কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারত যখন রণহুংকারে মুখর, তখন পাকিস্তানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের অন্যতম সামরিক পরাশক্তি চীন। ভারতের বিপরীতে চীনের এই স্পষ্ট সমর্থন শুধু কূটনৈতিক বার্তাই নয়, বরং সামরিক, রাজনৈতিক এবং আঞ্চলিক ভারসাম্যের এক বিস্ফোরক পরিবর্তনের সংকেত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, যদি এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে ভারতকে একাই শুধু পাকিস্তানের নয়, বরং চীনের ভয়ঙ্কর রণকৌশলেরও মোকাবিলা করতে হতে পারে। আর ভারতের যদি কোনো ভুল হিসাব হয়, তবে দক্ষিণ এশিয়ায় তার আধিপত্যের দিন হয়তো শেষের পথে এগিয়ে যেতে পারে।
২২ এপ্রিল, ভারতের দখলকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় কেঁপে ওঠে অঞ্চলটি। মুহূর্তে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উপমহাদেশের আবহাওয়া। ভারত সরকার সরাসরি পাকিস্তানকে হামলার জন্য দায়ী করে। জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা হুঁশিয়ারি দেয়। পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে ভারতের সিদ্ধান্ত তারা সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে। পাকিস্তান পাল্টা জবাবে শিমলা চুক্তি বাতিলের হুমকি দেয়। দুই প্রতিবেশী পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে যেন যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে।
ঠিক এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পাশে এসে দাঁড়ায় চীন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে ফোনালাপে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জানান, "সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ে চীন পুরোপুরি পাকিস্তানের পাশে থাকবে।" চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, "চীন ও পাকিস্তানের বন্ধুত্ব ইস্পাতের মতো দৃঢ়। পাকিস্তানের বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগ চীন সম্পূর্ণরূপে বোঝে এবং সমর্থন করে।"
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, চীনের সমর্থন শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নাও থাকতে পারে, এটি সামরিক সহায়তায়ও রূপ নিতে পারে।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইন্ডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, চীনের সক্রিয় সেনাসংখ্যা প্রায় ২০ লাখ, যেখানে ভারতের ১৪ লাখ ৪০ হাজার। চীনের সামরিক বাজেট ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভারতের বাজেট ৭৫ বিলিয়ন ডলার। শুধু সেনা সংখ্যা নয়, প্রযুক্তিগত দিক থেকেও চীন এগিয়ে: হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র, স্টেলথ প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান, উন্নত নৌবহর, এআই পরিচালিত ড্রোন, সাইবার যুদ্ধ সক্ষমতা এবং মহাকাশ প্রযুক্তিতে চীনের অবস্থান এখন বিশ্বের শীর্ষস্হানে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি যুদ্ধ বাধে, ভারতের জন্য লড়াই হবে অসম; শুধু পাকিস্তান নয়, বরং চীনেরও শক্তিশালী সামরিক প্রযুক্তির মুখোমুখি হতে হবে ভারতকে।
এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, "পাকিস্তান শান্তি চায়, তবে যদি আক্রমণ হয়, তাহলে পাল্টা জবাব দেয়া হবে।" চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইও দুই দেশের প্রতি সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যদি ভারত উত্তেজনা বাড়ায়, তাহলে চীন সরাসরি পাকিস্তানের কৌশলগত ঢাল হতে প্রস্তুত।
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান ও চীনের এই যুগল সমর্থন ভারতের জন্য এক নতুন দুঃস্বপ্নের সূচনা হতে পারে। যদি কূটনৈতিক দরজা বন্ধ হয়ে যায় এবং সংঘাত আরও বাড়ে, তবে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ভারতের দীর্ঘস্থায়ী আধিপত্যের ইতি ঘটতে পারে।
এনএইচ/