|| হাসান আল মাহমুদ ||
সম্প্রতি বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষার বালক শাখার অন্যতম শ্রেণি ‘কাফিয়া জামাতকে বোর্ড পরীক্ষার অন্তর্ভূক্ত করে ঘোষণা দিয়েছে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)। বোর্ড জানায় ‘আগামী বছর তথা বেফাকের ৪৮তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষা (১৪৪৬ হি.) হতে অন্যান্য ক্লাসের সাথে সানাবিয়্যাহ-২ (কাফিয়া) জামাতের পরীক্ষাও কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
বেফাকের ঘোষণায় কওমি শিক্ষার বালিকা শাখার ‘কাফিয়া জামাত’কে কেন বোর্ড পরীক্ষার অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি-এ নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন ওঠেছে।
এসব নিয়ে খোঁজখবর নেয় আওয়ার ইসলাম। কথা হয় দেশের কয়েকটি মহিলা মাদরাসার মুহতামিম ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সঙ্গে।
তাঁরা জানান, ‘মেয়েদের তো কাফিয়া জামাতই নাই, তাদের বোর্ড পরীক্ষা হতে হবে কেন!’
মুগদা তা’লীমুল ইসলাম মহিলা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের বোর্ডে মুরব্বিগণ আছেন, তাঁরা মেয়েদের জন্য যেভাবে সিলেবাস সাজিয়েছেন সেভাবেই আলেমা বানানো হচ্ছে তাদের’।
নাম ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কওমি মহিলা মাদরাসার শিক্ষিকা জানান, ‘কওমি বেফাক বোর্ড মেয়েদের জন্য যে সিলেবাস দিয়েছে, তা মূলত শর্টকোর্স। আর এজন্য ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের দাওরায়ে হাদিস পড়তেও সময় কম লাগে’।
ছেলেদের মত লম্বা সিলেবাসের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার দীর্ঘ শিক্ষকতার অভিজ্ঞতায় আপাতত তেমন প্রয়োজন বোধ করছি না। তবে, বোর্ড আমাদের যে সিলেবাস দিয়েছে তাতে তো সমস্যা দেখছি না’।
তিনি বলেন, ‘ছেলেদের কাফিয়া জামাতে যেসব পাঠ পড়ানো হয় তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কিতাব মেয়েদেরও পড়ানো হয়। এসময় তিনি মেয়েদের নাহবেমীর পরবর্তী কয়েকটি ক্লাসের সিলেবাস তুলে ধরেন।
জামাত: কুদূরী সিলেবাস
০১.হেদায়াতুন্নাহু
০২.ইলমে ছিগাহ্
০৩.জামালুল কুরআন
০৪.কুদূরী
০৫.উসুলুশ শাশী
০৬.আলফিয়াতুল হাদিস+যাদুত ত্বালেবীন
০৭.কুরআন তরজমা (২৬-৩০) পারা
০৮.ইনশা-১ম
জামাত: হেদায়া সিলেবাস
০১. কুরআন তরজমা (১৬-২৫পারা)
০২. হেদায়া-১ম
০৩. হেদায়া-২য়
০৪. নূখবাতুল ফিকার
০৫. লামিয়াতুল মু’যিযা+দেওবন্দ আন্দোলন
০৬. রিয়াজুস সালেহীন
০৭. নুরুল আনোয়ার (সুন্নাত)
০৮. সিরাজী
জামাত: শরহে বেকায়া সিলেবাস
০১. কুরআন তরজমা (১-১৫) পারা
০২. শরহে বেকায়া ১ম-২য়
০৩. নুরুল আনোয়ার (কিতাবুল্লাহ)
০৪. মাকামাতে হারীরী
০৫. ইনশা -৩য়
০৬. কাফিয়া
০৭. দরুসুল বালাগাত
নাম ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এই শিক্ষাবিদ আলেমা এই কয়েকটি ক্লাসের সিলেবাস তুলে ধরে বলেন, ‘নাহবেমীর জামাতের পর মেয়েদের বোর্ড পরীক্ষা হয় শরহে বেকায়াতে গিয়ে। আর ছেলেদের কাফিয়া জামাতের ‘কাফিয়া ও দুরুসুল বালাগাত’ দুইটি কিতাবও শরহে বেকায়াতে পড়ানো হয়। এছাড়া, কুদুরী জামাতে কাফিয়া সিলেবাসের ‘কুদুরী ও উসুলুশি শাশী’ কিতাব পড়ানো হয়। আর, কুরআন তরজমা শরহে বেকায়াতে হয় প্রথম ১৫ পারা এবং বাকি ১৫ পারা কুদুরী ও হেদায়া জামাতে পড়ানো হয়।
তিনি বলেন, ‘যদি বোর্ড মেয়েদের জন্য আলাদা করে ‘‘কাফিয়া জামাত’’ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে মেয়েরাও পরীক্ষা দিবে’।
মেয়েদের জন্য ছেলেদের মত সিলেবাস সাজিয়ে আলাদা করে ‘কাফিয়া জামাত’ খোলে বোর্ড পরীক্ষার অন্তর্ভূক্ত করা যায় কি না- বিষয়ে জানতে বেফাক বোর্ড সংশ্লিষ্ট একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে সাড়া পাওয়া যায়নি।
হাআমা/