|| কাউসার লাবীব ||
অর্থ-সম্পদ থাকলেই নয়, মুসলমানদের মাঝে যারা সৌভাগ্যবান একমাত্র তারাই পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে ‘লাব্বাইক’ ধ্বনি তোলার সুযোগ পান। হজ-ওমরা করতে পারেন। আর হজে গিয়ে মৃত্যু; তাতো পরম পাওয়া। এই সৌভাগ্য কি আর সবার ভাগ্যে জোটে!
হজের সফরে মক্কায় মৃত্যুবরণকারীদের সাধারণত কাবা শরিফের সন্নিকটে জান্নাতুল মুয়াল্লাতে আর যারা মদিনায় মৃত্যুবরণকারীদের মসজিদে নববি সংলগ্ন জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়। এ দুই কবরস্থানে শেষ নিদ্রায় শায়িতরা কতই না সৌভাগ্যবান! কারণ, এখানে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তান, স্ত্রীসহ অসংখ্য সাহাবায়ে কেরাম শুয়ে আছেন।
তাছাড়া হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশ্যে বের হলো, অতঃপর মৃত্যুবরণ করল, কেয়ামত পর্যন্ত তার হজের সওয়াব লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি ওমরার উদ্দেশ্যে বের হলো, আর সে অবস্থায় তার মৃত্যু হলো, কেয়ামত পর্যন্ত তার জন্য ওমরার সওয়াব, লেখা হবে।’ -মুসনাদে আবু ইয়ালা: ৬৩৫৭
যার মৃত্যু যেখানে লেখা আছে, সেখানেই হবে। এ বছর তীব্র গরম, পানি সঙ্কট ও নানা কারণে পবিত্র হজের সময় সহস্রাধিক হাজি মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রতি বছরই কমবেশি হাজি ইন্তেকাল করেন।
প্রতি বছরই কীভাবে আরো সুন্দরভাবে, সুষ্ঠুভাবে হাজিদের হজের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়, কীভাবে এই হজযাত্রাকে আরো সহজ করা যায়; তা নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা হতে পারে। নানা প্রস্তাব সামনে আসতে পারে। সৌদি সরকারকে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই মৃত্যুর কারণে কোনোভাবেই পবিত্র হজকে প্রশ্নবিদ্ধ করা কোনো ‘সুস্থ মানুষের কাজ’ হতে পারে না। কেননা এটা মুসলিমদের আবেগের জায়গা, ভালোবাসার জায়গা, শ্রদ্ধার জায়গা।
ইসলাম, মুসলমান ও মুসলমানদের ধর্মীয় ইস্যুতে বিতর্কিত, সমালোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের গাত্রদাহ নতুন কিছু নয়। এ বছর হজে সহস্রাধিক হাজির মৃত্যু নিয়েও তার গাত্রদাহের শেষ নেই।
২২ জুন শনিবার নির্বাসিত, বিতর্কিত এই লেখিকা তার ফেসবুকে লিখেন, ‘বাংলাদেশি হজ্বযাত্রী এ বছর ৩৫ জন মরেছে। কিন্তু সর্বমোট এবারের হজ্বে মরেছে ১০০০ এর ওপর। কারণটা অতি গরম আর পানির অভাব। হজ্ব এখন অনেকটা মৃত্যুফাঁদের মতো হয়ে গেছে। হজ্ব করতে গেলে হিটস্ট্রোকে মরবে, লোকের পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে পিঁপড়ের মতো মরবে। সৌদি আরব ধনী দেশ হয়েও হজ্বযাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সক্ষম নয়। অথবা মিশকিনদের নিরাপত্তা দিতে তাদের ইচ্ছে নেই। সৌদি আরব জানে, নিরাপত্তার পেছনে সময় এবং টাকা খরচ না করলেও দুনিয়ার ধর্মান্ধগুলো হজ্ব করতে যাবে। হজ্ব ব্যবসা তাই চালু থাকবে। মানুষের অপঘাতে মৃত্যুও তাই চালু থাকবে।’
এর আগে ১৯ জুন বিতর্কিত এই লেখিকা লিখেন, ‘মক্কার তাপমাত্রা ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই গরমে ৫৫০ জন হজ্বযাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। সেই বাচ্চাটির প্রাণও গেছে, যাকে দিয়ে কাবা প্রদক্ষিণ করাচ্ছিল তার বাবা মা। অনেক মুসলমান হজ্বের সময় মরতে চান। তাঁরা মনে করেন এই মৃত্যু পবিত্র মৃত্যু। এই পবিত্র মৃত্যু তাঁদের বেহেস্তের টিকিট দেবে । একবার তো শয়তানকে পাথর ছুড়ে মারার সময় মানুষের পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে মারা যান আড়াই হাজার হজ্বযাত্রী। আল্লাহ তাঁর ভক্তদের বিপদে সাহায্য করার বদলে উপেক্ষা করেন। বাঁচাবার বদলে মারেন। ভাগ্যিস আল্লাহর ভক্ত হইনি।’
সমালোচিত এই লেখিকার ঔদ্ধত্যপূর্ণ এই লেখায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তার এই লেখায় ব্যথিত হয়েছেন মুসলমানরা। বিতর্কিত এই লেখিকা হয়তো জানেনা, ‘হাজিদের এই মৃত্যু তাদের পরিবার, দেশ ও প্রিয়জনদের সাময়িক ব্যথিত করলেও মৃতদের জন্য রয়েছে পরম সৌভাগ্যের সোপান।
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমরা হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। সে সময় ইহরাম অবস্থায় এক ব্যক্তি হঠাৎ উটের পিঠ থেকে পড়ে ঘাড় ভেঙে মারা যায়। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা গরম পানিতে কুল গাছের পাতা দিয়ে তাকে গোসল দাও এবং তাঁর ইহরামের কাপড় দু’টি দিয়ে কাফন দাও। তবে তার শরীরে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা ঢাকবে না। কেননা কেয়ামতের দিন তাকে (ইহরামকারী মৃতব্যক্তিকে) তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় ওঠানো হবে। -বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ
কেএল/