শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪ ।। ২২ আষাঢ় ১৪৩১ ।। ৩০ জিলহজ ১৪৪৫

শিরোনাম :
এবার বেনজীরের ডুপ্লেক্স বাড়ি জব্দ বাংলাদেশ বোটানিক্যাল সোসাইটির সারা দেশে মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু প্রসঙ্গ একাধিক মাদরাসায় হাদিস পড়ানো, যা বললেন মুহাদ্দিস মাওলানা লিয়াকত আলী মহররমের চাঁদ দেখা যায়নি, পবিত্র আশুরা ১৭ জুলাই  ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টকে বিশ্বনেদের অভিনন্দন হুদাদুর্গাপুর ছাত্র সংগঠনের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন ‘আকাবিরদেরকে নিয়ে নেগেটিভ উপস্থাপনকারীরা ইসলামের কল্যাণকামী হতে পারে না’ আমি আপনাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম: ইরানের প্রেসিডেন্ট ৮ দিনেও সন্ধান মেলেনি মাদরাসা ছাত্র সোয়াইবের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সালামি'র সাহিত্য আড্ডা 

ইসলামে যে কারণে জাদুবিদ্যার চর্চা নিষিদ্ধ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

সুপ্রাচীনকাল থেকে পৃথিবীতে জাদুবিদ্যার চর্চা হয়ে আসছে। তবে মানব ইতিহাসে জাদুবিদ্যা কখনো সভ্যতা-সংস্কৃতির মূলধারার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি। জাদু মানুষের ভেতর আশা ও আস্থার পরিবর্তে ভয়ই বেশি সৃষ্টি করেছে। শরিয়তে জাদুবিদ্যার চর্চা নিষিদ্ধ।

ইসলাম জাদুচর্চাকারীদের জন্য ইহকাল ও পরকালে কঠোর শাস্তি ঘোষণা করেছে।

কুরআন ও হাদিসের ভাষ্য মতে, জাদুবিদ্যার মূল উৎস শয়তান ও দুষ্টু জিন। তারাই মানব সমাজে জাদুবিদ্যার প্রসার ঘটিয়েছিল। জাদুকরদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আরো এই যে কতিপয় মানুষ কতক জিনের শরণাপন্ন হতো, ফলে তারা জিনদের অহংকার বাড়িয়ে দিত।’ -সুরা জিন : ৬

হজরত আয়েশা রা. বলেন, লোকজন নবী কারিম সা.-কে জ্যোতিষদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করল (যারা তৎকালীন যুগে জাদুও চর্চা করত)। তিনি বললেন, তারা মূলত কিছুই নয়। তারা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসুল! কখনো কখনো তারা তো এমন কিছু কথাও বলে ফেলে যা সত্য হয়। এতে নবী কারিম সা. বললেন, এসব কথা সত্য। জিনরা এসব কথা প্রথম শোনে, (মনে রেখে) পরে এদের দোসরদের কানে মুরগির মতো করকর ধ্বনিতে নিক্ষেপ করে দেয়। এরপর এসব জ্যোতিষী সামান্য সত্যের সঙ্গে শত মিথ্যার মিশ্রণ ঘটায়। -সহিহ বোখারি : ৭৫৬১

আলেমরা বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন যে, জাদু শেখা, শেখানো এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রাখা হারাম। আল্লামা ইবনে কুদামা রহ. লেখেন, নিশ্চয়ই জাদু শেখা এবং তা শেখানো হারাম। এই বিষয়ে আলেমদের কোনো মতভিন্নতা নেই। -আল মুগনি : ১০/১০৬

ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ.-সহ বেশিরভাগ ইমামের মতে জাদুবিদ্যা চর্চা করা কুফরি। তারা নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা দলিল পেশ করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সোলায়মান কুফরি করেনি, কিন্তু শয়তানগুলো কুফরি করেছে। তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিয়েছে।’ -সুরা বাকারা : ১০২

কুরআন ও হাদিসে জাদুর ভয়াবহতা নানাভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এর কয়েকটি হলো-

জাদু ধ্বংসাত্মক কাজ : হজরত রাসুলুল্লাহ সা. জাদু থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তোমরা ধ্বংসাত্মক বিষয় পরিহার করো। তা হলো, আল্লাহর সঙ্গে শিরিক ও জাদু। -সহিহ বোখারি : ৫৭৬৪

জাদু কুফরি : নবী কারিম সা. জাদুকরের কাছে যাওয়া ও তার কথা সত্যায়ন করাকে কুফরি বলেছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোনো (জাদুকর) জ্যোতিষীর কাছে গেল এবং তার কথা সত্যায়ন করল, সে মুহাম্মদ সা.-এর প্রতি অবতীর্ণ বিষয়গুলো অস্বীকার করল। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ৬৩৯

মন্দ কাজে উদ্বুদ্ধ করে : জাদুবিদ্যা অর্জন করলে তা মানুষকে মন্দ কাজে উদ্বুদ্ধ করে। যেমন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের (হারুত-মারুত) উভয়ের কাছ থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যা বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে তা শিক্ষা করত, অথচ আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া তারা কারো কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারত না। তারা যা শিক্ষা করত তা তাদের ক্ষতিসাধন করত এবং কোনো উপকারে আসত না; আর তারা নিশ্চিতভাবে জানত যে ব্যক্তি তা ক্রয় করে পরকালে তার কোনো অংশ নেই। তা কত নিকৃষ্ট যার বিনিময়ে তারা স্বীয় আত্মাকে বিক্রি করেছে, যদি তারা জানত!’ -সুরা বাকারা : ১০২

দণ্ডনীয় অপরাধ : ইসলামের দৃষ্টিতে জাদু দণ্ডনীয় অপরাধ। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জাদুকরের শাস্তি হলো- তরবারির আঘাতে মৃত্যুদণ্ড। -সুনানে তিরমিজি : ১৪৬০

ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, জাদু যদি কুফরির পর্যায়ভুক্ত হয় তবে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। আর কুফরির চেয়ে নিম্নতর হলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না। -সুনানে তিরমিজি

আমল নষ্ট করে : জাদুর সঙ্গে সম্পৃক্ত আমল নিষ্ফল করে দেয়। হজরত রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, যে ব্যক্তি গণকের কাছে যাবে তার ৪০ দিনের আমল গ্রহণ করা হয় না। -সহিহ মুসলিম : ২২৩০

জাদু প্রকৃতপক্ষে অন্তঃসারশূন্য একটি বিষয়। যার প্রভাব সাময়িক। জাদু ও জাদুকরদের ব্যর্থতা অপরিহার্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা যা করেছে তা তো কেবল জাদুকরের কৌশল। জাদুকর যেখানেই আসুক সফল হবে না।’ -সুরা ত্বহা : ৬৯

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ