বন্যা পরিস্থিতিতে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের করণীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ১০টায় নিউ ইস্কাটনের বিয়াম মিলনায়তনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- সরদার উদয় রায়হান (নির্বাহী প্রকৌশলী, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণকেন্দ্র, বাংলাদেশ পানি উন্নয়নবোর্ড), ড. হাফিজ আশরাফুল হক শাহবাজ (চেয়ারম্যান, উপকূলীয় অধ্যয়ন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়), ড. মো. শরিফুল ইসলাম (অধ্যাপক, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ বুয়েট) জাওয়াদ ইবনে ফরিদ (প্রভাষক, ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ, ঢাবি), মু. রেজাউল রাকিব (সহযোগী অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জাবি), ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলাম (সহযোগী অধ্যাপক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বেরোবি), ড. মুহাম্মদ মাসুদ (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড), আরিফ চৌধুরী (সহকারী অধ্যাপক, জলবায়ূ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়), ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন (সহযোগী অধ্যাপক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি) প্রমুখ।
বৈঠকের শুরুতে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ত্রাণ কার্যক্রমের ওপর একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি বলেন, এই বৈঠকের উদ্দেশ্য হলো- বন্যায় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের করণীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ।
‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা ও পুনর্বাসনে টেকসই কৌশল: প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ও সমন্বিত উদ্যোগ’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকূলীয় অধ্যয়ন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. হাফিজ আশরাফুল হক (শাহবাজ) বলেন, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে দুর্যোগের পূর্বে দুর্গত অঞ্চলে ব্যাপকহারে সতর্কতামূলক ভয়েস মেসেজ পাঠাতে পারে। পাশাপাশি দুর্যোগের পর বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ব্যাপকহারে সোলার প্যানেল বিতরণের পরামর্শ দেন তিনি।
ড. মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, অঞ্চলভেদে মানুষের বাড়িঘর নানা রকম। তাই পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে দুর্গতদের প্রয়োজন অনুযায়ী গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বন্যার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে জনসাধারণকে সচেতন করার পরামর্শ দেন।
মু. রেজাউল রাকিব বলেন, সবাই যেন পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘরবাড়ি ও স্থাপনা তৈরি করে, সেই আওয়াজ তুলতে হবে। পাশাপাশি মসজিদের ইমাম, শিক্ষক ও সচেতন নাগরিকদের মাধ্যমে দখলকৃত খাল পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখতে হবে।
জাওয়াদ ইবনে ফরিদ তার আলোচনায় বন্যাপ্রবণ এলাকার কৃষকদের জন্য বিশেষ অ্যাপ তৈরির পরামর্শ দেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনকে।
ড. আবু রেজা মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন বিশেষ কর্মীবাহিনী গড়ে তুলে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে পারে। বন্যার পূর্বাভাস ঠিকমতো পৌঁছতে পারলে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি আট গুণ কমানো সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, নদীর পানির কারণে বন্যা হয় না। মানুষের ভুলের কারণে বন্যা হয়। এ জন্য মানুষকে সচেতন করতে হবে। সেই সঙ্গে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।
ড. মুহাম্মদ মাসুদ বলেন, বন্যা প্রবণতা কমাতে হাওড় অঞ্চলে একেক বছর একেক হাওড়কে বন্যার পানির জন্য নির্ধারণ করা যায়। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন স্থানীয় লোকবলের সহায়তা নিয়ে ছোট ছোট বাধ তৈরি করতে পারে।
আরিফ চৌধুরী বলেন, বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে পারে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। এতে দুর্যোগ চলাকালে তারা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারবে।
ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, বন্যার সময় শুধু পানিবাহিত রোগের ওপর জোর না দিয়ে অন্যান্য সাধারণ রোগের ওপরও জোর দিতে হবে। বিশেষত বৃদ্ধ নারী ও শিশুদের চিকিৎসা নিয়ে কাজ করতে হবে। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনকে মসজিদভিত্তিক সমাজব্যবস্থা তৈরি করে বন্যায় দুর্যোগ মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদী কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।
এছাড়া বিভিন্ন দুর্যোগে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করেন প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমাদ।
হাআমা/