আজ ২৬ এপ্রিল, শনিবার, রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে জমিয়তের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ কাউন্সিলে অংশগ্রহণ করেন। এই ঐতিহাসিক কাউন্সিলের সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের অভিভাবক আল্লামা শায়খ জিয়া উদ্দীন। বিদায়ের আবেগঘন মুহূর্তে কর্মীদের কাঁদিয়ে তিনি শেষবারের মতো সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
কাউন্সিল অধিবেশনে আল্লামা জিয়া উদ্দীনগুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন, যেখানে তিনি সংগঠনের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে মূল্যবান পরামর্শ প্রদান করেন। পাঠকের সুবিধার্থে তাঁর সম্পূর্ণ বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলো।
নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারীম। আম্মা বা'দ । জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে উপস্থিত জাতীয় নেতৃবৃন্দ, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কাউন্সিলরবৃন্দ, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিক বন্ধুগণ! আমি আপনাদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আজকের প্রোগ্রামে আপনাদের উপস্থিতি আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে বিমুগ্ধ ও কৃতার্থ করেছে।
মুহতারাম হাজিরীন,
ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্ম ও রাজনীতিতে জমিয়তের একটি উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। ১৯১৯ সাল থেকে অদ্যাবধি সুদীর্ঘ একশো ছয় বছর ধরে জমিয়ত পাক-ভারত উপমহাদেশের ধর্ম, রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে আসছে। উপমহাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও পটপরিবর্তনে জমিয়তের অংশগ্রহণ আছে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বশেষ চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে জমিয়ত প্রত্যক্ষভাবে অবদান রেখেছে। দ্বীন ইসলামের সংরক্ষণ, বাতিলপন্থীদের মোকাবেলা এবং ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশে জমিয়ত সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।দ্বীনী শিক্ষার বিস্তারে মক্তব ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা জমিয়তের স্থায়ী কর্মসূচির অংশ। ওয়াকিবহাল মহলের জানা আছে বাংলাদেশের শীর্ষ দুটি শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসীল আরাবিয়াহ ও আজাদ দ্বীনী এদারায়ে তা'লীম বাংলাদেশ জমিয়তের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, আল্লাহ'র জমিনে আল্লাহর নেজাম প্রতিষ্ঠা, দ্বীনে ইসলামের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং ইসলামবিরোধী সকল তৎপরতা রুখে দিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পুরো বাংলাদেশে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে জমিয়ত একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল। দেশের প্রতিটি জেলায় জমিয়তের কার্যক্রমের অগ্রগতি হচ্ছে। দেশের প্রতিনিধিত্বশীল আলেমদের অধিকাংশই জমিয়তের সাথে সম্পৃক্ত আছেন।
প্রিয় দেশবাসী,
জুলাই আগস্টের রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে এদেশের মানুষ আওয়ামী দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেয়েছে। জাতির ঘাড়ে চেপে বসা এই জগদ্দল পাথর সরাতে দেশের ছাত্রজনতাকে রাজপথে নিজেদের তপ্ত খুন ঢালতে হয়েছে। অসংখ্য মায়ের বুক খালি হয়েছে, অগণিত মানুষ পঙ্গু হয়েছে, অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। দেশের আপামর জনগণ, ছাত্রজনতা ও রাজনৈতিক দলসমূহের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে।
সম্প্রতি অতীব দুঃখের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি ২৪ এর পরাজিত শক্তি নানাধরণের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। কিছু অসাধু রাজনীতিবীদ পতিত স্বৈরাচারকে নানাভাবে রক্ষার চেষ্টায় লিপ্ত। কেউ আবার রাজনীতিতে তাদেরকে পুনর্বাসনের অপচেষ্টা করছেন। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের কিছু কার্যকলাপেও আমরা চিন্তিত, উদ্বিগ্ন। বিপ্লবের স্টেকহোল্ডার ও অংশীজনকে মায়নাস করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। স্বৈরাচারের সহযোগী বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পদে বসানো হচ্ছে এবং তাদের খাতির তোয়াজ করা হচ্ছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা বিপ্লবে সরাসরি অংশগ্রহণ করে, শহীদ হয়ে, আহত ও পঙ্গু হয়েও অবহেলার শিকার হচ্ছে। সর্বোপরি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিপ্লবের চেতনা অবহেলিত ও গৌণ হয়ে যাচ্ছে।
নির্বাচন নিয়েও নানা সংশয় ও সন্দেহ জন্ম নিয়েছে। সরকার দেশের অর্থনীতিতে কাঙ্খিত অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সক্ষম হচ্ছে না, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। আমরা পররাষ্ট্রনীতিতে সরকারকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে দেখছি না। বিশেষ করে পতিত স্বৈরাচারকে লালনকারী, আশ্রয় প্রশ্রয়দানকারী দেশের প্রতি সরকারের নমনীয় আচরণ আমাদেরকে ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন করছে। নারী কমিশনের দেশ ও ধর্মবিরোধী সুপারিশমালা আমাদেরকে ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে।
প্রিয় ভায়েরা,
রক্তাক্ত গণবিপ্লবের পর বিপ্লবের চেতনা রক্ষা করা হচ্ছে রাজনৈতিক দলসমূহের পবিত্র দায়িত্ব। যারা বিপ্লবকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করবে, জাতি তাঁদেরকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে। ছাত্র-জনতার রক্তের সিঁড়ি বেয়ে ক্ষমতায় আসা অন্তরবর্তীকালীন সরকার যেনো দেশ ও ধর্মের স্বার্থ ও জনগণের আকাঙ্খা বিরোধী কোনো বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নের ঠিকাদার না হয়, এ ব্যাপারে আমরা সরকারকে সতর্ক করছি।
প্রিয় উপস্থিতি,
আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে মুসলমানদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন চলছে। গণহারে মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনের গাজা, রাফাহ ও খান ইউনিসে মারাত্মকভাবে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল সেখানে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম গণহত্যা চালিয়েছে। দুঃখজনকভাবে বিশ্বের তথাকথিত মানবতার ঠিকাদাররা এসব দেখেও না দেখার ভাণ করছে। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম শাসকরা রহস্যজনকভাবে নিশ্চুপ রয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে আমরা জাতিসংঘ, ওয়াইসিসহ বিশ্বের সকল মানবাধিকার সংগঠনকে অহসায় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানাচ্ছি। অন্তরবর্তীকালীন সরকারের প্রধান, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে এ ব্যাপার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আহবান জানাচ্ছি।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে মুসলিম নির্যাতনের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ওয়াকফ আইন সংশোধনের মাধ্যমে ভারতের হিন্দুত্ববাদি সরকার মুসলমানদের শত শত বছরের সম্পত্তি কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছে। জঙ্গি নাটক সাজিয়ে ভূস্বর্গ কাশ্মিরকে আরেক গাজা বানানোর অপতৎপরতায় তারা লিপ্ত আছে। আমরা তাদের এহেন কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভারতের সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
প্রিয় উপস্থিতি,
পরিবর্তিত বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতি একটা সম্ভাবনা তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা দেশকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র করার প্রস্তাব করেছি। ইসলামি দলগুলোর প্রতি জনগণের আগ্রহ ও আস্থা অনেকটাই বেড়েছে। সমাজ ও রাজনীতিতে ইসলামি দলসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। আমরা মনে করছি ইসলামি দলগুলো যদি একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরম তৈরি করতে পারে, তাহলে আগামী নির্বাচনে আমরা একটি প্রভাবক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবো। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি আগামী নির্বাচনে আমরা প্রার্থীকেন্দ্রিক ঐক্যের একটি রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরতে পারবো।
প্রিয় নেতাকর্মী ভায়েরা,
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে জনসাধারণের মাঝে ইসলামি রাজনীতির প্রতি একটি ইতিবাচক আকাঙ্খা তৈরি হয়েছে। জনগণের এই আকাঙ্খাকে আপনারা বাস্তবে রূপ দিতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপকভাবে দাওয়াতি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। প্রতিটি জেলা, উপজেলা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে জমিয়তের কাজকে বেগবান করতে হবে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে দলের সদস্যভুক্ত করতে হবে। জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। সম্ভাব্য নির্বাচনী প্রার্থীদের এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুুতিমূলক কাজ শুরু করতে হবে। সাংগঠনিক কমিটিগুলো সুসংহত ও মজবুত করতে হবে। প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ গঠনতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন করি, তাহলে আমাদের দল একটি কাঙখিত লক্ষ্যে পৌঁছুবে ইনশাআল্লাহ!
প্রিয় উপস্থিতি,
বর্তমান ইন্টেরিম সরকারের বিভিন্ন ভালো কাজ ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হলেও কিছু কিছু বিষয় আমাদেরকে হতাশ ও উদ্বিগ্ন করেছে। সরকার বারবার সংস্কারের কথা বললেও কার্যত কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। প্রায় নয় মাস পেরিয়ে গেলেও সরকার জুলাই গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে পারে নি। এখনো অনেক আসামী প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনেককে গ্রেফতার করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদেরকেও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। সরকার এখনো নির্বাচনের কোনো চূড়ান্ত রূপরেখা দিতে পারে নি। উল্টো গনবিরোধী ও বিপ্লবের আকাঙ্খা বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিতর্কিত নারী কমিশনের মাধ্যমে আর্ন্তর্জাতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের নীলনকশা বাস্তবায়ন করার অপচেষ্টা চলছে। ফ্যাসিবাদের সহযোগী বিভিন্ন বাম সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করার কোশেশ আমরা দেখতে পাচ্ছি।
বিপ্লবে অংশ নেওয়া পক্ষগুলোর মাঝেও ক্রমশ দুরত্ব বাড়ছে। দিন যতো যাচ্ছে, আমাদের উদ্বেগ ও হতাশা ততো বাড়ছে। তাই অতি দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আমরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
প্রিয় জমিয়তকর্মী ভায়েরা,
জমিয়ত আসলাফ ও আকাবিরের স্মৃতিধন্য একটি মকবুল সংগঠন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শীর্ষ আলেম ও আকাবিররা এর নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০২০ সালের ৪এপ্রিল জমিয়তের তৎকালীন সভাপতি খলীফায়ে মাদানী আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমামবাড়ি রাহ. এর ইন্তেকালের পর এই গুরুদায়িত্ব আমি নালায়েকের কাছে আসে। যে পদ অলংকৃত করেছিলেন শায়খুল হিন্দ, শায়খুল ইসলাম, মুফতি মাহমুদ , শায়খ তজম্মুল আলি, শায়খে কৌড়িয়া, শায়খে বিশ্বনাথী আর শায়খে ইমামবাড়ির মতো আকাবিররা, আমি সেই পদের মোটেও উপযুক্ত ছিলাম না। এরপরও আপনাদের সকলের সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিতে বাধ্য ছিলাম। ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট দলের কাউন্সিলে পূনরায় আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। নিজের অদক্ষতা, অসুস্থতা ও নানাবিধ ব্যস্ততার দরুন আমি যথাযথভাবে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারি নি। এজন্য আল্লাহর কাছে মাফি চাচ্ছি, আপনাদের কাছেও আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
পাঁচ বছরের দায়িত্বপালনে আমি খুব বেশি কিছু করতে না পারলেও একথা জোর দিয়ে বলতে পারি, দলের স্বার্থবিরোধী কোন কাজ আমি করিনি এবং করতেও দিই নি। ফ্যাসিবাদের শাসনামলে দল অনেক কঠিন ও সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করেছে। আল্লাহর রহমত ও নুসরতের উপর ভরসা করে আমি আমার সহকর্মীদের নিয়ে অবিচলতার সাথে সেই সংকটগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছি।
দলকে আমরা যথাসাধ্য আগলে রেখেছি। অনেক সুযোগ সুবিধার প্রলোভন এবং জেল জুলুমের হুমকি থাকা সত্ত্বেও আমরা দলের স্বার্থ ও আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে কোনো কাজ করি নি। এজন্য আমরা আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করছি। আমরা এই সময়ে দলের ঐক্য ও অভিন্নতা বজায় রাখতে সচেষ্ট থেকেছি। বিভিন্ন কারণে দল ছেড়ে যাওয়া অনেক নেতাকর্মীকে আমরা দলে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। দলের ছিন্ন হওয়া একটি অংশের সাথে আমরা আবার সুসম্পর্ক স্থাপন করেছি এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অভিন্ন প্লাটফরমে কাজ করতে আমরা সম্মত হয়েছি। এই মেয়াদকালে জমিয়তের বিভিন্ন প্রবাসী শাখা গঠিত হয়েছে। পূর্বের গঠিত শাখাগুলোতে কার্যকর আরো বেগবান হয়েছে এবং আমাদের কেন্দ্র কমিটির সাথে যথাযথ সমন্বয় রক্ষা করে তাঁরা তাঁদের কার্যক্রম পরিচালিত করছেন।
প্রিয় ভায়েরা,
আমি আমার জীবন সায়াহ্নে উপনিত হয়েছি। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকেই আমি জমিয়ত করি, জমিয়তকে মুহব্বত করি। উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন দায়িত্ব আমি পালন করেছি। জমিয়ত আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জমিয়ত আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছে, বিনিময়ে আমি কিছুই দিতে পারি নি। আমার আজকের এই অবস্থানে জমিয়ত এবং জমিয়তের কর্মীরাই আমাকে নিয়ে এসেছে। আমি তাঁদের জন্য কিছুই করতে পারি নি। আকাবিরের নাম ব্যবহার করেছি শুধু, কিন্তু তাঁদের মতো কুরবানি আমি দিতে পারি নি। আমি ক্ষমা চাচ্ছি আল্লাহর কাছে। আমার যাবতীয় ব্যর্থতা ও অক্ষমতাকে যেনো আল্লাহ ক্ষমা করেন। আমার আকাবিরদের সাথে যেনো আমার হাশর করেন।
প্রিয় উপস্থিতি,
আমি নিতান্ত অসুস্থ একজন মানুষ। বয়স নব্বইয়ের কাছাকাছি। ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারি না। মানসিকভাবে কোনো চাপ নেওয়ার সক্ষমতা আমার নেই। এই অবস্থায় দলের দায়িত্ব নিতে আমি পুরোপুরি অক্ষম। এজন্য দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে আমি এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছি। আমি মনে করছি নতুনদের কাছে নেতৃত্ব গেলে দলের কার্যক্রম আরো বেগবান হবে। আপনারাও নতুন দায়িত্বশীলদের সবসময় সমর্থন ও সহযোগিতা করবেন। সবাই মিলেমিশে এই দেহের মতো থাকবেন। দলের স্বার্থ ও আদর্শকে সমুন্নত রেখে পরামর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে এগিয়ে নেবেন। একশো ছয় বছর ধরে জমিয়ত যে নীতি আদর্শের উপর আছে, নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে হলেও এই আদর্শের উপর অটল অবিচল থাকবেন। সততা, জবাবদিহিতা ও আমানতদারির সাথে দায়িত্ব পালন করবেন। কারো কোনো কার্যকলাপে আকাবিরের স্মৃতিবিজড়িত এই দল যাতে কলঙ্কিত না হয়, এ ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন থাকবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন।
আপনাদের কাছে আমি খাতেমা বিল খায়েরের দোয়া চাচ্ছি। আল্লাহ যেনো আজীবন হকের উপর অটল অবিচল থাকার এবং আকাবিরের নকশে কদমের উপর চলার তাউফিক দান করেন। আমার প্রিয় সংগঠনকে আপনাদের আমানতে দিয়ে গেলাম। খুব যতন করে এই দলটাকে আগলে রাখবেন। যতদিন আকাবিরের নীতি ও আদর্শের উপর অটল থাকবেন, আমার আন্তরিক দোয়া আপনাদের জন্য থাকবে।
আমি আপনাদের কাছে থেকে বিদায় চাচ্ছি। হয়তো এরকম পরিসরে আর কোনোদিন আপনাদের সাথে দেখা হবে না। আপনাদেরকে আলাহর হেফাজতে সোপর্দ করে যাচ্ছি। আল্লাহ যেনো আপনাদের নেগাহবান হোন। আমীন।
এসএকে/