রবিবার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ।। ২১ পৌষ ১৪৩১ ।। ৫ রজব ১৪৪৬


শীতের দাপটে কাঁপছে দেশ, শ্রমজীবীদের ভোগান্তি


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

বছর শুরু হতে না হতেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। আজ সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ স্থানে দেখা মেলেনি সূর্যের।

 বইছে উত্তুরে হাওয়া। ঘরের বাইরে গেলে শরীরে জাগছে কাঁপন। উত্তরের জনপদগুলোয় দিনের বেলায়ও আলো জ্বালিয়ে চলেছে যানবাহনগুলো।

আবহাওয়া অফিস বলছে, ডিসেম্বরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলেও এ মাসে শীত জাঁকিয়ে বসতে পারে। হতে পারে একাধিক তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, এমন কুয়াশা আরও দু-তিন দিন থাকবে। এই সময়ে ঠান্ডা এখনকার মতোই থাকবে। এরপর কুয়াশা কেটে গেলে রাতের তাপমাত্রা ক্রমেই কমে শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে। জানুয়ারির ৬ থেকে ৭ তারিখের পর রাতের তাপমাত্রা কমে ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে আসতে পারে।

আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে একটি থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং একটি থেকে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এক দিন ধরে দেশের চুয়াডাঙ্গা জেলা এবং পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

সাধারণত কোনো স্থানে তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়।

বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এই সময়ে পাবনার ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রির আশপাশে। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে, ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, কনকনে শীত আর উত্তরের হিমেল হাওয়ায় রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। গতকাল সকাল ৬টা ও ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের গতিবেগ ছিল ৫ নটিক্যাল মাইল। আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, ডিসেম্বর মাসের শুরুতে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রিতে নেমেছিল। তখন হিমেল হাওয়া ছিল না। দু’দিন থেকে উত্তর-পশ্চিমের কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। এ কারণে তাপমাত্রা বেশি নিচে না নামলেও শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, আকাশে হালকা মেঘ থাকলেও বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই। সামনের কয়েক দিন শীত এমনই থাকবে, তবে তাপমাত্রা খুব নিচে নামবে না। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত আকাশ ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকবে। সূর্যের দেখা মিলতে পারে দুপুরের দিকে।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, হিমালয়ের কোলঘেঁষে অবস্থিত উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশার কারণে তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না। হিম বাতাসের কারণে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে জেলাজুড়ে। সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা পার হলেও সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, এ দিন জেলার সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সকাল ৯টায়।

এদিকে জেলায় শীত নিবারণের জন্য দুস্থদের জন্য সরকারিভাবে যে কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আবার কম্বলের চেয়ে গরম কাপড়ের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন অনেকে। বিশেষ করে চাদর, মাফলার, জ্যাকেট সরকারিভাবে দেওয়া হলে গরিব মানুষের উপকার হবে বলেও জানান তারা।

সরেজমিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র শীতে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র পাওয়া গেছে। বিশেষ করে, নিম্নবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষ বেশি কষ্টে পড়েছে। কাজ না পেয়ে অলস সময় পার করছে তারা।

কুড়িগ্রাম শহরের একতা পাড়ার দিনমজুর ফুলজন বেওয়া সমকালকে বলেন, ‘একটা প্যাট হামার, মাটি না কাটলে দিন চলে না। গতকাল থাকি আজ কাজ যাবার পাই নাই। কুয়াশাত কাইয়ও কাজত আসে না।

রাজারহাটের রিকশাচালক শামসুল মিয়া বলেন, ‘গরম কাপড়ের অভাবে গামছা দিয়া মাথা ধাকছি, মাফলার পামো কট্টি থাকি।

জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, ৯ উপজেলার জন্য দুই ধাপে ১২ হাজার কম্বল এবং ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন। চাহিদা অনুযায়ী বিতরণ চলছে।

আলমডাঙ্গা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি জানান, ২২ দিন পর আবারও মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গা। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, বুধবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যবধানে এই তাপমাত্রা কমেছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ ছাড়া দিনের তাপমাত্রা বাড়ায় এবং রাতের তাপমাত্রা কমায় গত কয়েক দিনে জেলায় শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেনারেল হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ঠান্ডা আর সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত।

এদিকে শীত উপেক্ষা করে কাজের জন্য বের হতে হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। হাটবাজারের শ্রমিক ও কৃষিশ্রমিকদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কাজের সন্ধানে শহরে এসেও অনেকে কাজ পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। শীত উপেক্ষা করে রিকশা-ভ্যান নিয়ে শহরে এসে পর্যাপ্ত যাত্রী পাচ্ছেন না চালকরা।

আরএইচ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ