ভারতের কাশ্মিরের পহেলগামে মঙ্গলবার আতঙ্কিত পর্যটকদের ওপর গুলি চালাচ্ছিল দুই বন্দুকধারী। সে সময় একজন মানুষ নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে অন্যদের বাঁচানোর জন্য মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে যান। মানুষটির নাম সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ। বয়স মাত্র ২৮ বছর। তিনি পর্যটকদের ঘোড়ায় চড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।মঙ্গলবার নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার সময় তিনি কয়েকজন অমুসলিম পর্যটককে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান। তার এই আত্মত্যাগ তাকে সাহসিকতার প্রতীক করে তুলেছে।
হামলাকারীরা পর্যটকদের নিজেদের ধর্ম পরিচয় জিজ্ঞাসা করে নিশানা করছিল। ওই হামলায় ২৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। এটি সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীরের অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আদিল সারাদিন ঘোড়ায় করে পর্যটকদের বৈসারণ ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন। ওই জায়গাটিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ বলা হয়। হামলার সময় তিনি একটি পরিবারকে পথ দেখাচ্ছিলেন। তখন হঠাৎ করে গুলি শুরু হয়।
চোখের সামনে গুলি চলতে দেখে অনেকেই পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আদিল পালাননি। তিনি বরং এক সন্ত্রাসীর দিকে ছুটে যান এবং তার অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এই কিছু সেকেন্ডের সাহসী পদক্ষেপে পর্যটকরা পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান।
অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সন্ত্রাসীরা আদিলকে সেখানেই গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু তার সেই সাহসিকতা অনেক প্রাণ বাঁচিয়ে দেয়। এই ঘটনাটি এখন কাশ্মীর ও দেশের বাইরে মানুষের মনে দাগ কেটে দিয়েছে। এটি শুধু সাহসের গল্প নয়, এটি মানুষের ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে এক হওয়ার বার্তা।
আরেকজন ঘোড়ার চালক গুলাম নবি বলেন, ‘সে এক মুহূর্তও ভাবেনি। সে দেখল গুলি পর্যটকদের দিকে তাক করা, আর সঙ্গে সঙ্গেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। জীবন দিল, কিন্তু অপরিচিত কিছু মানুষকে বাঁচিয়ে দিল।’
ঘটনাস্থলেই মারা যান আদিল। কিন্তু তার এই মৃত্যু এমন কিছু মূল্যবোধকে সামনে নিয়ে আসে, যা কোনও গুলিতে মারা যায় না—সহানুভূতি, ঐক্য ও ঘৃণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস। তার মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যরা গভীর শোকগ্রস্ত। তারা এখন ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছেন।
এনএইচ/