রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ট্রান্সজেন্ডার থিওরি: মানুষের লজ্জা, রুচি, বুদ্ধি সব কি নিঃশেষ হয়ে গেল!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন ||

ট্রান্সজেন্ডার থিওরি: মানুষের লজ্জা, রুচি, বুদ্ধি সব কি নিঃশেষ হয়ে গেল?
      কিছু পশ্চিমা দেশের লোকজনের হায়া লজ্জা তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। তাদের রুচিও অনেক আগেই বিকৃত হয়ে গেছে। তারা রাস্তাঘাটে জনসমক্ষে উলঙ্গ হয়ে নারী‐পুরষ উপগত হওয়ার মাধ্যমে বেহায়া বেশরম হওয়ার পরিচয় তো অনেক আগ থেকেই দিয়ে আসছে। সমকামিতাকে বৈধতা দিয়ে তারা চরম রুচি-বিকৃতির পরিচয়ও দিয়ে আসছে। আর এখন ট্রান্সজেন্ডারের থিওরি আবিষ্কার করে নির্বুদ্ধিতা ও বালখিল্যতার পরিচয় দিচ্ছে।
        সমকামিতায় হয়টা কী? গুর মধ্যে ইয়ে প্রবেশ করানো, কিংবা মুখের মধ্যে ইয়ে স্খালন করা। এগুলো বলতেও তো শরম লাগে। চিন্তা করতেও তো রুচিতে বাধে। এগুলো চরম রুচি-বিকৃতি বৈকি! যাদের রুচি সম্পূর্ণ-ই বিকৃত হয়ে গেছে তারা এটাকে রুচিবিকৃতি না বললে কী এসে যায়? তাদের রুচিবোধই তো নিঃশেষ হয়ে গেছে। লজ্জার মাথাটাও তারা মুড়ে খেয়ে ফেলেছে। হায়ান-জানোয়ারেরও সমকামিতায় রুচি হয় না। সমকামিতার প্রবক্তা এই মানুষগুলো হায়ান জানোয়ারের চেয়েও বিকৃত রুচির পরিচয় দিচ্ছে। হায়ান-জানোয়ারের চেয়েও তাদের রুচির অধঃপতন ঘটেছে। আমাদের মত মুসলিম দেশের জনগণের কারও দ্বারা শয়তানের ধোঁকায় বা সাময়িক বিকৃত তাড়নায় কখনও সমকামিতা হয়ে গেলেও তা গোপন রাখে এবং সে কারণে অনুতপ্ত থাকে। কোনোভাবেই তার বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করে না। বুঝা যায় তারা অপরাধ করলেও হায়া লজ্জা অবশিষ্ট আছে, রুচি একেবারেই মূল থেকে বিকৃত হয়ে যায়নি। কিন্তু ইদানিং পাশ্চাত্যের লোকদের মত আমাদের দেশেরও কিছু তথাকথিত শিক্ষিত লোক প্রকাশ্যে সমকামিতাকে প্রমোট করছে। এই শিক্ষিত নামধারীরা তাদের রুচি বিকৃতি ও হায়া লজ্জা নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার প্রমাণ দিচ্ছে। সেই সঙ্গে সমাজকেও তারা হায়া লজ্জাহীন ও বিকৃত রুচির বলি বানাতে চাচ্ছে। তাদের অবস্থা যেন- আমরা তো ডুবেছি, সকলকে নিয়েই ডুববো! 
      ট্রান্সজেন্ডার থিওরি-এর পক্ষে তারা কথা বলছে। মূলত এটা সমকামিতাকে নিষ্কণ্টক করারই অপচেষ্টা। একটা শব্দের বেড়াজালে বদ মতলব সিদ্ধির অপকৌশল। 
     সোজাসাপ্টা কথায় ট্রান্সজেন্ডার (Transgender) হল ইচ্ছেমত জেন্ডার তথা লিঙ্গ ট্রান্সফারের (স্থানান্তরের) দাবি করা। জন্মগতভাবে কেউ পুরুষ বা নারী যে লিঙ্গেই চিহ্নিত ও নিবন্ধিত হয়ে থাকুক না কেন, মনে চাইলে সে ভিন্ন লিঙ্গের পরিচয় দিয়ে সেভাবে চর্চা করতে পারবে। এভাবে পুরুষ হয়ে যাবে ট্রান্স নারী আর নারী হয়ে যাবে ট্রান্স পুরুষ।
          ট্রান্সজেন্ডার থিওরি সমকামিতার পথকেই নিষ্কণ্টক করতে চাওয়ার প্রয়াস। এতে পুরুষ নারী আখ্যায়িত হয়ে আরেক পুরুষের সঙ্গে বিয়ে বসার স্বীকৃতি পেয়ে নিষ্কণ্টকভাবে সমকামিতা চালিয়ে যেতে পারবে।
         ট্রান্সজেন্ডার থিওরি অবাধ যেনার পথকেও নিষ্কণ্টক করতে চাওয়ার প্রয়াস। এতে পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও নারী আখ্যায়িত হতে পারলে নারীর হোস্টেলসহ অন্যান্য স্থানে নারীর সঙ্গে একসাথে থেকে নিষ্কণ্টকভাবে যেনা চালিয়ে যাওয়া যাবে। নারীরাও পুরুষের ভান ধরে অবাধে পুরুষদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পথ নিষ্কণ্টক করে নিতে পারবে।
    ট্রান্সজেন্ডার থিওরি হাস্যকর ছেলেমিপনাও বটে। এটা চরম নির্বুদ্ধিতাও বটে। কেউ একটা কিছু মনে করলেই যদি সেটাকে স্বীকৃতি দিতে হয়, তাহলে যে কেউ নিজেকে মন্ত্রী মিনিস্টার, জজ বারিস্টার, এমপি, এমডি ভাবলে তা মেনে নিতে হবে। এটা চরম হাস্যকর ছেলেমিপনা বৈকি? ছোট ছেলেমেয়েরা কৃত্রিম বাসন-কোসন ও পুতুল নিয়ে খেলা করার সময় যেমন এটাসেটাকে এটাসেটা মনে করে নেয় এবং তার সঙ্গে তেমন আচরণ করে। 
       কেউ একটা কিছু মনে করলেই যদি সেটাকে স্বীকৃতি দেওয়ার থিওরি মানতে হয়, তাহলে শিয়াল নিজেকে মুরগি ভাবলে সেটাকে স্বীকৃতি দিয়ে মুরগি সর্বনাশ করার পথ রচনা করে দিতে হবে। এটা চরম নির্বুদ্ধিতা বৈকি? এই থিওরি অনুসারে কেউ নিজেকে অন্যের সম্পদের মালিক মনে করে বসলে তার গাড়ি বাড়ি, মিল ফ্যাক্টরি, সহায়-সম্পত্তি সবকিছুর মালিক হিসেবে তাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এমনকি তার বউ ছেলেমেয়েও তার হয়ে যাবে। প্লেন, বাস মিনিবাস ইত্যাদি পরিবহনে জলজ্যান্ত একজন বড় মানুষ নিজেকে শিশু মনে করে অন্যের কোলে বসে পড়বে এই যুক্তিতে যে, আমি ট্রান্স শিশু। পাঁচ টাকার নোট দিয়ে বলবে এটা ট্রান্স পাঁচশ টাকা।  বালখিল্যতা আর কাকে বলে? এসব মেনে নিলে নির্বুদ্ধিতার বাকি থাকে কী? মেয়াদোত্তীর্ণ গাঁজা সেবন ছাড়া এমন নির্বুদ্ধিতার থিওরি আর কার মাথা থেকে বের হতে পারে? এই নির্বোধরা কি একদিন গু খাওয়ার পক্ষেও প্রমোট শুরু করবে এই বলে যে, এটা ট্রান্সখাদ্য? তাহলে মন্দ হবে না। পয়লাইন নিয়ে আমাদের আর পেরেশানি করতে হবে না!
      আসলে ট্রান্সজেন্ডার থিওরি-এর কুশীলবরা শুভঙ্করের ফাঁকি দেওয়ার মতলবে আছে। আমাদের মতো ধর্মপ্রাণ মানুষের দেশে সরাসরি সমকামিতা কথাটা গেলানো যাবে না বিধায় নয়-ছয় কথার ছদ্মাদবরণে ফাঁকি দিয়ে মতলব চালিয়ে যাওয়ার ধান্ধা করছে। কিন্তু শয়তান যে ছদ্মবেশেই আসুক না কেন সচেতন মু'মিনরা তাকে চিনে নিতে সক্ষম হয়।

লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস ও তাফসির বিভাগের প্রধান জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী বড় মাদ্রাসায়।

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ