শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ ।। ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ ।। ১৪ রমজান ১৪৪৬


১৩ তম তারাবির নামাজে তিলাওয়াতের সারমর্ম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| তাওহীদ আদনান ইয়াকুব ||

(সূরা কাহফ ৭৫-১১০ , সূরা মারইয়াম ১-৯৮ এবং সূরা ত্ব-হা ১-১৩৫)

পবিত্র কুরআন শুধু ধর্মীয় গ্রন্থই নয়, বরং এটি মানবজাতির জন্য এক পরিপূর্ণ জীবনবিধান। এতে রয়েছে নবীদের সংগ্রাম, সত্য-মিথ্যার চিরন্তন দ্বন্দ্ব, এবং আখিরাতের প্রতিশ্রুতি ও সতর্কবার্তা।

১৩তম তারাবির নামাজে যে অংশ তেলাওয়াত করা হবে তাতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সামনে বিভিন্ন শিক্ষামূলক ঘটনা তুলে ধরেছেন। এখানে হযরত মূসা আ. ও হযরত খিজর আ.-এর রহস্যময় ভ্রমণ, যুলকারনাইনের শক্তি ও বিচক্ষণতা, এবং নবী ঈসা আ. -এর অলৌকিক জন্মের কাহিনি স্থান পেয়েছে। পাশাপাশি, হযরত ইব্রাহীম আ.-এর ঈমানের পরীক্ষা ও ফেরাউনের অবাধ্যতার কুফলও আলোচনা করা হয়েছে।

১. সূরা কাহফ (৭৫-১১০) জ্ঞান, পরীক্ষা ও আল্লাহর কুদরত

হযরত মূসা আ. ও হযরত খিজর আ.-এর ঘটনা (৭৫-৮২)

  • খিজর (আ.) এমন কিছু কাজ করেন, যা বাহ্যিকভাবে অন্যায় মনে হয়, কিন্তু পরে তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, সবই আল্লাহর বিশেষ পরিকল্পনার অংশ।
  • এ ঘটনা শেখায় যে, মানুষের সীমিত জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর সব পরিকল্পনা বোঝা সম্ভব নয়, তাই ধৈর্য ও বিশ্বাস রাখা জরুরি।

যুলকারনাইন ও গগনচুম্বী দেয়াল (৮৩-৯৮)

  • যুলকারনাইন নামক এক ন্যায়পরায়ণ রাজা পূর্ব ও পশ্চিমে ভ্রমণ করেন এবং দুর্বল জাতিকে অত্যাচারী ইয়াজুজ-মাজুজ থেকে রক্ষা করতে এক বিশাল দেয়াল নির্মাণ করেন।
  • এ ঘটনা আল্লাহর কুদরত, ন্যায়বিচার ও দুনিয়ার ক্ষণস্থায়িত্ব বোঝায়।

হাশরের ময়দানে মানুষের পরিণতি (৯৯-১১০)

  • কিয়ামতের দিন মানুষের কর্মফল অনুযায়ী তাদের হিসাব নেওয়া হবে।
  • যারা ঈমান ও সৎকর্ম করেছে, তারা জান্নাতে যাবে, আর যারা দুনিয়ার মোহে বিভোর ছিল, তারা কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।

২. সূরা মারইয়াম (১-৯৮) নবীদের সংগ্রাম ও আল্লাহর রহমত

হযরত মারইয়াম আ. -এর অলৌকিক গর্ভধারণ (১-৩৬)

  • আল্লাহর হুকুমে পিতা ছাড়া হযরত মারইয়াম (আ.) ঈসা (আ.)-কে জন্ম দেন।
  • শিশু ঈসা (আ.) দোলনায় থেকেই কথা বলে নিজের নবুয়ত ঘোষণা করেন।
  • এ ঘটনা আল্লাহর অসীম ক্ষমতার নিদর্শন।

হযরত ইব্রাহীম আ.-এর জাতির সাথে বিতর্ক (৪১-৫০)

  • তিনি তার জাতিকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে ডাকেন, কিন্তু তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করে।
  • আল্লাহ তাঁকে নেককার সন্তান ও বরকতময় ভবিষ্যৎ দান করেন।

বিভিন্ন নবীর পরিচয় ও দায়িত্ব (৫১-৭৫)

  • মূসা (আ.), হারূন (আ.), ইসমাইল (আ.) ও ইদরিস (আ.)-এর বর্ণনা এসেছে, যেখানে তাদের সত্যের পথে অবিচল থাকার দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে।

আখিরাতের দৃশ্য (৭৬-৯৮)

  • ঈমানদারদের জন্য জান্নাতের পুরস্কার ও অবিশ্বাসীদের কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে।
  • দুনিয়াতে যারা আল্লাহর পথ ছেড়ে দিয়েছে, তারা আখিরাতে কঠিন অনুতাপ করবে।

৩. সূরা ত্ব-হা (১-১৩৫) কুরআনের শিক্ষা ও হযরত মূসা আ. -এর ঘটনা

কুরআন দুশ্চিন্তা দূর করে (১-৮)

  • আল্লাহ কুরআনকে মানুষের জন্য সহজ করেছেন।
  • কুরআনের মাধ্যমে মানুষ দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে সঠিক পথে চলতে পারে।

নবী মূসা (আ.)-এর জীবনী (৯-৯৮)

  • আল্লাহ তাঁর সাথে সরাসরি কথা বলেন ও তাঁকে ফেরাউনের কাছে পাঠান।
  • ফেরাউন অহংকার করে এবং মূসা (আ.)-এর বার্তা প্রত্যাখ্যান করলে আল্লাহ তাকে পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করেন।
  • বনী ইসরাইল মুক্তি পেলেও পরে তারা গোমূর্তি উপাসনায় লিপ্ত হয়।

আখিরাতের শিক্ষা ও রাসুল -এর দাওয়াত (৯৯-১৩৫)

  • আল্লাহ মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, যারা তাঁর পথ অনুসরণ করবে, তারা সফল হবে, আর যারা অবাধ্য হবে, তারা চরম শাস্তি ভোগ করবে।
  • রাসুল (ﷺ)-কে ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

মূল শিক্ষা ও বার্তা:

  • আল্লাহর পরিকল্পনা সবসময় মানুষের বোঝার সীমার বাইরে, তাই ধৈর্য ধরতে হবে।
  • নবীদের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে, ঈমান ও সৎকর্মে অটল থাকতে হবে।
  • আখিরাত অবশ্যম্ভাবী, তাই দুনিয়ায় আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলতে হবে।
  • আল্লাহ দয়াময়, কিন্তু যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করবে, তারা কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।

উপসংহার:

এই পারার আয়াতগুলো আমাদের শিক্ষা দেয় যে, যারা সত্যের পথে থাকবে, তারা সফল হবে, আর যারা আল্লাহর আদেশ অমান্য করবে, তারা ধ্বংস হবে। এই সব ঘটনা আমাদের জীবনে ধৈর্য, বিশ্বাস ও আল্লাহর ওপর নির্ভরতার গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, সত্যের পথে অবিচল থাকার শিক্ষা দেয় এবং কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দেয়। আল্লাহ যেন আমাদের কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী জীবন গঠনের তাওফিক দান করেন—আমিন!

লেখক : ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ,
মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর

হাআমা/

 


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ