।।নুরুদ্দীন তাসলিম।।
স্বাভাবিক নিয়মে সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার অভ্যাস সবারই। কিন্তু রোজার মাসে সুবহে সাদিকের আগে ব্রাশ করতে না পারলে সমস্যায় পরতে হয়। কারণ রোজা রেখে টুথপেস্ট, টুথ পাউডার, মাজন বা কয়লা দিয়ে দাঁত মাজা মাকরুহ। আর পেস্ট বা মাজন গলার ভেতরে চলে গেলে রোজাই নষ্ট হয়ে যায়। তাই রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট ব্যবহার না করার কথা বলেন বিশেষজ্ঞ আলেমরা।
টুথপেস্ট, টুথ পাউডার থেকে বিরত থাকা জরুরি
আলেমদের পরামর্শ মেনে রোজার বিশেষ ফজিলত অর্জনে টুথপেস্ট, টুথ পাউডার ব্যবহার থেকে বিরত থাকা জরুরি। তবে রমজানে দিনের বেলা টুথপেস্ট বা মাজন ব্যবহার করতে না পারলেও দাঁত ও মুখের যত্ন নেওয়া আবশ্যক। কারণ, দুই দাঁতের মাঝখানে খাবার জমে থাকলে ডেন্টাল ক্যারিজ ও মাড়ির প্রদাহ হওয়ার সম্ভব থাকে। এজন্য রমজান মাসে ইফতার ও সেহরির পর মানসম্মত টুথপেস্ট ও ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করার পরামর্শ দেন ডেন্টিসরা।
মিসওয়াক নবীজির সুন্নত
তবে কেউ সেহরির শেষ মুহূর্তে সুবহে সাদিকের আগে ব্রাশ করতে না পারলে রোজার মাকরুহ বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে মেসওয়াক করা উচিত। এর মাধ্যমে নবীজির একটি বিশেষ সুন্নত পালনের পাশাপাশি সারাদিন মুখের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
হাদিসে মিসওয়াকের যত ফজিলত
মেসওয়াকের বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে আল্লামা ইবনে আবেদিন রহ. বলেছেন, ‘মিসওয়াকের উপকারিতা সত্তরেরও অধিক। তন্মধ্যে সবচেয়ে ক্ষুদ্র উপকার হচ্ছে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয় আর সর্বোচ্চ উপকার হচ্ছে মিসওয়াক করলে মৃত্যুর সময় কালিমা নসিব হয়।’-(ফাতাওয়ে শামি : ১/২৩৯)
মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় মেসওয়াকের ব্যবহার সম্পর্কে এক হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মিসওয়াক মুখের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যম ও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়।’ (নাসায়ি: ৫)
আরেক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যদি আমি আমার উম্মতের ওপর কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে তাদের প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম।’ (বুখারি: ৮৮৭)
রমজানে মিসওয়াক
হাসান (রহ)-কে রোজা অবস্থায় দিনের শেষে মিসওয়াক করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘রোজা অবস্থায় দিনের শেষে মিসওয়াক করতে কোনো অসুবিধা নেই। মিসওয়াক পবিত্রতার মাধ্যম। অতএব দিনের শুরুতে এবং শেষেও মিসওয়াক করো’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক: ৪/২০২)
দাঁতের সুরক্ষায় মিসওয়াক
এছাড়া রমজান এবং রমজান ছাড়া পুরো বছর মেসওয়াক করা মুস্তাহাব। এর বাইরে যুগ যুগ ধরে দাঁতের সুরক্ষায় মিসওয়াক ব্যবহার একটি বিজ্ঞানসম্মত ও অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি হিসেবে প্রচলিত হয়ে আসছে। তাই রমজানে মুখের দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে এবং রোজাকে ত্রুটিমুক্ত রাখতে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষ এই সুন্নতের উপর আমল করা যেতে পারে।
সুদৃঢ়ভাবে সুন্নত আঁকড়ে ধরার ফজিলত
বর্তমান সময়ে মিসওয়াকের সুন্নতটি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এ বিষয়ে সচেতনতা নেই অনেকের মাঝেই। অথচ ফেতনা ফাসাদের সময়ে আল্লাহর রাসুলের কোনও সুন্নত সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে বিশেষ ফজিলত লাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
এক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মাতের মধ্যে যখন ফেতনা-ফাসাদ হবে, তখন যে ব্যক্তি আমার সুন্নাতকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে রাখবে, তাকে একশত শহীদের সাওয়াব প্রদান করা হবে। (মিশকাত, ১৭৬, আত তারগীব ওয়াত তারহীব, ৬৫)
আরেক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার পর আমলহীন আমার কোন সুন্নাতকে জিন্দা করবে( সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে), এবং তাকে দেখে যারা আমল করবে তাদের আমলের সওয়াবের মতই সে সওয়াব প্রথম ব্যক্তিকে দেয়া হবে। দ্বিতীয় আমলকারীর সওয়াবের মাঝে কোন কমতি ছাড়াই। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২১০, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৬৭৭, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৩৩৮৫, মুসনাদে আবদ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-২৮৯)
টিএ/