মাওলানা আব্দুল মাজীদ মামুন রাহমানী
বিভিন্ন মসজিদে দেখা যায়, দরূদ পাঠ বিষয়ক একটি ফজিলত পূর্ণ হাদিস লিখে টানিয়ে রাখা হয়। হাদিসটি হচ্ছে হজরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর নিজ স্থানে বসে ৮০ বার নিম্নোক্ত দরূদ শরিফটি পাঠ করবে তার ৮০ বছরের ( ছগিরা) গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে এবং ৮০ বছরের ইবাদাত-বন্দেগির সওয়াব লিখে দেয়া হবে।
দরূদ শরিফটি হচ্ছে =
أَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰی مُحَمَّدِ نِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ وَ عَلٰی آلِهِ وَ سَلِّمْ تَسْلِیْماً
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন্নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়ালা আলিহি ওয়া সাল্লিম তাসলিমা ।
অর্থ : হে আল্লাহ! দরুদ ও শান্তি বর্ষণ করুন উম্মি নবি মুহাম্মাদ সা. এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর। হাদিসটি ইবনে বাশকুয়াল রহ. “আল কাওলুল বাদি' ফিস সালাতি ওয়াস সালামি আলাল হাবিবিশ শাফি" এর ১৯৮- ১৯৯ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন।
তবে এর কোন আমলযোগ্য ভিত্তি (আসল) পাওয়া যায়না। অবশ্য জুমুআর পূর্ণ দিনের যে কোন সময় ৮০ বার দরূদ পড়লে ৮০ বছরের (ছগিরা) গুনাহ মাফ হওয়ার বিষয়টি কানযুল উম্মাল এর ২১৪৯ নং হাদিসে এবং আল- ফাতহুল কাবিরের ২/১৯৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।
তাছাড়া ইমাম সুয়ূতি রহ. নিজ গ্রন্থ জামিউল আহাদিসের ১৪/৬৮ নং পৃষ্ঠায় হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন আল্লামা মুনাবি রহ. বলেছেন হাদিসটি ইমাম আযদি রহ. কিতাবুদ্দুআফা গ্রন্থে এবং ইমাম দারাকুতনি রহ. আল-আফরাদ গ্রন্থে হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম দারাকুতনি রহ. বলেন বর্ণনাটি হাজ্জাজ ইবনে সিনান আলি ইবনে যায়েদ থেকে এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আর হাজ্জাজ ইবনে সিনান থেকেও সাকান ইবনে আবিস সাকান একাই বর্ণনা করেছেন। হাফেজ ইবনে হাজার রহ. এদের সকলকেই দুর্বল আখ্যায়িত করেছেন।
আবু নুআঈম রহ. হাদিসটিকে ভিন্ন একটি সনদে উল্লেখ করেছেন। হাফেজ ইবনে হাজার রহ. এই সনদটিকেও দুর্বল বলেছেন। জামিউল আহাদিস লিল ইমাম সুয়ূতি, ১৪/৬৯।
শায়েখ আলবানি রহ.ও হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন। সহিহ ওয়া যয়িফুল জামে' লিশ শায়েখ আলবানি, ৩/২৯২। মোটকথা হচ্ছে স্বস্থানে বসে পড়া, আসরের পরে পড়া ইত্যাদি শর্তযুক্ত না করে আমাদের আলোচ্য দরূদ শরিফটিও পড়ার অবকাশ রয়েছে।
ইনশাআল্লাহ, এর দ্বারা ৮০ বছরের ছগিরা গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তবে ৮o বছর ইবাদাত-বন্দেগির সওয়াব লাভের বিষয়টি প্রমাণিত নয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, বিন্নূরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, করাচি, পাকিস্তান।