|| নাজমুল হুদা মজনু ||
আল্লাহর হুকুম ছাড়া একটি পাতাও ঝরে না; এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। গরম-ঠাণ্ডা, শীত-গ্রীষ্ম ও অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার নির্দেশেই ঘটে, এ কথা বিশ্বাস করা ঈমানের অঙ্গ।
কুরআন মাজিদে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন-
কোনাে জিনিস এমন নেই যার ভাণ্ডার আমার হাতে নেই এবং সুনির্দিষ্ট একটি পরিমাণ ছাড়া আমি তা নাজিল করি না।
আমিই বৃষ্টি-গর্ভ বায়ু প্রেরণ করি, তারপর আমিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, অতঃপর আমিই তােমাদের তা পান করাই, তােমরা নিজেরা তাে তার এমন কোনাে ভাণ্ডার জমা করে রাখোনি (যে, সেখান থেকে এসব সররাহ আসছে)। (আল-হিজর-২১-২২)
আনাবৃষ্টির বৈজ্ঞানিক কারণ হচ্ছে—
মানুষের কার্যকলাপ সরাসরি, যেমন অতিরিক্ত কৃষিকাজ, অত্যধিক সেচ, বন উজাড়, এবং ক্ষয় যথা বিরূপভাবে পানি ধারণ এবং ধরে রাখার ক্ষমতা প্রভাবিত হওয়াও খরার অন্যতম কারণ।
বিজ্ঞানও স্বীকার করে যে, দুর্যোগ দুর্বিপাক মানুষের আচরণগত কারণেই হয়ে থাকে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দাদের সতর্ক করার জন্য অনেকসময় আজাব ও গজব দিয়ে থাকেন। যেন তারা অন্যায় ও গর্হিত কাজ থেকে ফিরে আসে।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ জাল্লা শানুহু বলেন-
মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে স্থলে (সর্বত্র আজ) বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে, (মূলত) আল্লাহ তায়ালা তাদের কতিপয় কাজকর্মের জন্য তাদের শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাতে চান, সম্ভবত তারা (সেসব কাজ থেকে) ফিরে আসবে। (আর-রূম-৪১)
মানুষ শয়তানের ধোঁকা ও প্রবৃত্তির প্ররোচনায় অনেকসময় অতিরিক্ত অহংকারী হয়ে যায়। আর আল্লাহ তায়ালা তাকে সতর্কতামূলক সংকেত দিয়ে রক্ষা করতে চান। সেই সংকেত হচ্ছে কিছু বালা মুসিবত। যারা বুদ্ধিমান তারা এ থেকে শিক্ষা লাভ করে আল্লাহর অশেষ দয়া পেয়ে থাকে।
একটা কথা প্রচলিত আছে—
'পানির অপর নাম জীবন'।আর বৃষ্টির প্রধান উপাদান হলো পানি। পানি যে কতটা জরুরি ও প্রয়োজনীয় উপরিউক্ত প্রবাদ বাক্যে এ কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। আল্লাহর এই বিশেষ নেয়ামতের কথা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর কালাম কুরআন মাজিদে উল্লেখ করেছেন।
(হে নবী,) তুমি (এদের) জিজ্ঞেস করো, তােমরা কি ভেবে দেখেছাে, তোমাদের (জমিনের বুকে অবস্থিত) পানি যদি কখনাে উধাও হয়ে যায়, তাহলে কে তােমাদের জন্য এ (পানি) প্রবাহধারা পুনরায় বের করে আনবে?(আল-মুলক-৩০)
এ কথা ধ্রুব সত্য যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাওবাহ-ইস্তেগফার ও দোয়ার উছিলায় গুনাহগার বান্দাকে ক্ষমা করে দেন এবং নেয়ামত বাড়িয়ে দেন।
কুরআন মাজিদে বর্ণিত কাহিনী থেকে জানা যায়,
নূহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃষ্টির প্রত্যাশায় আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করেছিলেন। অতঃপর তার দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেছেন এবং অঝোর ধারায় বৃষ্টি দান করেছিলেন।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন-
এরপর আমি (তার ডাকে সাড়া দিলাম এবং) প্রবল বৃষ্টির পানি বর্ষণের জন্য আসমানের দ্বারসমূহ খুলে দিলাম, ভূমির স্তর (বিদীর্ণ করে তাকে পানির) প্রচণ্ড প্রস্রবণে পরিণত করলাম, অতঃপর (আসমান ও জমিনের) পানি এক জায়গায় মিলিত হলাে এমন একটি কাজের জন্য, যা আগে থেকেই ঠিক করে রাখা হয়েছিল।(আল-ক্বামার-১১-১২)
বৃষ্টির জন্য দোয়া করার ব্যাপারে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ ইবনে আসিম রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদগাহে গেলেন, বৃষ্টির জন্য দোয়া করলেন, কেবলার দিকে মুখ করলেন, চাদর পাল্টালেন এবং দুই রাকাত সালাত আদায় করলেন। (মুসলিম ১৯৪৪)
এ ছাড়া সুনানে আবু দাউদের একটি হাদিসে বৃষ্টির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়ার একটি চমৎকার বর্ণনা রয়েছে—
'হে আল্লাহ! তুমিই একমাত্র মাবুদ, তুমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। তুমি ধনী, আমরা গরিব। আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করো এবং আমাদের জন্য যা অবতীর্ণ করো, তা আমাদের জন্য শান্তি ও কল্যাণময় করো।’ অতঃপর আল্লাহর হুকুমে বৃষ্টি বর্ষণ হতে শুরু করে। বৃষ্টি থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষের ছোটাছুটি দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইাহি ওয়া সাল্লাম হেসে ফেলেন।
লেখক : আলোচক ও সাংবাদিক
এনএ/