়ে যাব তখন এমনভাবে দাওয়াতের কাজ করব যেন একজন ভাইও আমাদের দাওয়াত থেকে বাইরে না থাকে। আমরা সবাইকে ঈমানের দাওয়াত দেব। দীন মানার লাভ বুঝাব। দীন না মানার ক্ষতি বুঝাব। আখেরাতের জীবন বুঝাব। আসল জীবন তো আখেরাতের জীবন। কিন্তু আমরা আখেরাতকে ভুলে আছি। দাওয়াতের কাজে যত দূরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় যাব। তাদেরকে বুঝিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের করার চেষ্টা করব।

মেরে দোস্ত বুজুর্গ! দাওয়াতের কাজে বের হয়ে কিছু জিনিস থেকে আমাদের বাঁচতে হবে। কারো কাছে কিছু চাওয়া থেকে বাঁচব। কারো কারো কিছু চাইব না।

দ্বিতীয়ত আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে আমাদের দৃষ্টিকে হালাল থেকেও বাঁচাব, হারাম থেকেও বাঁচাব। রাস্তায় বের হয়ে হয়তো সুরম্য কোনো বাড়ি দেখলাম অথবা সুন্দর কোনো গাড়ি দেখলাম। দেখে মনে হলো বাড়ি ফিরে আমি এই জিনিস সংগ্রহ করব। এমন সুরম্য বাড়ি নির্মাণ করব। নতুন মডেলের এই গাড়ি কিনব। এমনটা হলে আমাদের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমরা তো বের হয়েছি আল্লাহকে পাওয়ার জন্য, আল্লাহর মুহাব্বত লাভের জন্য, কিন্তু এমনটা হলে আমরা আল্লাহর ভালোবাসার পরিবর্তে মাখলুকের ভালোবাসা নিয়ে বাড়ি ফিরব।

আরেকটি হলো আমরা অপব্যয় থেকে বাঁচব। প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খরচ করার নাম অপব্যয়। যেখানে ৫০ টাকায় কাজ হয় সেখানে ৬০ টাকা খরচ করব না। যে কাজ ৩০ মিনিটে হয় সেখানে ৩৫ মিনিট ব্যয় করব না, এটাও অপব্যয়। আমরা যদি সময়কে সম্পদকে অপব্যয় থেকে রক্ষা করি তাহলে অনেক সময় ও সম্পদ বেঁচে যাবে। সেই সম্পদকে আমরা অন্যান্য প্রয়োজনে খরচ করতে পারব। সেই সময়কে আমরা আল্লাহর ইবাদত বন্দেগিতে কাটাতে পারব। কোরআন মাজিদে আছে, অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই। সুতরাং আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে অপব্যয় থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকব। অপব্যয় হলো আগুনের মতো। আগুন যেমন সবকিছু জ¦ালিয়ে ভস্মীভূত করে দেয়, অপব্যয় আপনার সমস্ত সময় ও সম্পদকে গ্রাস করে নেয়। তখন ইবাদতের জন্য সময় পাবেন না, জরুরি প্রয়োজন পূরণের জন্য সম্পদ পাবেন না।

আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে আরেকটি বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখব। সেটি হলো অনুমতি ছাড়া কারো কোনো জিনিস ধরব না, ব্যবহার করব না। কারো জুতা ব্যবহার করব না, জগ গ্লাস ব্যবহার করব না। প্রয়োজন হলে প্রথমে অনুমতি নিব তারপর ব্যবহার করব। এগুলো মুয়ামালাত ও মুয়াশারাতের মাসআলা। তাবলিগের এই মেহনত পূর্ণ দীনের আমলের মেহনত। তাবলিগের মেহনতে এসে আমরা ইসলামের হুকুম আহকাম শিখব, ইবাদত শিখব, মুয়ামালাত শিখব, মুয়াশারাত শিখব, আখলাক শিখব। দৈনন্দিন জীবনে পূর্ণ দীন বাস্তবায়নের জন্যই তাবলিগের এই মেহনত।

অনুবাদ ও শ্রুতিলিখন : শামসুদ্দীন সাদী

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ