|| হাসান আল মাহমুুদ ||
প্রথম পর্বের লিংক: বিশ্বজয়ী হাফেজের দেশ বাংলাদেশে কেন আসছে না বিদেশি হিফজ শিক্ষার্থী
প্রথম পর্বের পর থেকে...
গত এক যুগে বাংলাদেশি হাফেজ শিক্ষার্থীদের সাফল্য দেখেছে বিশ্ববাসী। সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, লিবিয়া, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, মালয়েশিয়া, ভারত, বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশে আয়োজিত আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নসহ বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন বাংলাদেশি হাফেজরা। আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতাগুলোতে বাংলাদেশের হাফেজদের চ্যাম্পিয়ন হওয়া মানেই দেশের সংশ্লিষ্ট হিফজ মাদরাসাগুলোও বিশ্ব দরবারে বিশ্ব সেরা। সে হিসাবে বিশ্বের নানা দেশ থেকে হিফজ শিক্ষার্থী দেশে হিফজ পড়তে আসার কথা। কিন্তু কেন আসছে না বিশ্বজয়ী এই হাফেজের দেশে বিদেশি হিফজ শিক্ষার্থী।
দেশে বিদেশি শিক্ষার্থী
অথচ, আমরা দেখতে পাই- দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনা করছেন দুই হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী। সংখ্যার দিক দিয়ে সরকারির চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই বিদেশি শিক্ষার্থী বেশি। চার বছর ধরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ধারাবাহিকভাবে বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়ছে। ২০২১ সালের তথ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনে বিদেশি শিক্ষার্থী–সংক্রান্ত এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
ইউজিসির তথ্য বলছে, ২০২০ সালে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিল ২ হাজার ৩১৭ জন। পরের বছর (২০২১) তা হয় ২ হাজার ২৮১ জন। ২০২২ সালে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৫৭ জন।
বিদেশি হিফজ শিক্ষার্থী টানতে সরকারের করণীয় কী:
বাংলাদেশি হাফেজদের বিদেশি হিফজ শিক্ষার্থী টানতে সরকারের করণীয় কী? প্রশ্ন রাখলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্ণর আলহাজ্জ মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী আসার জন্য কয়েকটি সুরত হতে পারে। আমাদের দেশে এসে নিজেদের টাকায় পড়বে কিংবা স্কলারশিপ নিয়ে। এগুলো নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন কোনো দিন উঠে নাই। সরকারের দায়িত্ব তো পরে’।
তিনি বলেন, সরকারের কাছে এ ধরনের সুন্দর প্রস্তাবনা তৈরী করে কেউ দিতে পারলে ভালো হত। আমরা এ ব্যাপারে এ প্রস্তাবনার সাথে একমত হয়ে সরকারকে অবগত করতে সহযোগিতা করব।
‘আমাদের দেশের কওমি মাদরাসাগুলোতে অনেক এতিমকে লালনপালন করা হয়। ফিলিস্তিনের অনেক শিশু মা-বাবা হারা হয়ে গেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একবার বলেছেন ফিলিস্তিনের কিছু এতিম শিশু এখানে নিয়ে আসবেন। তো, এখানে যদি এই শিশুরা স্কলারশিপ বা ডোনেশনে আসে, তাহলে তাদের জন্য খুবই ভালো হয়’।– জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি হিফজ শিক্ষার্থী দেশে আনা কিংবা আনার সুযোগ তৈরী করে দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে একটা কমিটি করা দরকার। তারা একটা প্রস্তাবনা তৈরী করবেন। সে প্রস্তবনাকে জনপ্রিয় করার জন্য আমরা কাজ করব। সরকারের কাছে উত্থাপন করব। এটা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ হবে’।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর গবেষণা বিভাগের মুহাদ্দিস ড. ওয়ালীউর রহমান খান বলেন, বিদেশি হিফজ শিক্ষার্থী টানতে বাংলাদেশ সরকারের প্রয়োজন অবশ্যই আছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা তুলে ধরে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া যায় কি না? প্রশ্ন রাখলে তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এত বড় উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সীমাবদ্ধতা আছে।
পড়ুন : উল্লেখযোগ্য ফতোয়া বিভাগগুলোর ওয়েবসাইট নাই কেন
‘এ বিষয়ে বিদেশি হিফজ শিক্ষার্থীদের জন্য সুন্দর ব্যবস্থা ও বিদেশি ভাষা জানা শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থা রেখে সরকারের কাছে হাইআতুল উলয়া কিংবা বেফাক বা অন্যান্যরা প্রস্তাবনা তুলে ধরতে পারে। বিদেশি শিক্ষার্থীরা তো কুরআনের আকর্ষণে এদেশে আসবে এজন্য তাদেরকে তাদের ভাষায় পাঠ বুঝানোর ব্যবস্থাপনা থাকাও জরুরি। বিশ্বমানের আচরণ, উপযুক্ত খাওয়াদাওয়া ও আবাসনের সুব্যবস্থাপনা না থাকলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাবে’।– মত দেন তিনি।
এদিকে, বিদেশি হিফজ শিক্ষার্থী টানতে কতটা সম্ভাবনাময়ী দেশের হিফজ মাদরাসাগুলো এমন প্রশ্ন রাখলে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘বিদেশি হিফজ শিক্ষার্থীদের উপযোগী আবাসন ব্যবস্থাপনার পরিবেশের সক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। প্রয়োজন এখন বিদেশি শিক্ষার্থী টেনে আনার।
তিনি বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশ হিফজে বিশ্বে চ্যাম্পিয়ন হয়, সে হিসাবে বিদেশি শিক্ষার্থী টেনে আনার একটা মোক্ষম সুযোগ বাংলাদেশের আছে। এটা ভালো উদ্যোগ হবে। আমাদের এখানে যে পদ্ধতিতে পড়িয়ে সফলতা আসছে, সে পদ্ধতি বলবৎ থাকতে পারে, তেমন পরিবর্তনের দরকার নেই। বাকি প্রয়োজন এখন বিদেশি হিফজ শিক্ষার্থী টানার ব্যবস্থা তৈরী করা’।
হাআমা/