রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ঢাকায় আগত নতুন ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বিশেষ পরামর্শ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| হাবীবুল্লাহ সিরাজ ||

আপনি গ্রামীণ পরিবেশ থেকে এসেছেন, এবারই প্রথম এসেছেন। দাখেলাও পেয়েছেন। আগে কখনো স্থায়ীভাবে ঢাকাতে থাকা হয়নি। ঢাকার জীবনযাত্রা ও জীবনমান সম্পর্কে আপনি অবগত নন। তাই আপনাকে একটু সতর্ক সচেতন ও হুশিয়ার থাকতে হবে। অনেক বিষয় আছে, যা না জানার কারণে কখনও লজ্জিত কখনও অপমানিত হতে হবে। যেমন বাসে উঠে মহিলা সিটে বসে গেলেন। কতক্ষণ বাদে হেলপার এসে আপনাকে উঠিয়ে দিল। মহিলা ও অন্যান্য যাত্রীরা হাসাহাসি করল। ফলে আপনাকে ভাবনায় ফেলে দিবে। ঢাকা ছাড়ার জন্য পীড়া দিবে।

★প্রথমত মাদরাসার পরিবেশ পরিস্থিতি; এখানকার অধিকাংশ মাদরাসার আয়তক্ষেত্রে সঙ্কীর্ণ সরু চাপাচাপা রুম, তলাতলা বাসস্থান। এক রুম বিশিষ্ট বিল্ডিং সাততলা/আটতলা হয়ে আকাশমুখী কিংবা ভাড়া বাড়ী; যা চলাফেরার জন্য খুবই কষ্টকর অসহ্যকর। এখানে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে।

★ঢাকার আরেকটা সমস্যা হলো খাবার বিষয়ক:

এখানে সুপেয় পানি পাবেন না, যা পাবেন তাতে থাকবে ময়লা, কাদা, কাপড়ের টুকরা ইত্যাদি। এমনকি মাঝে মধ্যে এমন দুর্গন্ধযুক্ত পানি পাবেন, যা পান করার অযোগ্যই শুধু নয় সর্বকাজে পরিত্যক্ত। এখানে আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে। একথাও শুনে রাখুন মাঝে মধ্যে ৪/৫ ঘণ্টা এমনকি ১/২দিনই পানি না থাকতে পারে। প্রস্তুত থাকবেন।

মোটকথা পানির যে অসুবিধার বিষয়টি তা আপনাকে মেনে নিতে হবে।  ঢাকা অবস্থানের ক্ষুদ্র জীবনে অনেক তালিবে ইলমকে দেখা যায় শুধু পানি-অসুবিধার কারণে ঢাকা ছেড়ে দিয়েছে। তবে সব মাদরাসায়, সব এলাকায় উল্লিখিত অসুবিধাগুলো নেই। ঢাকার বড় বড় মাদরাসাগুলোতে আলহামদুলিল্লাহ পানির অসুবিধাগুলো নেই। নিজস্ব পাম্প দ্বারা পানির ব্যবস্থা রয়েছে।

★এবার খাবার নিয়ে দুয়েকটি কথা ; সব মাদরাসার খাবার মান সমান নয়। আপনি হয়তো নিজের বাড়ীতে খেয়ে লেখাপড়া করেছেন বা এলাকায় লজিং কিংবা বোর্ডিং থেকেছেন। সুস্বাদু খাবার ও কয়েক রকমের তরকারি পেয়েছেন কিন্তু ঢাকাতে আপনি মাদরাসার বোর্ডিংগুলোতে হরেক রকম তরকারি পাবেন না। একটি তরকারি সাথে ডাল। এগুলোতেও আবার মাঝে মধ্যে অসুবিধা হয়। তবে হ্যাঁ, এখন সকল মাদরাসাগুলোতেই ভালো খাবারদাবারের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এই ভালোটা আপনার বাড়ী কিংবা গাঁয়ের মাদরাসার মতো নয়।

★দ্বিতীয়ত এখানে বড় মাদরাসা হলে উস্তাদদের নাগাল পাবেন না, উস্তাদ আসবে ঘণ্টা করিয়ে রুমে কিংবা তার নিজের আবাস্থলে চলে যাবে। নিজের তাকাযাতেই হুজুরকে খোঁজে নিতে হবে। প্রথম নিজেকে অনুপোযোগী মনে হবে। দেখবেন- সামনের কাতারের ছাত্ররা উস্তাদকে ইশকাল করছে উস্তাদও তার আজিব উত্তর দিচ্ছেন। আপনি হতবাক হয়ে যাবেন। নিজেকে মনে হবে ঢাকাতে পড়ার যোগ্য নয়। অথচ গ্রামের ওই মাদরাসায় আপনিই ছিলেন ফাস্টবয়। এখানে এসে দেখবেন মুতালার সব কিতাব আরবি উর্দু। অথচ আপনি বাংলা ছাড়া আরবি শরাহ উর্দূ শরাহ যে আছে তা জানতেনই না। তবে হ্যাঁ, এর বিপরীত দৃশ্যও দেখা যাবে। কিছুই জানে না কিছুই বুঝো না, সেই ছাত্রও দম্ভভরে চলাফেরা ও ক্লাস করছে।

 ★তৃতীয়ত যে বিষয়, তা হলো বাহিরের চলাফেরা ও লেনদেন। রাজধানী ঢাকার চলাফেরা হতে হয় সর্তক ও সাবধানী। এখানে চারদিকে শুধু প্রতারণা আর প্রতারণা। প্রতারণার যে সব কৌশল আছে যা আপনি ভাবতেও পারবেন না। সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলো কিংবা সাহায্য চাইলো- এতেও প্রতারণা। শান্ত পরিবেশ হঠাৎ দেখবেন গুলাগুলি কিংবা বোমার শব্দে কিয়ামতসম।

 ★চতুর্থত ক্রয়-বিক্রয়ে পুরাতন সাথি ছাড়া বাইরে যাবেনই না। এখানে ক্রয় ক্ষেত্রে যে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে, তা একমাত্র পুরাতন ও ভুক্তভোগীরাই জানে। আপনি একা যদি যান যে কাণ্ড ঘটবে তাহলো- আপনি যা কিনবেন তার আসল মূল্য যদি হয় ২০০/৩০০ টাকা। আপনার কাছে চাইবে ১২০০/১৩০০ টাকা। তখন আপনি চক্ষুলজ্জার জন্য হলেও কমপক্ষে বলবেন ৮০০ কিংবা ৬০০ টাকা। দোকানী দিতে চাইবে না। আপনি একটু বাড়াবেন কিংবা চলে আসবেন- দোকানদার ডাকবে; বলবে ভাই লাভ হয় না। তারপরও আপনি বলছেন তাই দিচ্ছি। যদি আপনি পুরাতন সাথি ভাইকে নিয়ে যেতেন; তাহলে আপনি যে ঠগা খেয়েছেন তা হতো না। এরকম আরো হাজারো বিষয় আছে; আপনি থাকতে থাকতে কেটে যাবে। পরিবেশ আপনার হবে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের জন্য সহায়ক পরিবেশ, পরিস্থিতির ব্যবস্থা করে দিন।

লেখক: শিক্ষাবিদ আলেম ও লেখক।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ