শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫ ।। ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৪ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
মুসলিম সমাজের দুর্ভাগ্য অনুসারীদের নিয়ে হেফাজতের মহাসমাবেশে থাকবেন মাওলানা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী মদিনায় প্রথম বাংলাদেশি হাজির মৃত্যু আগামী সাত মাস বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : প্রেস সচিব হেফাজতের মহাসমাবেশে ছারছীনার পীরের সমর্থন মক্কায় বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির সতর্কতা, হজযাত্রীদের নিয়ে শঙ্কা হার্ভার্ডের ৯২ শতাংশ মুসলিম শিক্ষার্থী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন  যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু আলোচনা স্থগিত যারা পালিয়ে গেছে, তাদের এদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই: হাসনাত আবদুল্লাহ গাজায় কমপক্ষে ৩১ ফিলিস্তিনি শহীদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে ‘পরিস্থিতি বিপর্যয়কর’

গাজা ইস্যু: বাগ-বিতণ্ডায় পণ্ড ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার বৈঠক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

বাগ-বিতণ্ডায় পণ্ড হয়েছে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার বৈঠক। যুদ্ধের পর গাজার প্রশাসন কাদের হাতে থাকবে তার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। তবে কোনও সিদ্ধান্ত পৌঁছতে পারেনি ইসরায়েলি মন্ত্রীরা। বরং প্রচণ্ড দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বৈঠক। এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন কয়েকজন মন্ত্রী এবং সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

বৈঠকে উগ্র ডানপন্থী আইনপ্রণেতারা সেনাবাহিনীর নিজস্ব ভুলগুলো তদন্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে কটূক্তি করেন। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি কয়েকজন রাজনীতিবিদসহ উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদরা এই তর্ক-বিতর্ক ও বাগ-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। 

সেনাপ্রধান জেনারেল হারজি হালেভি ৭ অক্টোবর হামাসের অভিযান ঠেকাতে ব্যর্থতার বিষয়ে তদন্ত করার কথা বললে এই বিতণ্ডা শুরু হয়। উগ্র ডানপন্থীরা বলেন, যুদ্ধ চলার মধ্যে তদন্তের এই প্রস্তাব যুক্তিসঙ্গত নয়।
মন্ত্রিসভার এই বৈঠকের বাগ-বিতণ্ডা ও ঝগড়ার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের ভেতর প্রচণ্ড অনৈক্য এবং মতভেদের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

হিব্রু ভাষার কয়েকটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রায় তিন ঘণ্টা ব্যাপক বাক-বিতণ্ডার পর নেতানিয়াহু বৈঠক বাতিল করেন। যে সমস্ত মন্ত্রী ইসরায়েলের সেনাপ্রধানের সমর্থনে কথা বলেছেন নেতানিয়াহুর সমর্থকেরা তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েক ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হিব্রু ভাষার গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, যে কক্ষে বৈঠক হচ্ছিল তার বাইরে থেকেও এই বাক-বিতণ্ডের শব্দ শোনা গেছে। 

টাইমস অব ইসরায়েল বলছে, বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা সেখান থেকে বেরিয়ে যান। সংবাদ মাধ্যমটির ভাষ্য মতে, দৃশ্যত এসব সেনা কর্মকর্তার সাথে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে তার প্রতিবাদে তারা বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান।

গভীর রাতের ওই বৈঠকের সূত্র মতে, সেনাপ্রধান হালেভি সাবেক কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার সমন্বয়ে সামরিক বাহিনীর ৭ অক্টোবরের ব্যর্থতার বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতে বাধা সৃষ্টি করেছেন পরিবহনমন্ত্রী মিরি রেগেভ। তার সাথে যোগ দেন জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন জিভির, অর্থ মন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এবং আঞ্চলিক সমন্বয় বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড আমসালেম। তারা জেনারেল হালেভির কাছে এই তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ জানতে চান।

এর মধ্যে আমসালেম বলেন, “আপনি কেন এখন তদন্ত করতে চান? সামরিক বাহিনীর বহু লোক এখন যুদ্ধের ময়দানে। যুদ্ধ বিজয়ের জন্য তাদেরকে আপনি সেখানে ব্যস্ত না রেখে কেন তদন্ত করতে চাইছেন?”

সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শাউল মোফাজকে এই তদন্ত কমিটিতে যুক্ত করার বিষয়েও বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেকেই তীব্র আপত্তি প্রকাশ করেন। মিরি রেগেভ সেনাপ্রধানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি শাউল মোফাজকে নিযুক্ত করেছেন। আপনি পাগল নাকি?”

ইসরায়েলের যুদ্ধমন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট জেনারেল হালেভির সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। হালেভিকে উত্তেজিত করার জন্য মন্ত্রীদের তিরস্কার করেন ইয়োভ গ্যালান্ট। 

বৈঠকে দখলদার বাহিনীর প্রধান বলেন, “সামরিক বাহিনীর ব্যর্থতা নিয়ে তদন্ত করা হবে কিনা সেটি আমার বিষয়; এ নিয়ে আপনাদের মাথা ঘামানোর কিছু নেই।”

তিনি দাবি করেন, এই তদন্ত সামরিক বাহিনীর অতীত ভুলগুলো খুঁজে বের করতে সহায়তা করবে যাতে লেবানন সীমান্তের যুদ্ধে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়।

এ সময় যুদ্ধমন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট জেনারেল হালেভির বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেন, “সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা তদন্ত করার বিষয়ে যদি সেনাপ্রধান কোনও নির্দেশ দেন তাহলে তা নিয়ে আপনাদের কথা বলার কোনও সুযোগ নেই।”

এরপরই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়। এ সময় ইয়োভ গ্যালান্ট মিরি রেগেভকে উদ্দেশ করে বলেন, “মিরি, আমি আপনার জন্য কাজ করি না, আমাকে বলতে দিন। চিফ অব স্টাফ যা চান তিনি তা করতে পারেন।”

ইসারায়েলের রাজনৈতিক নেতারা ৭ অক্টোবরের ব্যর্থতার বিষয়ে কোনও তদন্ত করতে দিতে চান না। তারা বলছেন, হামাসকে নির্মূল করা এবং বন্দিদের মুক্ত করার পর সবকিছু হবে। কিন্তু ইসরায়েলিরা মনে করছেন, এই যুদ্ধ আগামী এক বছর কিংবা তার পরেও শেষ হবে না। তারা বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি অনিশ্চিত বলে মনে করছেন।

বৈঠকে এইরকম তীব্র বাকবিতণ্ডা ও চিৎকার চেঁচামেচির কারণে নেতানিয়াহু বৈঠক বন্ধ করে দেন। তিনি বলেন, পরে আবার বৈঠকে বসা যাবে। বৈঠকের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে কোনও কোনও মন্ত্রী ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা কান-কে বলেছেন, “এটি ছিল খুবই লজ্জাজনক বৈঠক।” তারা সেনা প্রধানকে অপমান করার জন্য কয়েকজন মন্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল

এনএ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ