শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ।। ৪ মাঘ ১৪৩১ ।। ১৮ রজব ১৪৪৬


সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিরাপত্তা ও অধিকারের কথা বলা হয় না: বায়তুল মোকাররমের খতিব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের জুমার খুতবায় মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক বলেছেন ইদানীং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকারের কথা অনেক শোনা যায়, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিরাপত্তা ও অধিকারের কথা বলা হয় না। কেমন যেন এই দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠদের উপর অত্যাচার হয় না। চট্টগ্রামের তাওহীদ বিরোধীদের হাতে তাওহীদের কালেমা পাঠ করার অপরাধে শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফের জন্য অনেককে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। কেমন যেন তাকে নিশৃংসভাবে হত্যা করা কোন নির্যাতনের মধ্যে পড়ে না। অথচ  ইসলামে সকল নাগরিকের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান ও অধিকার আদায়ের কথা রয়েছে।

আজ শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) জুমার বয়ানে এসব বলেন খতিব।

তিনি বলেন, আমরা সংখ্যালঘু, নির্যাতন ও অধিকার ইত্যাদি শব্দ অনেক ব্যবহার করি। কিন্তু সঠিকভাবে এগুলোর মর্মার্থ বুঝি না। যার ফলে সম্প্রীতি-ঐক্য ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান বিষয়ে আমরা বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তির শিকার।

এ প্রসঙ্গে তিনি সুরা মায়েদার দ্বিতীয় আয়াতের শেষ অংশ নিয়ে আলোচনা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: وتعاونوا على البر والتقوى ولا تعاونوا على الإثم والعدوان আল্লাহ তায়ালা নেক কাজ এবং তাকওয়ার ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং গুনাহ ও অন্যায়-অবিচারের ক্ষেত্রে সহায়তা করতে নিষেধ করেছেন।

সমাজের যেকোন নাগরিক মুসলিম বা অমুসলিম যেই হোক, সে যদি কোন কল্যাণের কাজ করে তাহলে তাকে সহযোগিতা করা ও সমর্থন করা ইসলামের নির্দেশ। মক্কার কাফেররা ইসলামপূর্ব যুগে একটি চুক্তি করেছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল মক্কার আশেপাশে কেউ নির্যাতনের শিকার হলে তাকে সহযোগিতা করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই চুক্তির অংশ ছিলেন। পরবর্তীতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ যুগেও তিনি ঘোষণা করেছেন, এখনো কেউ যদি আমাকে অনুরূপ কোন চুক্তিতে ডাকে তাহলে আমি সেই ডাকে সাড়া দিব।

অপরদিকে সমাজের যে কোন নাগরিক মুসলিম বা অমুসলিম যেই হোক, সে যদি কোন অন্যায় - অনাচার করে, তাহলে তা বাধা দেওয়া ইসলামের নির্দেশ।

হাদিসের ইরশাদ হয়েছে, انصر أخاك ظالما أو مظلوما তুমি তোমার ভাইকে জালিম ও মজলুম উভয় অবস্থায় সহযোগিতা করো। মাজলুম যেই হোক না কেন তার পক্ষে আমাদের দাঁড়াতে হবে। আর জালেম যেই হোক না কেন তাকে জুলুম থেকে প্রতিহত করতে হবে। এটাই তাকওয়ার শিক্ষা।

এই আয়াতের শেষে আল্লাহ বলেন, আল্লাহর শাস্তি অনেক কঠিন। এটি সকলপ্রকার জালিমদের জন্য একটি ভীতিকর  নির্দেশনা। জালেম যত বড় ক্ষমতা তিনি হোক না কেন, আল্লাহর আজাব যখন আসে তখন খুব সামান্য কারণেও তাকে লাঞ্ছিত অপদস্থ ঘৃণিত হতে হয়। দুঃখজনক হলো, আমরা বাংলাদেশি মানুষের স্মৃতিশক্তি দুর্বল, তাই তারা দ্রুতই অতীতের ঘটনা ভুলে যায় এবং একই রকম কাজ করতে থাকে।

এরপর তিনি জুলুমের বিভিন্ন প্রকাশক্ষেত্র করতে গিয়ে বলেন, আমাদের সমাজে নারী ও শিশুদের উপর বিভিন্ন রকম নি.র্যাতন হয়ে থাকে । এটি অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। নারী ও শিশুদের উপর নি.র্যাতন মারাত্মক কবিরা গুনাহ এবং আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা। যে যে নারী আমাকে জন্ম দিয়েছেন, যে আমি একদিন ছোট্ট শিশু ছিলাম, সেই নারী ও শিশুদের প্রতি অবিচার কোন সুস্থ বিবেকের মানুষের কাজ নয়। তাই ইনসাফপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে নারী ও শিশুর সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

তবে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, আমরা বাহ্যিকভাবে যেগুলোকে নি.র্যাতন বা অবিচার মনে করি, এর বাহিরেও অনেক ধরনের জুলুম অবিচার এবং নি.র্যাতন রয়েছে। মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী শিশুকে অমুসলিম বা খ্রিস্টান স্কুলে ভর্তি করা, শিশুকে কোরআন - সুন্নাহ ও দীন না শেখানো এক প্রকার নির্যাতন। মেয়েকে কন্যাকে অবহেলা করা, পারিবারিক বা সামাজিকভাবে হেয় করা, অথবা পর্দার সাথে দ্বীন দিন পালন করতে না দেওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্দানশীল নারীকে অপদস্ত করা এসব নি.র্যাতনের অন্তর্ভুক্ত।

আজকের যুগে নারীবাদীরা নারী অধিকারের নামে নারীকে পণ্যরূপে উপস্থাপন করছে। আমরা দেশের সকল পত্র-পত্রিকা টিভি চ্যানেল ও রাস্তাঘাটের বিজ্ঞাপন-বিলবোর্ডে নারীকে পণ্যরূপে উপস্থাপন করার প্রতিবাদ করছি। এসব অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ইসলামে নারীর ন্যায্য অধিকার বিষয়ে সুবিন্যস্ত বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। আমরা এগুলোকে আল্লাহর বিধান হিসেবেই মানি। তবে এগুলো নিয়ে সংশয় সৃষ্টিকারী তথাকথিত নারীবাদীরা চাইলে আমরা তাদেরকে চ্যালেঞ্জ দিতে প্রস্তুত আছি, ইনশাআল্লাহ!

শ্রুতিলেখক: মুহাম্মাদ লুতফেরাব্বী আফনান

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ