মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪ ।। ১৮ আষাঢ় ১৪৩১ ।। ২৬ জিলহজ ১৪৪৫

শিরোনাম :
আলমডাঙ্গায় কবি আসাদ বিন হাফিজ স্মরণ-সন্ধ্যা 'দুর্নীতিবাজদের প্রতি কোনো সহানুভূতি দেখানো হবে না' প্রজন্মকে সঠিক পথে ধরে রাখতে আকাবির-মনীষী চর্চা অতীব প্রয়োজনীয় : মাওলানা আফেন্দী পদ্মাসেতু রক্ষণাবেক্ষণে হচ্ছে নতুন কোম্পানি সাত মাস পর আল-শিফার পরিচালককে মুক্তি দিল সন্ত্রাসী ইসরায়েল তিস্তা চুক্তি সমাধানের মূল প্রতিবন্ধকতা মমতা: কাদের কাতারে মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলিমীনের সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত  ‘দেওবন্দ আন্দোলন; ইতিহাস ঐতিহ্য অবদান’ ইতিবাচক সমালোচনাকে মোবারকবাদ : আনাম সাজিদ গর্ভে থাকা অবস্থায় সন্তানের আকিকা করা যাবে ? সৌদির কারাগারে আটক ৫ হাজার ৭শ বাংলাদেশি

যেসব বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে আইন হওয়া দরকার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন ||

এক.
পিতা-মাতাকে ওল্ডহোমে (বৃদ্ধাশ্রমে) পাঠানোর বিরুদ্ধে আইন হওয়া দরকার। যে পিতা-মাতা সারাজীবন আয়-উপার্জন করে সন্তানদের লালন-পালন করে, প্রতিষ্ঠিত করে, অসহায় বয়সে তাদেরকে সংসার থেকে বিতাড়িত করা বা ওল্ডহোমে পাঠানো চরম অকৃতজ্ঞা, চরম অমানবিকতা, চরম নৃশংসতা। এই ধারা বন্ধের জন্য অবশ্যই আইন হওয়া উচিত। কোন নারী যেন তার স্বামীকে এ কাজের জন্য বাধ্য বা উদ্বুদ্ধ করতে না পারে তার জন্যও আইনে ধারা/উপধারা থাকতে হবে। পিতা-মাতা প্রমুখ গুরুজনকে ওল্ডহোমে পাঠানোর এই ধারা বন্ধ না হয়ে ব্যাপকতা পেলে মানুষ সন্তানদের জন্য কিছু করে যাওয়ার ব্যাপারে নিঃস্পৃহ হয়ে উঠবে, সন্তানদের প্রতি হিতৈষণা হ্রাস পাবে। আর তেমন চেতনা দেশ ও সমাজের জন্য অকল্যাণ বৈ কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। তবে হ্যাঁ কোন সন্তান অনন্যোপায় অবস্থায় পিতা-মাতাকে ওল্ডহোমে পাঠালে সেটাকে ব্যতিক্রম রাখা যেতে পারে। তখন যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তা করার অবকাশ থাকবে। অবশ্য 'অনন্যোপায় অবস্থা' কথাটিও সুষ্ঠভাবে সংজ্ঞায়িত হতে হবে।

দুই.
খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধপত্রে নকল-ভেজালের বিরুদ্ধে কঠিন আইন হওয়া দরকার। কে না জানে আমাদের দেশে খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধপত্রে ভেজাল কতটা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে।  খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধপত্রে ভেজাল অসংখ্য রোগ-ব্যধি সৃষ্টির কারণ। আর রোগ-ব্যধি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে মানব শাস্থ্য ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি মানুষের কর্মস্পৃহা ও কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, যা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, উন্নয়নের গতিকে ব্যাহত করে। নকল-ভেজালের বিরুদ্ধে আইন করুন। জনগণকে সুস্থ্য অবস্থায় বাঁচতে দিন। নকল-ভেজালের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্সে চলে আসা উচিত। এটা জনশাস্থ্যের প্রশ্ন। জনগণের জীবন-মরণের প্রশ্ন।

খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধপত্রে নকল-ভেজালের বিরুদ্ধে কঠিন আইন প্রবর্তন করতে গেলে খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ পর্দার অন্তরালে থেকে উল্টো কলকাঠি নাড়ে কি না সে বিষয়টাও খেয়ালে রাখতে হবে।

খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধপত্রে নকল-ভেজালের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন কিছু থাকলেও তা যে এই দুই অঙ্গনের নকল ভেজাল প্রতিরোধে যথেষ্ট নয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নকল ভেজালের বিরাজমান দৌরাত্মই তার প্রমাণ।

তিন.
কোনোভাবেই যেন বিদেশে অর্থ পাচার হতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠিন ও কার্যকর ব্যবস্থাসম্বলিত আইন প্রণয়ন অতি অবশ্যই জরূরী। দেশটাকে অন্তসারশূণ্য করে দিয়ে দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ যেভাবে বিদেশে পাচার করে দেয়া হচ্ছে তাতে এই দেশ কখনোই উঠতে পারবে না, দেশ দিন দিন আরও কপর্দকহীন হবে, আরও রসাতলে যাবে। যারা দিবানিশি দেশের উন্নয়নের বক্তৃতা ভাষণ দিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন তাদেরও দেখা যায় অর্থ পাচার ইস্যুতে নীরব থাকেন। কিন্তু কেন? এই কেন-এর উত্তর অনেকেই বোঝেন। যাহোক দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ধারাকে অব্যাহত রাখার স্বার্থে বিদেশে অর্থ পাচার রোধকল্পে ও বিদেশী ব্যাংকে একাউন্ট খোলার বিষয়ে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ হওয়া দরকার। কেউ কোনোভাবে অর্থ পাচার করলে তা ফিরিয়ে আনার বিকল্প ব্যবস্থা রেখে আইন হতে হবে।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন, তেমনি নৈতিক, মানবিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিক চিন্তা থেকেও উপরোক্ত বিষয়গুলোর ব্যাপারে আইন হওয়া অপরিহার্য। আমরা দেশের আইন মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এ ব্যাপারে আশু উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। বিশেষভাবে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তিনি আন্তরিক হলে বিষয়টি সহজ, যা সকলের কাছেই বোধগম্য।

চার.
সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লাটফর্মে এমনকি প্রিন্ট মিডিয়াতেও এক ধরনের পেশাদার লোক জাদুটোনা, বান মারা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষে মানুষে বিচ্ছেদ ঘটানো, এমনকি শত্রুকে ধ্বংস করতে পারার মত সক্ষমতা থাকার কথা সম্বলিত বিজ্ঞাপন ছাড়ছে। এবং বাস্তবেও আমরা বহু মানুষকে এ জাতীয় নানান রকমের অস্বাভাবিক জটিলতায় আক্রান্ত হতে দেখছি। যারা মানুষকে ধ্বংস করতে পারার বিজ্ঞাপন ছাড়ছে, তারা প্রকৃতপক্ষে খুনের পেশায় জড়িত বলে স্বীকারোক্তি দিচ্ছে। বলা যায় তারা স্বঘোষিত খুনী। অতএব এরূপ লোকদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। এদের বিরুদ্ধে আইন হওয়া দরকার।

পাঁচ.
ফেসবুক, ইউটিউব প্রভৃতি সোশ্যাল মিডিয়ায় নানান রকম চটকদার ওষুধের বিজ্ঞাপন ছাড়া হচ্ছে। জটিল জটিল রোগের ওষুধ আবিষ্কার হওয়ার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপন ও পোস্টগুলোর কমেন্ট থেকে বহু মানুষের প্রতারিত হওয়ার কথাও জানা যাচ্ছে। এ ব্যাপারেও আইন থাকা দরকার। উপযুক্ত আইনের মাধ্যমে এ ধরনের প্রতারণামূলক প্রচারণার পথকে রুদ্ধ করে দেওয়া দরকার।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ