সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ।। ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১২ জিলকদ ১৪৪৫


ইজতেমায় মাদরাসা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ: আশা-নিরাশার দোলাচল 

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

|| হাসান আল মাহমুদ ||

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম গণজমায়েত ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কহর দরিয়া খ্যাত গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে। 

বাংলাদেশ সরকার থেকে ঘোষিত ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। 

জেলাভিত্তিক খিত্তার তালিকা করাসহ বিশ্ব ইজতেমার ময়দান প্রস্তুতির নানা কাজ চলছে। কনকনে শীত উপেক্ষা করে তাবলীগ জামাতের সদস্যসহ স্বেচ্ছাসেবী মুসল্লিরা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। 

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বাদ ফজর থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমা মাঠের নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থানকারী দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির ইবাদত-বন্দেগি ও জিকির-আজকারে মুখরিত হবে টঙ্গীর তুরাগ তীর। 

বিশ্ব ইজতেমা মাঠে শুধু ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নয়, বরং স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অংশ নেবেন মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও।

 ইজতেমার মজলিসকে শতগুণ বেশি প্রাণবন্ত করে তুলতে মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকের উপস্থিতি চোখে পড়ে প্রতি বছরই। 

এদিকে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসার সমাপনী পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফেব্রুয়ারি ২০২৪। ইতোমেধ্যে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষার তারিখও ঘোষণা দিয়েছে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি।

সাধারণত, কওমি মাদরাসার সমাপনী ও বোর্ড পরীক্ষার আগে ১২-১৫ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছে। এসময়গুলোতে পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিশেষ সময় ‘খেয়ার’কে যথেষ্ঠ কাজে লাগান তারা। 

এক দিকে সমাপনী পরীক্ষা ও অন্য দিকে বিশ্ব ইজতেমা। দুটোই কওমি শিক্ষার্থীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। 

কিন্তু এবারের বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ও সমাপনী পরীক্ষার সময় কাছাকাছি হওয়ায় কওমি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচাল তৈরী হয়েছে।

এ আশা-নিরাশার দোলাচাল কাটাতে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন কওমি শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। 

পরীক্ষার প্রস্তুতির এ গুরুত্বপূর্ণ  সময়ে বিশ্ব ইজতেমায় কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা কিভাবে অংশ নিলে পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে এবং বিশ্ব ইজতেমাও সফল করা যায় এ বিষয়ে আওয়ার ইসলামের মারফত সারা দেশের কওমি শিক্ষার্থীদের বার্তা দিয়েছেন কওমি শিক্ষা বোর্ডের অভিভাবকগণ।

কওমি শিক্ষা বোর্ডের দুইজন দায়িত্বশীল ও শীর্ষস্থানীয় মাদরাসার মুহতামিম বিশ্ব ইজতেমা সফল করার জন্য টঙ্গীর ময়দানে সমন্বয় করে মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের  অংশ নেয়ার কথা বলেন। 

বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) এর মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ’১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে তাইসীর, নাহবেমীর, শরহে বেকায়া ও ফযীলত স্তরের পরীক্ষা। আর দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা তো বেশ আরেকটু পরে। এজন্য, দাওরার ছাত্ররা বিশ্ব ইজতেমায় ব্যাপকহারে অংশগ্রহণ করতে পারে।’ 

তিনি বলেন, ‘সে সঙ্গে সকল মাদরাসার তাখাচ্ছুছ বিভাগের ছাত্ররাও অনায়াসে ইজতেমায় অংশ নিতে পারে। এছাড়াও, যেসকল ক্লাসের বেফাকের (বোর্ড) পরীক্ষা হয় না, তারাও অংশ নিতে পারে। এতে পরীক্ষার কোনো ক্ষতি হবে না বলে তিনি মনে করেন।
  
মাদরাসার শিক্ষকরা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ছাত্রদের গাইডলাইন দিয়ে থাকেন, তারা কিভাবে অংশ নিতে পারেন? প্রশ্নে বেফাক মহসচিব বলেন, ‘উস্তাদদের কয়েকজন ছাত্রদের নেগরানিতে থেকে বাকি অন্যান্যরা ইজতেমায় অংশ নিতে পারেন।’ 

তিনি বলেন, যারা বোর্ড পরীক্ষার্থী, যেহেতু পরীক্ষা সন্নিকটে, তাই এসময়ে তাদের ব্যাপকভাবে অংশ গ্রহণ করা আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি একটু জটিল। এতে তাদের পড়ার ক্ষতিও হতে পারে। তবে, বক্তিগতভাবে যদি কোনো বোর্ড পরীক্ষার্থী বিশেষ আগ্রহ রেখে অংশগ্রহণ করতে চায়, তাহলে সে আগে থেকেই পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালোভাবে নিবে। তাহলে ব্যক্তিগতভাবে বোর্ড পরীক্ষার্থীরাও আসন্ন বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারবে।’


জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ-এর মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ আলী আসন্ন বিশ্বইজতেমা সফল করা প্রসঙ্গে বলেন,  সারা দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মুসল্লির সঙ্গে বিশ্ব ইজতেমায় কওমি মাদরাসা ছাত্র-শিক্ষকদের অংশগ্রহণ একটি গুরুত্ববহ তাৎপর্যবহ। ওলামাদের পরিচালনায় বিশ্ব ইজতেমা সত্যিকারভাবেই সাফল্যমন্ডিত হয়। তাই, দেশ ও জাতির অভিভাবক কওমি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য বিশ্ব ইজতেমা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

তিনি বলেন, যেহেতু এবারের কওমি মাদরাসার সমাপনী পরীক্ষা ও বিশ্ব ইজতেমা কাছাকাছি সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাই আমি প্রথমত বলব- বাংলাদেশে ইফতার ছাত্রও অনেক, তারা কিন্তু সবাই অনায়াসে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারে। 

তিনি বলেন, ‘২২ শে ফেব্রুয়ারি দাওরা হাদিসের পরীক্ষা, সে হিসাবে তারাও অংশ নিতে পারে।  এছাড়া, বোর্ড পরীক্ষার বাইরের ক্লাসের ছাত্ররাতো আছেই। শুধু বোর্ড পরীক্ষার শিক্ষার্থীর পড়ালেখায় ক্ষতি হবে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু, বোর্ড পরীক্ষার্থীরাও চাইলে অংশ নিতে পারে, যদি তারা ভালো রুটিন নির্ধারণ করে রাখে।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমার তিন দিনেও তারা ইজতেমা মাঠে এসে বয়ান শোনার ফাঁকে ফাঁকে কিছু কিতাব-বই পড়ে নিতে পারে। এতে শতো পার্সেন্ট না হলেও ষাট-সত্তুর পার্সেন্ট প্রস্তুতি আদায় হতে পারে বলে মনে করি। 

তিনি বলেন, যেহেতু গতবছরও দেখা গেছে বিশ্ব ইজতেমায় প্রচুর পরিমানে মুসল্লি অংশ নেয়ার কারণে স্থান সংকুলানের সমস্যা হয়, তাই মাদরাসার দায়িত্বশীলগণ বোর্ড শিক্ষার্থীদের বাদ রেখেও বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে পারেন।
 
এদিকে মিরপুর-১৪ জামেউল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মুফতী আবুল বাশার নোমানী-এর সঙ্গে কথা হয়। কওমি মাদরাসার সমাপনী পরীক্ষা ও বিশ্ব ইজতেমার সময় কাছাকাছি, এ অবস্থায় আপনারা এবার কিভাবে অংশ নিতে যাচ্ছেন? প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ!   প্রতি বছর আমাদের মাদরাসার  প্রায় সকল বড় ছাত্র ও উস্তাদগণ ব্যাপকহারে বিশ্ব ইজতেমায় আংশ নেন। এবারের সিডিওলটা একটু ব্যতিক্রম। এক দিকে সমাপনী ও বোর্ড পরীক্ষার খেয়ার। অপরদিকে আমাদের প্রাণের বিশ্ব ইজতেমা। এ দুই সময়টা একেবারে কাছাকাছি সিডিওলে চলে এসেছে। তাই, আমরা এবার ব্যাপকহারে আগের মতো অংশ নিতে পারছি না। তবে, অবশ্যই আমরা আমাদের মাদরাসা থেকে বোর্ড শিক্ষার্থীদের বাদ রেখে বোর্ডের বাইরের ক্লাসগুলোর শিক্ষার্থীদের বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেয়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।’

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ