সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ।। ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১২ জিলকদ ১৪৪৫


ইসলামি অর্থনীতির উপর স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সময়ের দাবি: মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ফাইল ছবি

মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম মাসুম। পাহাড় কেটে দুধের নহর বের করার প্রতিচ্ছবি তিনি। সৃজনশীল কাজে ও বহুমুখী বৈচিত্রতায় যার জুড়ি মেলা ভার। ইসলামিক ফিন্যান্সের ওপরই যিনি প্রায় ৪ হাজার পৃষ্ঠা লিখেছেন। প্রধান সহকারী মুফতি জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ। একজন প্রজ্ঞাবান ইসলামি অর্থনীতিবিদ। দীর্ঘদিন যাবত অর্থনীতির এ প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন অবদান রেখে আসছেন। আজকের একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের বিশেষ প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মারুফ

আওয়ার ইসলাম: ইসলামি অর্থনীতি ও হালাল-হারাম বিষয়ে আপনি যে ব্যক্তি সচেতনতা তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছেন, মাঠ পর্যায়ে এসব কাজে কিভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছেন?

মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম: বস্তুত ফিকহুল মুয়ামালাত বা হালাল অর্থনীতি নিয়ে কাজ করার আগ্রহ ও প্রেরণা আলেম মাত্রই থাকবে-এটিই স্বাভাবিক। কারণ, আলেম ও দাঈ-ইলাল্লাহ-দের কাজই হল-মানুষকে দ্বীনের প্রতি আহবান জানানো। হালাল ইনকাম, হালাল অর্থনীতি-দ্বীনেরই অন্যতম কাজ।

আমার মনে পড়ে, যখন আমি মালিবাগ মাদরাসায় জালালাইন জামাতে পড়ি, তখন ইসলামি অর্থনীতি নিয়ে কিছু আলোচনা বিভিন্ন জায়গায় হত। সেখানে অংশগ্রহণ করতাম। খুব সম্ভবত ২০০৪ সালের ঘটনা। ধীরে ধীরে উপলব্ধি হল-সাধারণ মুসলিমগণ যতোটা দ্বীনের নানা শাখায় অগ্রসর হচ্ছেন, সে তুলনায় মুআমালাত হালাল করার ক্ষেত্রে ততোটা অগ্রসর নয়। এ উপলব্ধি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে, যখন ফিকহ, ফতোয়ায় উচ্চতর পড়াশোনা (তাখাসসুস) শুরু করি। খুব ভালো করে লক্ষ্য করলাম, দারুল ইফতায় অধিকাংশ প্রশ্ন আসে তালাক নিয়ে। এর বিপরীতে লেনদেন সম্পর্কিত প্রশ্ন নিতান্তই কম। এরপর যখন কর্মজীবন শুরু হয়, উক্ত উপলব্ধি আরো জাগ্রত হয়। তখন সুযোগ আসে-উপলব্ধি অনুসারে কাজ করার। ২০১৩-১৪ সালের দিকের কথা। বন্ধুবর মুফতি ইউসূফ সুলতান ও আমি শুরু করলাম হালাল অর্থনীতি নিয়ে জন- মানুষের মাঝে কাজের নানা পরিকল্পনা। হালাল অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ/কোর্স, নানা প্রশিক্ষণ শুরু করি। যেমনটি একটু আগে বললাম। শুরুটা ছিল জেনারেল ভাইদের ও মালিবাগ বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীদের নিয়ে। ২৪টা ক্লাসের মধ্য দিয়ে একটি তাদরীবের মধ্যে প্রায় সব আলোচনা নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছিল। উপস্থাপনা ছিল সহজ সাবলীল। পরবর্তীতে চিন্তা করা হলো এগুলো আলাদা করা যায় কিনা। এরপর সুদ, ঘুষ, জুয়া, ইসলামি বিনিয়োগ পদ্ধতি, ব্যাংকিং, ইসলামি ব্যাংকিং, বিমা, তাকাফুল, পুঁজিবাজার, ব্যবসা ও চাকরি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলাদা-আলাদা প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তারপর চিন্তা করলাম শুধু প্রশিক্ষণে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। বরং মানুষকে হাতে কলমে ধরিয়ে দিতে হবে। এখানে শরিয়া সমস্যা এটা ও তার বিকল্প এটা ইত্যাদি। যা পরিভাষায় শরিয়া কনসালটেন্সি বা শরিয়া পরামর্শ নামে পরিচিত। সাথে সাথে কিছু গবেষণা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব হয়েছে। নানা গবেষণার মাধ্যমে ইসলামি অর্থনীতির মৌলিক রূপরেখা মানুষের সামনে আসা দরকার। সুতরাং, এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে 'প্রশিক্ষণ, গবেষণা, পরামর্শ' পথ চলতে থাকি। ধীরে ধীরে আমার সাথে দক্ষ আলেম অভিজ্ঞ মুফতি যুক্ত হতে থাকে। একটি জনবল তৈরি হয়। এক সময়ে কাজের স্বার্থে এর একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া জরুরী হয়ে যায়। বন্ধুবর মুফতি ইউসূফ সুলতান ও আমি দু'জনে মিলে আইএফএ কনসালটেন্সি লি. নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হয়। যদি এটি একটি কোম্পানি, তবে সেটি কেবলই দেশ ও আন্তর্জাতিক নানা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য। আভ্যান্তরীণ অবকাঠামো পুরোপুরি দ্বীনী ও দাওয়াহর মেযাজে পরিচালিত হয়। আইনী প্রক্রিয়া ছাড়া কোম্পানির কোনও নাম গন্ধ বোঝার উপায় নেই। আলহামদুলিল্লাহ, এ প্রতিষ্ঠানর অধীনে এখন প্রায় ১২ জন বিজ্ঞ তরুণ মুফতি, শরিয়াহ কনসালটেন্ট, প্রশিক্ষক ও গবেষক কাজ করে যাচ্ছেন। ৫ হাজারের মতো নানা পেশার মানুষ এখান থেকে এ পর্যন্ত হালাল অর্থনীতির শিক্ষা লাভ করেছেন। ছোট-বড় প্রায় ৩০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নানা শরিআহ পরামর্শ নিয়ে পরিচালিত হয়েছে ও হচ্ছে। প্রতিনিয়ত নানা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ চালু রয়েছে। সম্প্রতি এ প্রতিষ্ঠান ইসলামি ফাইন্যান্সে আন্তর্জাতিক কনফারেন্সও করেছে। মাত্র ৭-৮ বছরে আল্লাহর দয়ায় প্রতিষ্ঠানটি এখন বাংলাদেশে একমাত্র শরিয়াহ কনসালটেন্সি ফার্ম বলে পরিচিত। হালাল অর্থনীতির উপর এক বৃহৎ সাহিত্য কর্ম তৈরি হয়েছে এ প্রতিষ্ঠান থেকে। যা সত্যিই বিরল।

আওয়ার ইসলাম: আমরা জেনেছি, সম্প্রতি আপনি নর্থ আমেরিকায় সফর করেছেন। সেখানে ইসলামিক ফিন্যান্সের উপর আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই?

মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম: এই সফরটা মুলত ইসলামিক ফাইন্যান্সের আন্তর্জাতিক এক কনফারেন্সকে কেন্দ্র করে। সেখানে আমার রিচার্স পেপার প্রেজেন্টেশন ছিল। উক্ত আন্তর্জাতিক কনফারেন্স ছাড়াও ইসলামিক ফাইন্যান্স নিয়ে আরো দশ-বারোটা সেশন করার সুযোগ হয়েছে। সেখানের সাধারণ মানুষ ও আলেম উলামাসহ নানা পেশার মানুষের সাথে কথাবার্তা বলার সুযোগ হয়েছে। প্রায় মাস খানেকের মত ছিলাম। কয়েকটা বিষয় উপলব্ধি হয়েছে। সংক্ষেপে তা হল, সেখানে মুসলিম কমিউনিটিতে হালাল ফাইন্যান্স অনুযায়ী চলার আগ্রহ উপলব্ধি হয়েছে। তবে, দুর্ভাগ্যবশত সেটা পূরণের যে পর্যাপ্ত সঠিক ব্যবস্থা থাকা দরকার ছিল তাতে ঘাটতি রয়েছে। যেমন, সেখানে ইন্সুরেন্সের প্রোডাক্ট গুলো শরিয়াহ সম্মত নয়। অথচ এগুলো শরিয়া সম্মত করার সুযোগ আছে। আর যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান ইসলামি ফাইন্যান্সের সেবা দিয়ে যাচ্ছে তাদেরও এক্ষেত্রে আরও ডেভলপ করার সুযোগ আছে। যোগ্য শরিয়াহ জনবলের ভালো অভাব আছে। ওখানকার যারা আলেম-উলামা আছেন তারা বিভিন্ন দ্বীনি খেদমত করে যাচ্ছেন। আলহামদুলিল্লাহ। এটা অনেক ভালো। তবে, সে খেদমতের পাশাপাশি যদি মানুষের ইনকাম হালাল করার চেষ্টা আরো সুদৃঢ় করা যেত, তাহলে ওখানকার মুসলিম কমিউনিটি যারা আছেন তারা তাদের ফাইন্যান্সিয়াল প্রয়োজনগুলি আরো সুন্দর করে শরিয়াহ সম্মত উপায়ে পূরণ করার সুযোগ পেত। যেমন, ওখানে ইসলামিক ফিনান্সের উপর আলাদা তাখাসসুস করা যেতে পারে। মাদ্রাসা গুলোতে মুয়ামালাতের বিভিন্ন সেশনের আয়োজন করা যেত। এভাবে নানা দিক থেকে উন্নয়নের সুযোগ আছে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় সফর করে এ বিষয়গুলোর উপর গুরুত্বারোপ করেছি। আরেকটি বিষয়, বাংলাদেশের যে সমস্ত আলেম সেখানে যাচ্ছেন তাদের জন্য যেমন ভাষাগত যোগ্যতা থাকা জরুরী দাওয়ার কাজের জন্য, তেমনিভাবে ফিকহুল মুয়ামালাতের ভালো ধারণা থাকাও উচিত বলে মনে করি।

আওয়ার ইসলাম: আপনি একজন ইসলামী অর্থনীতিবিদ হিসেবে বর্তমান সামাজিক সংকট ও বৈষম্য দূর করতে কি কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে বলে মনে করেন?

মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম: এভাবে বলবেন না। 'অর্থনীতিবিদ' একটি ভারী শব্দ। আমি কেবল ইসলামি অর্থনীতির একজন আদনা তালিবুল ইলম। প্রসঙ্গে ফিরে আসি। বর্তমানে পুরো বিশ্বে পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থা চলমান। এর কুফল ও নেতিবাচক অবস্থা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় প্রকাশ হয়েছে, পৃথিবীর প্রায় ৫২ শতাংশ মানুষ পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে। তারা মনে করে পুঁজিবাদ মানুষকে ভালোর চেয়ে আরও বেশি খারাপ করছে। এ প্রক্রিয়ায় নানা পরিসংখ্যান ও জরিপ আছে। বস্তুত বর্তমান এ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারছে না। আর সম্পদের বৈষম্যের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্ব সম্পদ বৈষম্য-এর রিপোর্ট দেখলে এই বৃহৎ বৈষম্য স্পষ্ট বুঝে আসে। আমরা যে সব অর্থনৈতিক টুলস দেখতে পাই কর, ভ্যাট ইত্যাদি এসবের পিছনে সম্পদকে এককেন্দ্রিক করার সূক্ষ্ম কারণ রয়েছে। অপরদিকে ইসলাম সম্পদকে এককেন্দ্রিক করার বিরুদ্ধে বলে। সম্পদের ক্ষেত্রে ইসলামের নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে। সুতরাং একটি সুস্থ ও ভারসাম্য অর্থনীতি পেতে হলে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক অর্থনীতি গ্রহণের বিকল্প নেই। আর সেটি কেবল-ই ইসলামি অর্থনীতি।

বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক অসমতা এটা মূলত একদিনে তৈরি হয়নি। তাই, এগুলো একদিনে দূর করা সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। আমরা বলতে চাই শূন্য শতাংশ সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থার কথা। যেখানে মূলত কোন সুদ নেই। সেটা দূর করতে হলে আমাদের একাডেমিক পড়াশোনার সাথে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। এজন্য ইসলামি অর্থনীতির উপর স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিত। গবেষণা হওয়া উচিত। সেগুলো আগে প্রতিষ্ঠা করা দরকার এবং একটা জনবল তৈরি করা দরকার। যেমন, বাংলাদেশের সুদী ইন্সুরেন্স আছে সেখান থেকে বের হতে হলে ইসলামিক ইন্সুরেন্স লাগবে। ইসলামি ইন্সুরেন্স যেগুলো আছে এগুলোও নামের সাথে কাজের মিল আছে কিনা খতিয়ে দেখা দরকার। এজন্য আমাদের পড়াশোনা অপরিহার্য। পড়াশোনা হলে গণসচেতনা বৃদ্ধি পাবে। এর পাশাপাশি আল্লাহ ভীতি জাগিয়ে তুলতে হবে। আজকে আমাদের সমাজে অল্পতেই সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে যায়। ব্যবসায় সততা এখন জাদুঘরে চলে যাওয়ার মত অবস্থা। সুতরাং, যখন মানুষের মাঝে হালাল হারামের চর্চা বেশি বেশি হবে, খোদাভীতি জাগ্রত হবে, তখন আমরা এই জায়গা থেকে বের হতে পারব।

আওয়ার ইসলাম: আপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক গবেষণা বা কাজ সম্পর্কে বলুন?

মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম: আল্লাহর রহমতে বেশ কিছু গবেষণা চলমান। তবে একটা নতুন কাজ হয়েছে যা আমার জানামতে ইতিপূর্বে হয়নি। তা হল, বাংলাদেশে আমাদের প্রধান দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ আছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ। এদের প্রত্যেকেরই স্বতন্ত্র শরিয়াহ ইনডেক্স রয়েছে। এ দুটি শরিযাহ ইনডেক্স নিয়ে তুলনামূলক গবেষণা করেছি বহু আগে। এ নিয়ে আমার জানামতে আমিই প্রথম কথা বলা শুরু করি। এরপর কিছু দিন আগে আমি ও আমার সহযোদ্ধা মুফতি যুবায়ের আব্দুল্লাহ ভাই মিলে আমরা আমাদের দেশের জন্য একটি স্বতন্ত্র শরিয়াহ মেথডোলজি তৈরি করি। এটি করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক প্রায় ১৩-১৪টি শরিয়াহ ইনডেক্স মেথড আমরা সামনে রেখেছি। এগুলো বাংলাদেশে অন্তত সম্পূর্ণ নতুন কাজ। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের এই মেথড কোথাওয় কোথাও বাস্তবায়নও হচ্ছে।

এছাড়া বাংলাদেশের যেসব ইসলামি ইন্স্যুরেন্স আছে এগুলো শরিয়াহ পরিপালনের বিবেচনায় ততটা অগ্রসর হয়নি যতটা ইসলামি ব্যাংকিং অগ্রসর হয়েছে। তাই ইসলামি ইন্সুরেন্স নিয়ে আমার কিছু গবেষণা আছে এবং বাস্তব কিছু কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। এছাড়া বেশকিছু গবেষণা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে যেমন ইসলামি ব্যাংকিং- এ মুরাবাহা: প্রয়োগিক জটিলতা ও উত্তরণ ভাবনা, ইসলামি ব্যাংকিং-এ আর্থিক ক্ষতিপূরণ তহবিল: কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে এর ব্যবহারের শরিয়াহ নীতিমালা ইত্যাদি। শেষোক্ত লেখাটি ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে একটি আন্তর্জাতিক জার্নালেও প্রকাশ হয়েছে। এছাড়াও ইসলামি অর্থব্যবস্থার নানা বিষয়ে গবেষণা রয়েছে।

আওয়ার ইসলাম: বর্তমানে আপনি কি কি প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং তার মাধ্যমে আপনি কী লক্ষ্য অর্জন করতে চাচ্ছেন?

মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম:  আমরা তো স্বপ্ন দেখি-একটি ইনসাফপূর্ণ ও কল্যাণময়ী অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে। মানুষ হালাল ইকনোমির দিকে ফিরে আসবে। এতে মানবতা অর্থনীতিতে যাবতীয় জুলুম থেকে মুক্তি পাবে। সেই পথে অগ্রসর হতে আমি ও আমার টিমের নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত।

আওয়ার ইসলাম: তরুণ আলেম ও যারা ইসলামি আইন নিয়ে পড়াশোনা করছে তাদের ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী?

মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম:  মৌলিকভাবে বুনিয়াদি ইলম আগে মজবুতভাবে অর্জন করতে হবে। পাশাপাশি দ্বীনের অন্যান্য বিষয়গুলোকে যেমন আমরা দাওয়াহ হিসেবে গ্রহণ করি, মানুষের ইনকাম হালাল হোক, এটাও দাওয়াহ হিসেবে গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে অবদান তৈরি করা গবেষণা, আলোচনা, মতবিনিময় ও ইতিবাচক সমালোচনার মাধ্যমে। শুধু সমালোচনা যথেষ্ট নয়। এজন্য প্রত্যেকের নির্ধারিত পরামর্শক উস্তাযের সাথে পরামর্শ করে পড়াশোনা অগ্রসর করতে হবে। বিশেষ করে যারা ইফতা বিভাগে পড়েন তাদের জন্য তো এটা জরুরী। ফিকহুল মুয়ামালাতের একটা পর্যায়ে যেন তাদের দক্ষতা থাকে। তাদের মিশন হবে অন্যান্য বিষয়ে কাজ করার পাশাপাশি এই অঙ্গনেও কাজ করা।

আওয়ার ইসলাম: আলেমদের জন্য হালাল অর্থনীতির দাওয়াহমূলক কাজে অংশগ্রহণে ব্যাপাতে আপনার অভিমত কী?

মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম: একথা তো এসে গিয়েছে। আসলে এটা খুব জরুরী একটা কাজ। মানুষের অর্থনীতি যদি হালাল না হয়, তাহলে সবকিছুতে একটি নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। অর্থনীতি যেন হালাল এর উপর পরিচালিত হয় এজন্য আমাদের আলেমদের চিন্তা করা উচিত। আমাদের আকাবির ওলামায়ে কেরামের এই চিন্তাটা ছিল। ইসলামি অর্থনীতি নিয়ে তাদের যেমন একাডেমিক অবদান আছে তেমনি সামাজিক অবদানও আছে। হযরত থানবী রহিমাহুল্লাহ এর কথা আমরা জানি, তিনি তার বিভিন্ন বক্তৃতায় ব্যবসায়ীদের হালাল-হারাম এর প্রতি সচেতনতা তৈরি করতেন এবং একথাও বলতেন, হালাল উপার্জন তাকওয়ার অংশ। আমাদের আকাবির ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। এজন্য আমাদের উচিত এবিষয়ে অবদান তৈরি করা।

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ