সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো সকলের কর্তব্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী।।

গত ০৪ এপ্রিল মঙ্গলবার স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়েছে রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ পোশাক মার্কেট হিসেবে খ্যাত বঙ্গবাজার। আগুনে যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বঙ্গবাজার মার্কেট এলাকা। বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও এনেক্সকো টাওয়ারের পরিচালক জহিরুল ইসলাম দাবি করেছেন, ছয়টি মার্কেটের পাঁচ থেকে ছয় হাজার দোকান পুড়ে গেছে।

দোকান মালিকসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার পরিবারের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে অগ্নিকাণ্ডে হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এটির পরিমাণ আরো বেশি হবে বলে দাবি অনেক ব্যবসায়ীর।

ঈদ ছাড়া অন্য যে কোনো সময় হলে হয়তো এ ক্ষতির পরিমাণ কম হতো। ঈদের আগে ব্যবসায় লাভের মুখ দেখার জন্যই প্রত্যেক ব্যবসায়ীই তার সমস্ত পুঁজি ব্যবসায় খাটিয়েছিলেন, কেউবা ধার করে, ব্যাংক খেকে ঋণ করে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। কি হবে এখন এ ব্যবসায়ীদের? এ ব্যবসায়ীদের সবাই তো পথে বসে গেলেন আগুনের লেলিহান দহনে।

এমতাবস্থায় ব্যবসায়ীদের পুর্নবাসনে যদি উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তাহলে এ ব্যবসায়ীদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে। এমন কোনো পরিস্থিতি হয়তো আমরা কেউই দেখতে চাই না।

এর আগে আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে করোনা পরিস্থিতিতে মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছি। সিলেটের বন্যার সময় এদেশের মানুষ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটাই সত্য দেশের দূর্যোগ আর ক্রান্তিলগ্নে এ দেশের মানুষের, সরকারের এগিয়ে আসার রেকর্ড রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডও একটি দূর্যোগ। এ দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে, তাদের পরিবারকে রক্ষা করতে হবে। সাহায্যের হাত নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিত্তবান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সকলে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই ব্যবসায়ীদের পক্ষে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।

ইসলাম মানবতার ধর্ম। মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবতার মুক্তির জন্য সারাটি জীবন ব্যয় করেছেন। পৃথিবীর যেখানেই মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, অসহায় মানবতার আর্তচিৎকারে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়েছে, সেখানেই সেবার ব্রত নিয়ে এগিয়ে গেছে ইসলামপ্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা। অসহায়, ক্ষুধার্তদের হক আদায়ের ব্যাপারে ইসলাম স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ‘যে ব্যক্তি পেট পুরে খায়, আর পাশেই প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটায় সে প্রকৃত মুমিন নয়।’ অপর হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন কর, তাহলে আসমানের অধিবাসীও তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন।’ অন্য হাদিসে এসেছে- 'সমগ্র সৃষ্টিজীবই আল্লাহর পরিবারের মতো, আর সর্বোত্তম হলো ওই ব্যক্তি যে তার পরিবারের প্রতি সদাচরণ করে।’

ইসলাম বা মুসলমানরা শুধু থিওরি বা দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করে না। বরং তারা নিজেরাই আর্তমানবতার সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইসলামের ইতিহাস তার প্রমাণ বহন করে যুগে যুগে ইসলাম ও মুসলমানরা প্রমাণ করেছে, ইসলাম মানবতার ধর্ম।

আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনীর দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখতে পাবো তিনি কীভাবে আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের শিক্ষা দিয়েছেন। তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সব সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন। হিজরতের পরবর্তী সময়ে মক্কার আনসাররা কীভাবে মুহাজির ভাইদের প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছেন।

শুধু এতটুকুই নয়, নিজেরা ক্ষুধার্ত, অসহায়, দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও খাবার ও থাকার মূল অংশ অপর ভাইয়ের জন্য দিয়ে দিয়েছেন। নিজেরা মুমূর্ষু, প্রচণ্ড পিপাসার্ত হওয়ার পরও নিজের খাদ্য ও পানীয় অপর ভাইয়ের জন্য বিলিয়ে দেওয়ার যে নজির স্থাপন করেছেন, তার নমুনা ইতিহাসের পাতায় বিরল।

আমরাও রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামদের অনুসরণ করে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভাই-বোনদের সেবায় আত্মনিয়োগ করি। সাধ্যানুযায়ী তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করি। যারা অর্থ দিয়ে সহায়তা করতে পারি, তারা যেন এগিয়ে আসি। আসুন এখন একে অপরের পাশে দাঁড়াই। এই রমজান মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর রহমত ও বরকতে আমাদের এই ক্ষতি পূরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন!

লেখকঃ আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ