|| মুহাম্মদ আবদুল হামিদ ||
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নারী—পুরুষের জন্য দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায়ের বিশেষ গুরুত্ব ও ফযিলত রয়েছে। হাদিস শরীফে নানা কারণে নারীদের জন্য বাসায় নামাজ আদায় করা উত্তম বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো কারণে নারীরা বাসার বাহিরে গেলে তখন তারা কোথায় নামাজ আদায় করবেন; সেই বিষয়ে ভাবতে হবে।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ হিসেবে বাংলাদেশ হচ্ছে মসজিদের দেশ। দেশের শহর থেকে গ্রাম সর্বত্রই মসজিদ আর মসজিদ। এমনকি ঢাকা শহরকে মসজিদের শহর বলা হয়। দেশের মসজিদগুলোতে পুরুষের জন্য নামাজের সুব্যবস্থা থাকলেও মাহিলাদের জন্য নামাজের তেমন ব্যবস্থা নেই। নারীদের মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু সতর্কতার কথা থাকলেও ইসলাম নারীকে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে বাধা দেয় না। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে : “নারীরা মসজিদে যাবে তোমরা নিষেধ করো না, তবে তাদের জন্য তাদের ঘরই উত্তম। - ( মুসলিম)
মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করার কারণে যদি বেপর্দা হওয়ার কিংবা উত্যক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে মসজিদের চেয়ে ঘরে নামাজ আদায় করাই উত্তম। তবে কোন বিশেষ প্রয়োজনে নরীরা বাসার বাহিরে গেলে তখন তারা কোথায় নামাজ আদায় করবেন?
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মসজিদে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও নামাজের আলাদা স্থান রয়েছে। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা নেই। অথচ দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। নারীদের পড়াশুনা, চাকুরি, ব্যবসা—বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা কারণে ঘরের বাইরে যেতে হয়। এ সময় সাথে থাকা পুরুষ মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারলেও নারীদের জন্য আলাদা কোনো নামাজের জায়গা না থাকায় প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা নামাজ আদায় করতে পারেন না। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা হীনতার ভয়ে সাথে থাকা পুরুষও নামাজ কাযা করে বাড়ী ফিরতে হয়। এমনও দেখা যায়, পুরুষ মসজিদে নামাজ অদায় করছেন আর অদূরে সাথে থাকা নারী ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে অনিরাপদ অবস্থায় রাস্তার কিনারে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। অথচ তিনি নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। ব্যবস্থা না থাকার কারণে তিনি সময় মত নামাজ আদায় করতে পারছেন না।
যদিও নারীদের জন্য তাদের নিজ নিজ ঘরে নামাজ আদায় করা উত্তম বলে হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে তবুও বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীরা কোনো প্রয়োজনে বাসার বাহিরে বের হলে তার ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য পৃথক নামাজের জায়গা প্রয়োজন। বিশেষ করে শহর কিংবা মহাসড়কের পাশের মসজিদগুলোতে নারীদের জন্য পৃথক বাথরুম ও অজুখানাসহ নামাজের জায়গার প্রয়োজনীয়তা দিন দিন তীব্র হচ্ছে।
সেদিন আমার বোন সিলেট শহরে নামাজের জন্য অনেক খোঁজাখুঁজির পর কোন জায়গা না পেয়ে একটি পার্টি সেন্টারের ফ্লোরে মাগরিবের নামাজ আদায় করলেন। সাথে থাকা আমি তার জন্য নামাজের সুব্যবস্থা করে দিতে না পারায় অনেকটা লজ্জিত হলাম। কেননা আমাদের সিলেট অধ্যাতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত। এখানকার মানুষ অধিক ধর্মপরায়ন হিসেবে সবাই মনে করেন; অথচ একজন মহিলা নামাজের জন্য জায়গা খোজে পাচ্ছেন না। বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তোলেছিল। সুতরাং যেসব স্থানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও চলাচল করেন সেসব স্থানে নারীদের জন্য আলাদা নামাজের সুব্যবস্থা থাকা জরুরী।
বিশেষ করে মহাসড়কের পাশে অবস্থিত মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অফিস—আদালত, শিল্প কারখানা, শপিং সেন্টার, বাস স্টেশন, রেল স্টেশন, লঞ্চঘাট, বিনোদন কেন্দ্র হোটেল—মোটেল ইত্যাদি স্থানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যেন শরিয়তসম্মতভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন সে ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিশ্চিত করা সময়ের দাবী। কেননা এসব স্থানে পুরুষের পাশাপাশি প্রচুর নারী বিভিন্ন প্রয়োজনে যাতায়াত করেন। নামাজের ওয়াক্ত হলে পুরুষরা ঠিকই নামাজ আদায় করতে পারেন। কিন্তু সুযোগের অভাবে প্রতিদিন অসংখ্য নারীকে নামাজ কাযা করে বাড়ী ফিরতে হয়। অন্যদিকে প্রস্রাব—পায়খানার বেগ চেপে রেখে অনেক নারী রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতি কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।
অনলাইনে একটি প্রতিবেদনে দেখলাম— ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মসজিদে নারীদের নামাজের সুব্যবস্থা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের সংবিধানের ৪১ ধারা অনুযায়ী নারী—পুরুষ সকলের ধর্ম অবলম্বন, পালন ও প্রচারের অধিকার রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মুসলিম নারীরা ধর্ম পালনে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এতে আরও বলা হয়, মুসলমানদের ধর্ম চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হলো— ‘মসজিদ’। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও মসজিদে নামাজ আদায়ের পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
রিটকারী আইনজীবী বলেছিলেন, সাংবিধানিক ও ধর্মীয়ভাবে নারীদের মসজিদে নামাজ আদায়ের পূর্ণ অধিকার থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের নারীরা এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মুসলিম নারীরা যাতে যথাযথভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন সে জন্য বাংলাদেশের সব মসজিদে নারীদের জন্য আলাদা নামাজের জায়গা, অজু করার জায়গা ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।
শহেরর মোড়ে মোড়ে, মহাসড়কের পাশে একটু পরপর আলিশান মসজিদ ভবন বিদ্যমান থাকলেও নারীদের জন্য আলাদা বাথরুম, অজুর স্থান আর নামাজের বিষয় নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। মসজিদে নারীদের নামাজ আদায় নিয়ে মাসআলাগত বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু আলাদা বাথরুম, অজুর স্থান, নামাজঘর নির্মাণের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। নারীদের জন্য এভাবে একেবারেই না ভাবাটা খুবই দুঃখজনক।
লেখক: শিক্ষক, সভাপতি- ইসলামী তরুণ সংঘ
হাআমা/