শনিবার, ০৩ মে ২০২৫ ।। ১৯ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৫ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :
জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আধার, বিশ্বমানের বাংলাদেশি আলেম চলে গেলেন আল্লামা সুলতান যওক নদভী এবার চা বাগানে ছবি তোলার সময় দুই বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেলো বিএসএফ কর্মকর্তাদের মেরুদণ্ড শক্ত করে কাজ করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর এখন মানুষ মন খুলে লিখছেন, সমালোচনা করছেন : প্রেস সচিব গাজায় ত্রাণ বহনকারী জাহাজে ইসরায়েলের হামলা কাশ্মীর হামলার পেছনে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা : দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন নারীবিষয়ক সংস্কার প্রস্তাব আগাগোড়া ইসলামবিরোধী: হেফাজতে ইসলাম পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে খাদ্য মজুতের নির্দেশ হেফাজতের মহাসমাবেশ সফল করতে সাভারে মোটর সাইকেল শোডাউন

বাংলাদেশে প্রথম জোড়া মাথার শিশুর চিকিৎসা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম :  জোড়া শিশু আমরা এর আগেও পেয়েছি, কিন্তু এভাবে মাথা জোড়া লাগানো যমজ শিশু এই প্রথম। এ কারণে ওদের চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়েও বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। বাংলাদেশে এ ধরনের কোনও অপারেশন এর আগে হয়নি।’  এক বছর বয়সী জোড়া মাথার যমজ শিশু রাবেয়া ও রোকাইয়া সম্পর্কে এভাবেই বলছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘দিস ইজ দ্যা ফার্স্ট এক্সপেরিয়েন্স ফর মি, শুধু আমার জন্য না, বাংলাদেশের জন্যই ফার্স্ট এক্সপেরিয়েন্স। মাথা জোড়া লাগানো শিশুর অপারেশন আমরা কখনও করিনি। যদি জানা যায়, শিশু দুটির একটা মাথা ও একটা ব্রেইন; তাহলে আমরা কী করব সেটা আমাদের কাছেই বড় প্রশ্ন। দিস ইজ অ্যা রেয়ার কেস। মাথা জোড়া লাগানো যমজের চিকিৎসা আমাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন। যার কারণে চ্যালেঞ্জটাও বেশি।’

আগামীকাল সোমবার (৩১ জুলাই) ওই শিশুদের চিকিৎসার জন্য একটা মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হবে। তারপর বোর্ডের সবাই মিলে তাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি। বোর্ডে থাকবেন বিএসএমএমইউ এর শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো রুহুল আমিন, নিউরো সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক, শিশু বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাহানা আক্তার রহমান, শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ইন্সটিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা) বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. মিজানুর রহমান এবং বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন।

গত বছরে পাবনার এক শিক্ষক দম্পত্তির ঘরে জন্ম নেওয়া মাথা জোড়া লাগানো যমজ শিশুর চিকিৎসার জন্য এ মেডিক্যাল বোর্ড গঠিত হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন ডা. রুহুল আমিন।

শিশুদের চিকিৎসার ব্যাপারে বিএসএমএমইউ এর শিশু সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন শনিবার বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘জন্মের পর গত বছরের জুলাই মাসে শিশু দুটিকে নিয়ে আসেন তাদের পরিবার। তখন শিশুদুটির অবস্থা আরও খারাপ ছিল। ইনটেনসিভ ম্যানেজমেন্টে রাখার পর যখন দেখলাম হোম ম্যানেজমেন্টের মধ্যে রাখা যাবে তখন তাদেরকে রিলিজ দেই। আমাদের নম্বর দেওয়া আছে তাদেরকে। যখনই কোনও সমস্যা হয়েছে, তারা আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। ওখানকার স্থানীয় চিকিৎকদের সঙ্গেও কথা হয় আমাদের।’

তবে এরকম সমস্যা নিয়ে আসা শিশুর সংখ্যা কম বলেই চিকিৎসকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যাপারগুলো নিয়েও ভাবতে হচ্ছে বলে জানালেন একই বিভাগের একাধিক চিকিৎসক। তারা জানান, শিশু দুটির এমআরআর করার মতো যন্ত্র নেই আমাদের। সিটিস্ক্যান ও এমআরআই করার জন্য একটা মাথার মেশিন আছে। একসঙ্গে দুটি মাথার সিটিস্ক্যানসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করার মেশিন নেই। তাই এগুলো একটি বিশেষ ব্যবস্থায় করতে হবে।

ডাক্তাররা আরও জানান, এরকম জোড়া লাগানো শিশুকে অপারেশন করে আলাদা করার কাজ এর আগেও অনেক করেছেন তারা। কিন্তু সে শিশুগুলো  ছিল পেট, বুক ও শরীরের পেছনের কোন অংশে জোড়া লাগানো। কিন্তু মাথা জোড়া লাগানো শিশুর অপারেশন এই প্রথম। এক্ষেত্রে শিশু দুটির ব্রেইন একটা কিনা সেটি জানা জরুরি। কারণ যদি ব্রেইন একটা হয় তাহলে সেটা শেয়ার করার মতো নয়। যদি আলাদা ব্রেইন হয় এবং কোনও একটা জায়গায় জোড়া লাগানো থাকে তাহলে সেটাকে পৃথক করা সম্ভব।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন বলেন, ‘যদি ব্রেইন একটা হয় তাহলে আমাদের পরিকল্পনা হলো; যারা এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক ফ্যাকাল্টি রয়েছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবো। সেক্ষেত্রে হয় তাদেরকে দেশের বাইরে পাঠানো হবে, নয়তো আমরা চাইব যে বাইরের ডাক্তাররা এখানে এসে কাজটা করুক। তাহলে আমাদেরও একটা অভিজ্ঞতা হবে। সবকিছু মিলিয়ে আমরা মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছি।’

শিশুদুটি এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ তলায় অবস্থিত শিশু সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন আছে। তাদের মা স্কুল শিক্ষক তাসলিমা খাতুন জানান, গত বছরের ১৬ জুলাই ওদের জন্ম হয়। জন্মের আগে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। জন্মের চার দিনের মাথায় রোকাইয়ার জন্ডিস হয়, তারপরই এখানে নিয়ে আসি তাদেরকে।

তাসলিমা খাতুন আরও বলেন, ‘আমি ও ওদের বাবা দুজনই পাবনার দুটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করি। বাচ্চা দুটিকে নিয়ে পরিবারের সবাই বেশ উদ্বিগ্ন।’ এসময় মেয়ে দুটির জন্য সবার কাছে দোয়া চান তিনি।

-এজেড


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ