|| মনযূরুল হক ||
মাদরাসায় বলাৎকার জাতীয় যেসব ঘটনা শোনা যায় বা মিডিয়ায় সংবাদ হয়, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, তার অধিকাংশ সত্য নয়। সব মিথ্যা না, কিন্তু বেশিরভাগ মিথ্যা। কিন্তু এই মিথ্যা উদ্ঘাটনের উদ্যোগ নেওয়া হয় না কখনও। নিউজ হওয়ার পরও বহু ঘটনা প্রকাশ পায় যে, ষড়যন্ত্র করে হুজুরকে ফাঁসাতে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে। আশ্চর্যের কথা হলো, তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী দেশের এমন কোনও মাদরাসা পাওয়া যাবে না, যেখানে একবারও এই ধরনের অভিযোগ ওঠে নাই।
আমি বহুবার বলেছি, মাদরাসা-মসজিদের বিরুদ্ধে যে সকল আপত্তিকর নিউজ প্রকাশ হয়, তার ৫০ বা ১০০ টি ধরে সরেজমিন তদন্ত করুন এবং সংবাদ সম্মেলন করে রিপোর্ট প্রকাশ করুন, দেখবেন পুরো দেশ কেঁপে উঠবে। কওমি মাদরাসা জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র বলে বিগত সরকারের আমলে জিগির উঠেছিল। পরে একাধিক জরিপ রিপোর্টে দেখা গেছে, কওমিতে উগ্রতা ১ শতাংশেরও কম; তখন সবার নজর গেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। মনে আছে?
কথা হলো, কে করবে এই কাজ? বিড়ালের গলায় ঘণ্টা কে বাঁধবে? খুবই সাধারণ কাজ। চাইলে মাদরাসা বোর্ড নিজেরাই উদ্যোগ নিতে পারে। খুব খরুচে ব্যাপার তো না। যে-কোনও ইফতা পড়ানো প্রতিষ্ঠান তামরিনের মতো করে একদল শিক্ষার্থীকে এই কাজে লাগাতে পারেন। প্রশ্ন পদ্ধতিতে কীভাবে এইটার ফিল্ড ওয়ার্ক করতে হয়, সেটা যে-কোনও মাস্টার্সের ছাত্রের জানা থাকার কথা, তার থেকে শিখে নিলেই হবে। অথবা গুড ফেইথ আছে, এমন কোনও সংস্থাকেও দায়িত্ব দেওয়া যায়।
কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, এটা কেউ করবে না। মাদরাসা হলো সেই জনগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠান, যারা দিনের পর দিন ভুগবে আর ‘ইসলামের শত্রুদের’ দোষ দেবে, কিন্তু নিজেরা ব্যবস্থা নেবে না। এরা বছরের পর বছর পুলিশের হয়রানির শিকার হবে, তবু পুলিশি আইন-তল্লাশি আইন ছাত্রদের শেখাবে না; নিজের সহমর্মী আইনজীবী দল বানাবে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় টুপি পরা ছবি ঝুলিয়ে মাদরাসার ছেলেরা ধুমায়া ফেইক নিউজ শেয়ার করছে, গালাগালি করছে, অশ্লীল ছবির নিচে মাশাআল্লাহ লিখেছে খবর নাই, এভাবে পুরো সমাজে মাদরাসার ইমেজের বারোটা বাজাচ্ছে তারা; তবু শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়া লিটারেসি শেখাবে না। তারা দিনরাত টুপির বড়ত্ব দেখাতে এত ব্যস্ত যে, টুপিকে কখন পাখি টয়লেট বানিয়েছে, টেরই পান না।
একটা কথা বলি, মাদরাসার বলাৎকার অভিযোগের সমূলে উৎপাটন করার যদি ব্যবস্থা না নেন, তাহলে এটা ভয়াবহ সংকট ডেকে আনবে। যদি ইসকন বা ভারতপন্থী কোনও সংগঠন কোনও একটা স্পর্শকাতর ইনসিডেন্ট নিয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে এবং মিডিয়া এটাকে ধরে ইস্যু বানায় আর এনজিওরা ঝাঁপিয়ে পড়ে (অলরেডি তারা একশনে আছে), তাহলে শেষ। এতায়াতি গ্রুপ তো আছেই, মাজারপন্থী সুফিরা বা দীনে ফেরা ভাইয়েরাও এগিয়ে আসবে না। জামায়াত তো মোটেই না। বাংলাদেশে কওমি ভাবধারার ভবিষ্যত চিরতরে হুমকির মুখে পড়বে।
কর্তৃপক্ষের উচিত, এখনই গা ঝাড়া দেওয়া। সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া। বড় বিপদ সামনে। যারা অভিযুক্ত তাদের আইনের হাতে দিন, আর যাদের নামে বদনাম রটানো হচ্ছে তারা মানহানি মামলা করুন। পেছনের অভিযোগগুলো গবেষণা করুন। সময় বেশি নাই।
লেখক: সাংবাদিক, গবেষক ও অ্যাকটিভিস্ট
এসএকে/