|| মুহাম্মাদ শোয়াইব আস-সফাদী ||
গণমাধ্যম সমাজের শক্তিশালী মাধ্যম। এটি কেবল খবর জানায় না, বরং একটি জাতির ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিচালিত করতেও ভূমিকা রাখে। এই শক্তিকে অবহেলা করা বা উপেক্ষা করা কোনোভাবেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের গণমাধ্যমে সীমিত উপস্থিতি এবং নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা সেই অবহেলারই একটি প্রতিফলন।
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের উচিত নিজেদের অভিজ্ঞতা ও জীবনের গল্পগুলো সমাজের সামনে তুলে ধরা। তাদেরকে লেখতে বললেই মাদরাসার শতবর্ষী ইতিহাস, শর্ষিণার টুপির ঐতিহ্য, মকতবের কারুকাজ—এসব নিয়ে লিখতে আগ্রহ ফিল করে। এদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, দেশের নিরাপত্তা ও কূটনীতি নিয়ে তারা লিখতে আগ্রহ ফিল করে না। এগুলো নিয়ে লেখা শুধু আমাদের পরিচিতিকে বিস্তৃত করবে না, বরং সমাজের অন্য অংশের মানুষের কাছে মাদরাসার জীবন-যাত্রার গভীরতা তুলে ধরতে সাহায্য করবে।
এখনো পর্যন্ত মাদরাসার শিক্ষার্থীরা মূলধারার পত্রিকার ইসলামি পাতাতেই সীমাবদ্ধ। অথচ সমাজের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, শিক্ষা-সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলার মতো দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তাদের রয়েছে। এ ক্ষেত্রে লেখার জন্য শুধু সাহস আর উদ্যোগ প্রয়োজন। শাপলা চত্বরের মতো ঘটনাগুলো নিয়ে ধারাবাহিক লেখালেখি না থাকা এ উদ্যোগের অভাবকেই সামনে আনে।
আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা জরুরি হলেও স্থানীয় সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলা আরও বেশি প্রয়োজন। তাত্ত্বিক আলোচনার পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জীবনের সংকট, সম্ভাবনা ও অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরাই তাদের আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলবে।
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূলধারার গণমাধ্যমে প্রবেশ করা এবং সেখানে নিজেদের কথা বলা। প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, বাংলা ট্রিবিউন বা অন্য যে কোনো পত্রিকায় লিখে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। এটি শুধু নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার মাধ্যমই হবে না, বরং গণমাধ্যমের শক্তিকে নিজেদের উন্নয়নে কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরি করবে।
এই দেশের মানুষ মাদরাসার শিক্ষার্থীদের শত্রু নয়। বরং সঠিকভাবে নিজেদের কথা তুলে ধরতে পারলে, এই সমাজ তাদের পাশে দাঁড়াবে। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টি বুঝতে হবে এবং নিজেদের কথা নিজে বলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। লেখালেখির মাধ্যমে এই সমাজে আরও বড় ভূমিকা রাখতে হবে।
সমাজ পরিবর্তনের জন্য এই মুহূর্তে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের নিজেদের গল্প ও অভিজ্ঞতাগুলো সার্বজনীন পরিসরে তুলে ধরা জরুরি। এটি শুধু তাদের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজের জন্যই নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে।
হাআমা/