বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪ ।। ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১ জিলকদ ১৪৪৫


আন্তর্জাতিক নারী দিবস: নারীর কর্মক্ষেত্র কীভাবে দেখে ইসলাম


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: আওয়ার ইসলাম

|| হাসান আল মাহমুদ ||

বিশ্বায়নের এ যুগে নারীও অবদান রাখছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালতসহ নানা ক্ষেত্রে নারী কাজ করে চলছে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে নারীর কর্মায়নে করা হচ্ছে উদ্বুদ্ধ। আজ পালিত হচ্ছে 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস'। ইসলাম নারীর কর্মায়ন কীভাবে দেখে এবং নারীর কর্মক্ষেত্র কী রকম হওয়া দরকার ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন দেশের অন্যতম শীর্ষ দুজন ইসলামি চিন্তাবিদ।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক বিশিষ্ট আলেম চিন্তাবিদ ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ বলেন, প্রাকৃতিকভাবে পুরুষ ও নারী ভিন্ন দুই প্রকৃতির। একজন মানুষ চাইলেই এ প্রাকৃতিক বিষয়টাকে লঙ্ঘন করতে পারে না। এটা সুন্দরও না। প্রকৃতিবিরুদ্ধ কোনো কাজ করলে তা ফলপ্রসুও হয় না। আল্লাহ তায়ালা পুরুষকে একটা প্রকৃতির ওপর সৃষ্টি করেছেন। নারীকেও একটা প্রকৃতির ওপর সৃষ্টি করেছেন। তাই প্রকৃতি যেহেতু ভিন্ন, ন্যাচার যেহেতু ভিন্ন, এ জন্য তাদের কর্মক্ষেত্র ও কর্মপদ্ধতি আল্লাহ ভিন্ন ভিন্ন দিয়েছেন। এটা প্রাকৃতিক দাবিও বটে।

‘হ্যাঁ, এ পৃথিবীকে সাজাতে হলে নর-নারী উভয়েরও প্রয়োজন রয়েছে। পুরুষের যেমন অধিকার আছে, নারীরও আছে। তবে নারী তার সম্মান বজায় রেখে কাজ করবে। পুরুষ কাজ করবে পুরুষের নিজস্ব বলয়ে। নারী তার বলয়ে। কেউ কারও ওপর যেন জুলুম না করে।’- যুক্ত করেন তিনি।

গবেষক এই আলেম ‘নারীর জন্য  ইসলামের ড্রেসকোর্ট’র আবশ্যকতা তুলে ধরে বলেন,  ‘যদি নারী তার সম্মান বজায় রেখে, শরয়ি পর্দা রক্ষা করে কাজ করে, চাকরি-বাকরি করে, তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরই ড্রেসকোর্ট আছে। ইসলামের ড্রেসকোর্ট হলো পর্দা। এ পর্দা রক্ষা যেমন নারীকে করতে হয়, পুরুষকেও করতে হয়। তাই কর্মক্ষেত্রে নারীও অংশ নিলে তার অধিকার আছে নেয়ার। ইসলাম নারীকে কর্ম করার অনুমতি দিয়েছে। তবে কাজ করতে গিয়ে নারীকে অবশ্যই ইসলামের ড্রেসকোর্ট মেনে চলতে হবে। নারী-পুরুষের কর্মক্ষেত্র একই স্থানে হলে অবশ্যই শালীনতা বজায় রাখতে হবে’।

বিশিষ্ট লেখক, সাংবাদিক-গবেষক চিন্তাবিদ আলেম মাওলানা লিয়াকত আলী বলেন, ‘ইসলামের কনসেপ্ট হলো উপার্জন করবে পুরুষ। ভোগ করবে নারী। নারীর দায়-দায়িত্ব বহন পুরুষের কাঁধে। নারী যদি চায় উপার্জন করতে, তাহলে তারও অনুমতি ইসলাম দিয়েছে। নারী উপার্জিত আয় একমাত্র তারই। পরিবারের ওপর ব্যয় করা তার কর্তব্য নয়। আল্লাহ বলেন, 'পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আল্লাহর কাছে তাঁর রিজিক প্রার্থনা কর।' (সুরা নিসা: ৩২)

তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে যেসব নারী উপার্জন করছে তারা দুই শ্রেণির। এক শ্রেণির নারী, তারা শুধু উপার্জন করার জন্যই কাজ করে। এদের জন্য ইসলামের বিধান হলো, তারা পর্দা রক্ষা করে, শালীনতা বজায় রেখে কাজ-কর্ম করতে পারবে, নিষেধ নেই। তবে তাদের পরিবেশটা একটু কঠিন ব্যাপার। যে পরিবেশে তাদের কাজ করতে হয়, সেখানে তাদের শালীনতা রক্ষা করা কতটা সম্ভব তা ভুক্তভোগী নারী মাত্রই জানে।’

‘নিজের সম্ভ্রম, শালীনতা, পর্দা রক্ষা যে নারীর জন্য সম্ভব না হয়, সে নারীর জন্য তার কর্মক্ষেত্র পরিহার করাই নিরাপদ। আর যেখানে রক্ষা করা যায় সেখানে তারা কাজ করতে কোনো অসুবিধা নেই’-মত দেন এই আলেম।

তিনি জানান, ‘আরেক শ্রেণির নারী আছে তারা জীবিকা নির্বাহের উপায় হিসেবে কাজ করে। আমাদের সমাজব্যবস্থায় এসব নারীকে নারীকর্মী, নারী শ্রমিক ইত্যাদি যে নামেই আখ্যায়িত করুক তারা মূলত অসহায় নারী। তাদের ক্ষেত্রে মানবিক বিষয়গুলো দেখতে হবে। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা যদি ইসলামের মূলনীতি অবলম্বন করে রাষ্ট্র চালাত তাহলে নারীদের কাজ করে খেতে হত না।’

তিনি বলেন, ‘যদি কোনো পুরুষ বা নারী অসহায় হয়ে যায়, তাহলে ইসলামের নির্দেশনা মতে সে অসহায় পুরুষ বা নারীর দায়িত্ব নিতে হয় সমাজ ও রাষ্ট্রকে। যদিও তারা উপার্জনের জন্যই কাজ করে। কিন্তু তারা যে স্বেচ্ছায় নয়, ইচ্ছার বিরুদ্ধে একান্ত অসহায় হয়ে কাজ করে, তাই তাদের প্রতি ইসলাম রাষ্ট্রকে মানবিক দৃষ্টি দিতে আহ্বান করে’।

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ