মুহাম্মাদ শোয়াইব
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী দলগুলোর ভূমিকা ও অবস্থান নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিশেষ করে গত আগস্টের পর থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রধান রাজনৈতিক শক্তিগুলো ইসলামী দলগুলোর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে এবং তাদের সঙ্গে কৌশলগত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি ও জামাতে ইসলামী ইতোমধ্যেই ইসলামিক আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। প্রতিটি দলই ইসলামী শক্তিকে নিজেদের বলয়ে টানার চেষ্টা করছে, যা প্রমাণ করে যে ইসলামী দলগুলোর রাজনৈতিক মূল্যায়ন বেড়েছে এবং তারা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের প্রচেষ্টা
জানুয়ারি মাসের ২১ তারিখে জামাতে ইসলামী আন্দোলনের আমিরের সঙ্গে বৈঠক করেন জামাতে ইসলামীর আমির। বৈঠকের পর ইসলামী আন্দোলন জানায় যে, তারা অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে রয়েছে, যাতে তাদের ভোট একত্রিত করা যায়। এরপর থেকেই আলোচনা আরও গতি পেয়েছে এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস ও নিজাম ইসলামসহ অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর সঙ্গেও জামাতে ইসলামীও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদি ইসলামী দলগুলোর মধ্যে একটি কার্যকর ঐক্য গড়ে ওঠে, তাহলে তারা আগামী নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে। প্রথমত, ইসলামী দলগুলো যদি একত্রিত হয়, তাহলে তারা একটি বড় শক্তিতে পরিণত হবে। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসন দেখে কিছু জনগোষ্ঠী নতুন বিকল্প খুঁজছে। ইসলামী দলগুলোর ঐক্য এই জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ইসলামী দলগুলোর সম্ভাবনা
৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং সম্ভাবনা রয়েছে যে তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে তাদের একাংশ বিএনপির পরিবর্তে ইসলামী দলগুলোর দিকে ঝুঁকতে পারে। এই সমীকরণ যদি বাস্তবে পরিণত হয়, তাহলে ইসলামী দলগুলোর জন্য একটি কার্যকর রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হবে, যা আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করতে পারে।
যদি ইসলামী দলগুলো এখনও ঐক্যের ব্যাপারে গাফিলতি করে, তাহলে এককভাবে কোনো দলের জন্য ক্ষমতায় যাওয়া কঠিন হবে। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও জটিল হয়ে উঠবে। অন্যদিকে, যদি তারা এখনই ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে তারা আগামী নির্বাচনে একটি বড় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
জনসাধারণের নিরপেক্ষ অংশও ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের পক্ষে রয়েছে। তারা চান, ইসলামী দলগুলো একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করুক এবং সুসংগঠিত রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করুক।
বিএনপি ও ইসলামী দলগুলোর রাজনৈতিক কৌশল
বিএনপি ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে মূলত এই কারণে যে, তারা চায় না ইসলামী দলগুলো বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠুক। যদি ইসলামী দলগুলো বিএনপির বিকল্প হিসেবে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম গঠন করে, তাহলে বিএনপির জন্য ক্ষমতায় ফেরা কঠিন হয়ে যাবে। সুতরাং বিএনপির কৌশল মূলত ইসলামী দলগুলোকে তাদের পাশে রাখা, যাতে ভোট বিভক্ত না হয় এবং তারা ক্ষমতার জন্য লড়তে পারে।
বাংলাদেশের আসন্ন রাজনৈতিক সমীকরণে ইসলামী দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তারা যদি ঐক্যবদ্ধ হয় এবং বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করে, তাহলে আগামী নির্বাচনে তারা উল্লেখযোগ্য ফলাফল দেখাতে সক্ষম হবে। অন্যদিকে, যদি তারা বিভক্ত থাকে, তাহলে তাদের সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এই মুহূর্তে ইসলামী দলগুলোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো একটি কার্যকর ঐক্য গঠন করা এবং তাদের রাজনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় করা।
হাআমা/